সোনাইমুড়ী

সোনাইমুড়ী… প্রাচীন ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও ভৌগলিক বিচারে নোয়াখালী জেলার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি থানা অঞ্চল। যেখানে সবুজে ঘেরা প্রকৃতির অকৃত্তিম সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিক নগরায়নের ছোঁয়া অনন্য করে তুলেছে এ জনপদটিকে। ধারনা করা হয় সোনাইমুড়ীর নামকরন করা হয়েছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী কৃষি পণ্য বাংলার সোনালি আঁশ খ্যাত পাট থেকে। অতীতে এ অঞ্চলে বেশ উৎকৃষ্ট মানের সোনালি পাট উৎপাদিত হত। দেশের শীর্ষ স্থানীয় জুটমিল মালিকরা এখানকার বাজার থেকে নিয়মিত পাট ক্রয় করতেন। তাই, পাটের সুখ্যাতি থেকেই এ অঞ্চলের নামকরন করা হয় সোনাইমুড়ী। পূর্বে এ এলাকাটি বেগমগঞ্জ উপজেলার আওতাধীন থাকলেও ২০০৫ সালে বেগমগঞ্জ থেকে আলাদা করে সোনাইমুড়ী নামে আলাদা উপজেলা গঠন করা হয়।

হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে আধুনিকতার আবহে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ এ থানা অঞ্চলের জনগনের আইনি সেবায় বর্তমানে এসেছে বহুমুখী পরিবর্তন। চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরেআলম মিনার প্রখর প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে; নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বিপিএম পিপিএম। যার নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ যাচ্ছে চাটখিল সার্কেলের অন্তর্গত সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ। বর্তমানে কেমন আছে সোনাইমুড়ীবাসী? আইন শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতিই বা কেমন? পজিটিভ থিংকের আজকের আয়োজনে থাকছে এ সকল প্রশ্নের উত্তর, থানা অঞ্চলের সমসাময়িক চিত্র, জনগনের জীবনমান ও দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে সাজানো সবুজ সংকেত – সোনাইমুড়ী থানা।

অবস্থানঃ  

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বাংশে এবং নোয়াখালী সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধ জনপদ সোনাইমুড়ী। এর পূর্ব দিকে সেনবাগ উপজেলা, পশ্চিমে চাটখিল উপজেলা, উত্তরে কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণে বেগমগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী ১৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জনপদটিতে বসবাস করেন প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ। বর্তমানে সোনাইমুড়ী থানা অঞ্চল ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল জয়াগ, নদনা, চাষীরহাট, বারগাঁও, অম্বরনগর, নাটেশ্বর, বজরা, সোনাপুর, দেওটি ও আমিশাপাড়া।

মুক্তিযুদ্ধঃ
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সোনাইমুড়ীতে রচিত হয়েছে এক বীরত্ব গাঁথা ইতিহাস। ২১ এপ্রিল সোনাইমুড়ী রেলস্টেশনের আউটার সিগনাল এবং ১১ মে বগাদিয়ায় হানাদারদের উপর মুক্তিযোদ্ধারা সুপরিকল্পিত হামলা চালালে নিহত হয় বেশ কিছু রাজাকার ও পাক হায়েনা। পাশাপাশি শহীদ হন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা। সবশেষে, ৭ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয় সোনাইমুড়ী। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের এসব স্মৃতি আজীবন স্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য, স্মৃতি স্তম্ভ, বধ্যভুমি ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই এ অঞ্চলটির শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে শিক্ষার হার প্রায় ৬১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। শিক্ষার প্রসারে গড়ে উঠেছে বহু উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে সোনাইমুড়ী সরকারি কলেজ সহ মোট ৪টি কলেজ, বজরা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাইমুড়ী উচ্চ বিদ্যালয় সহ মোট ৩৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় , ১১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কিছু মাদ্রাসা। কোমলমতী শিক্ষার্থীরা যাতে বিপথে না যায় সে লক্ষেই, সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

যোগাযোগঃ

সারাদেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সোনাইমুড়ীতেও প্রতিফলিত হচ্ছে দৃশ্যমান উনয়ন। দুরপাল্লার যাতায়াতের সুবিধার্থে এখানে নির্মিত হয়েছে কুমিল্লা – নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সোনাইমুড়ী বাইপাস সড়ক। রয়েছে, সোনাইমুড়ী ও বজরা রেলওয়ে স্টেশন। ফলে রেলপথেও দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত সহজতর হয়ে উঠছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখতে নির্মিত হয়েছে প্রায় ২২২ কিলোমিটার পাকা রাস্তাসহ অভ্যন্তরীণ সড়কপথ, প্রায় ৭ কিলোমিটার রেলপথ ও পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট।

অর্থনীতিঃ

থানা পুলিশের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় সোনাইমুড়ীবাসী বেশ স্বাচ্ছন্দেই তাদের জীবনমান পরিচালনা করে আসছে। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি হলেও বৃহৎ একটি অংশ চাকরি, ব্যবসা, পরিবহন ও সেবা খাতে যুক্ত রয়েছেন। তাছাড়া এখানকার প্রায় সকল পরিবারেই প্রবাসী সদস্য থাকায় দেশের অর্থনীতিতে মূল্যবান রেমিটেন্স যোগ করে আসছে প্রবাসীরা।

স্বাস্থ্য ও প্রেসক্লাবঃ

থানাবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নির্মিত হয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। রয়েছে ১টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সহ বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক। পশুপাখির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রয়েছে উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। এছাড়া এ থানা অঞ্চলে রয়েছে স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের সম্মিলিত সংগঠন সোনাইমুড়ী প্রেসক্লাব।

দর্শনীয় স্থানঃ

সোনাইমুড়ী এক ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এলাকা। এখানেই রয়েছে ১৮শ শতাব্দীতে নির্মিত মোঘল আমলের স্থাপত্য নিদর্শন বজরা শাহী মসজিদ। মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে জমিদার আমান উল্লাহ কতৃক স্থাপিত এ মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী মুগ্ধ করে দূর দুরান্ত আগত দর্শনার্থীদের। রয়েছে নওয়াবগঞ্জ শাহী জামে মসজিদ, চৌধুরীবাড়ি জামে মসজিদ, আন্ধার মানিক জমিদার বাড়ি সহ বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র। এখানেই জন্মগ্রহন করেন ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের চরম সাহসিকতা ও অসামান্য বীরত্বের কৃতিত্বে বীরশ্রেষ্ট খেতাব অর্জনকারী মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।