damoda

সবুজ শ্যামল অরণ্যে ঢাকা, জয়ন্তী নদীর দুপাশে গড়ে ওঠা নিবিড় পরিবেশের এক শান্ত ভূখন্ড ড্যামুডা থানা অঞ্চল। ফসলের মাঠ আর ছোট বড় বিভিন্ন গাছে ঘেরা এ জনপদটি ৭১ এর স্বাধীনতায় রক্তবর্ণ ধারণ করেছিলো মাটির টানে। দেশের প্রতিটি থানা অঞ্চলের ন্যায় ড্যামুডা অঞ্চলও পাক বাহিনীর সেই বর্বরতা থেকে বহু আত্ম বলিদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। ততকালীন মাদারীপুর মহকুমার অন্তর্গত এ অঞ্চল ১৯৭৫ সালের ০৫ জানুয়ারী একটি প্রশাসনিক থানা অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

ড্যামুডা অঞ্চল

পরে ১৯৮৪ সালে শরীয়তপুর একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে ড্যামুডা থানা জেলার একটি গুরুত্বপূর্র্ণ থানা অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারই ধারবাহিকতায় 1997 সালে ৭ বর্গ কি.মি আয়তনে ডামুড্যা পৌরসভার স্বীকৃতি লাভ করে। রিম-ঝিম বৃষ্টি আর শীতল বাতাসে এলাকার প্রকৃতি এক মায়ময় রূপ ধারণ করে।অঞ্চলের ৯১.৭৬ বর্গ আয়তনের মধ্যভাগে পদ্মার শাখা নদী জয়ন্তীর দক্ষিণ-পশ্চিম ভূমি অংশতেই স্থাপিত রয়েছে, ডামুড্যা উপজেলা পরিষদ ভবন, ডামুড্যা বাজার, ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাশেই রয়েছে রয়েছে ডামুড্যা লঞ্চ টার্মীনাল। উল্লেখ্য, এই ঘাট থেকে মাওয়া ফেরি ঘাটের দুরত্ব মাত্র 43 কি.মি.। তাছাড়া এই ঘাট থেকে এখনো নিয়মিত ভাবে লঞ্চ চলাচল করছে ডামুড্যা লঞ্চ টার্মীনাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। ঘাট থেকে খানিক দুরে স্থাপিত রয়েছে ডামুড্যা অঞ্চলের সর্ব অবস্থা নিরাপত্তা প্রহরী ও জনগণের সেবক ডামুডা থানা ভবন।

উনিশ শতকের মধ্যভাগে তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার বিখ্যাত বাংলা কবি নবীন চন্দ্র সেন মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর একদা মাদারীপুর সফরে এসে এ ডামুড্যা এলাকায় ঘুরতে বের হন। ডামুড্যার উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে বহমান এ নদী তখন তৎকালীন ভারতের দামোদর নদীর মতো ক্ষীপ্ত ছিল। ঈশ্বার চন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছিলেন এই নদী দামোদর নদীর মতই। আমি ঐ নদী সাঁতরিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে যেতাম। কারণ আমার খেঁয়া পাড়ের পয়সা ছিলোনা, অভাবে সাঁতার কেটে মাকে দেখতে যেতে হতো। এই কথা শুনে মহকুমা প্রশাসক নবীন চন্দ্র সেন বিদ্যাসাগরের সম্মানে এই এলাকার নাম রাখেন দামোদর।কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আঞ্চলিক উচ্চারণে দামোদর থেকে প্রথমে দামোদরিয়া তারপর ডামুদিয়া ও সর্বশেষ উচ্চারণ অবভ্রংশে ডামুদিয়া থেকে ডামুড্যা নাম ধারণ করছে।

পদ্মা থেকে উৎপন্ন জয়ন্তী নদীর পূর্ব –পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের পাড়াপাড়ের জন্য নদী অঞ্চলের দইপশেই কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে। একটি ডামুড্যা বাজার সংলগ্ন ও অন্য একটি ধানহাটা গ্রামের উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও আরেকটি ডামুড্যা মূল সড়ক উত্তর ডামুড্যা এলাকার বড় ব্রীজ নামে পরিচিত।

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ডামুড্যা সভ্যতা বহুপ্রাচীন। এই এলাকায় প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন প্রাচীন সভ্যতার বাহক হিসেবে দীপ্তমান।সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলেও ডামুড্যা অবদানও অনস্বীকার্য। প্রতি বছর বিভিন্ন সময় জাতীয় দিবসগুলো সহ অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানে ডামুড্যাবাসির অংশগ্রহণ লক্ষনীয়। এখানে গড়ে উঠেছে প্রকৃতিক নানা রুপের সমারোহে নির্মিত ডামুড্যা মডেল টাউন। এই মডেল টাউনটি সবুজ গাছ ও ফুল সম্দৃদ্ধ নানা প্রজাতির জীব-জন্তুর চিত্রকর্ম দারা প্রকৃতির রূপ মেলে ধরেছে।জেলা সদর হতে মাত্র ২৩ কি.মি. দুরত্বে অবস্থিত জনপদটিতে  প্রায় 30 হাজার পরিবারের সমন্বয়ে ২ লাখ মানুষ বসবাস করে।  ১১৪ টি গ্রাম ও ৬১ টি মৌজার সমষ্টিতে গঠিত ডামুড্যা উপজেলার মোট ইউনিয়ন ৭টি।বিস্তৃর্ণীত ফসলের মাঠ আর খাল বিলের উপকণ্ঠে গড়ে উঠেছে একএকটি ভবন ও আবাস স্থল। এ অঞ্চলে বসবাসকৃত মানুষ অধিকাংশই কৃষক। কিছু জেলে ও ব্যবসায়ী।

প্রতিদিন অঞ্চলের হাট-বাজারগুলো ব্যবসায়ী ক্রেতাদের ভিরে হয়ে ওঠে জমজমাট মিলন মেলা। তেমন কোন শিল্প-কারখানা না থাকলেও এখানে কিছু ক্ষুদ্র শিল্প ও নানা উদ্দোক্তাদের সমাহার ঘটেছে।বর্ষা মৌসুমে যখন চারিদিকে পানি থৈ থৈ তখন এখানকার কৃষক যখন বিলের শাপলা কুড়িয়েও জীবন নির্র্বাহ করে। বলা যায়, ডামুড্যা থানা অঞ্চলের মানুষের জীবনে এখন অনেকটাই স্বচ্ছলতা ফিরেছে।তবে উল্লেখ্য যে ডামুড্যা অঞ্চলের ভুমিহীন ওঘরহীন মানুষের বাংলাদেশ সরকার ইতমধ্যেই ঘর ও জমি প্রদান করে অসহায় ঐ মানুষদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন।

তাছাড়াও উপজেলার ধানকাটি ইউনিয়নে আরও 50টি ঘরের কাজও প্রায় শেষ পর‌্যায়ায়। ডামুড্যা উপজেলা শরীয়তপুর জেলার একটি অন্যতম উপজেলা। এখানে অনেক জ্ঞানী গুনী লোক বাস করেন। তবে এখনও এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন প্রয়োজন।সেই ধারাবাহিকতায়  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির পরিবেশ ইতমধ্যেই নতুন রূপ ধারণ করেছে। যা দেশের অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর তুলনায়  একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত বলে বিবেচিত হয়েছে।ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চোখ আটকে থাকে দৃষ্টিনন্দন কিছু বিষয়ের দিকে। হাসপাতালের বাইরে থেকে যতটা না পরিচ্ছন্ন, ভেতরে ঢুকলে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় এর সৌন্দর‌্য ও পরিবেশ দেখে।

এই আমুল পরিবর্তনের নেপথ্যে নায়ক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন।অন্যদিকে উপজেলার শিক্ষা খাতও পিছিয়ে নেই। নতুন নতুন বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্কুল সহ এখানে রয়েছে নানাবিধ প্রায় এক শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি আব্দুর রাজ্জাক কলেজ, ডামুড্যা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ডামুড্যা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডামুড্যা মুসলিম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শামীম খান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।তবে দিনে দিনে সাফল্যের দিকে অগ্রসর হওয়া এ জনপদকে কোণ ঠাসা করে রাখছে সমাজের কিছু অপরাধী চক্র। যাদের যারা সমাজ প্রতিনিয়ত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবপক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। যা উঠে আসছে দৈনিক সংবাদ পত্র সহ কিছু অনলাইন নিউজ পের্টালে।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।