images 15 12
ওরস্যালাইন খুব সহজ একটা নাম। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে, ভুল ব্যবহারে এটিই হতে পারে জীবননাশী। শিশু ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রায়ই এরকম রোগী পাওয়া যায়। সবসময় বাচানো যায়না, কারণ ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে যায়।
গা ঝাড়া দিলেন নাকি, নতুন কিছু শুনছেন?
আমি কিন্তু নতুন কিছু বলছিনা। এরকম ঘটে প্রায়ই। রোগটার নাম HYPERNATREMIC DEHYDRATION.
সাধারণত অজ্ঞ, অশিক্ষিতদের ক্ষেত্রেই ঘটে এটা, তবে অনেক উচ্চশিক্ষিত আপাত সচেতন মহলেও ঘটতে পারে। আমরা যে বাচ্চাগুলি বাচাতে পারিনি তার মধ্যে একটি বাচ্চা ছিল, একটি খ্যাতনামা ঔষধ কোম্পানীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার একমাত্র সন্তান। কিচ্ছু করার ছিলনা আমাদের।
আমরা সবাই জানি এক প্যাকেট ওরস্যালাইন আধা লিটার (৫০০মিলি) পানিতে গুলতে হয়। মানিতো সবাই? আপনার ঘরের যে মগ বা গ্লাসটাকে আপনি ৫০০ মিলির ভাবছেন, সেটা কি আসলেই ৫০০ মিলির?
কিছু স্যালাইন অবশ্য এক লিটার বা ২৫০ মিলির থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে উচিত হবে প্যাকেট এর গায়ে কতটুক পানির কথা লিখা আছে তা দেখে নেয়া।। কমনলি এটা আধা লিটারেরই হয়।
মায়েরা যে ভুলটা করেন তা হল, বাচ্চা স্যালাইন খেতে চায়না দেখে পুরা প্যাকেট স্যালাইন অল্প পানিতে গুলে থাকেন। উনাদের ধারণা, স্যালাইন তো যাচ্ছেই, পানি কম হলেই বা কি!
না মা, হাতজোড় অনুরোধ করি এটা করবেন না। এতে করে স্যালাইনের ঘনত্ব বেড়ে যায়, অসমোটিক লোড বেড়ে যায়। যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলি থেকে পানি বের হয়ে চুপসে যায়। খারাপ প্রভাব পড়তে পারে কিডনিসহ শরীরের অন্য জায়গাতেও। দ্রুত এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে না পারলে জীবন পড়ে যায় হুমকির মুখে।
এটা একটা manmade phenomenon, যা আমাদের ভুলে হয়ে থাকে, আমরা চাইলে এটি ফিরাতে পারি। তবে hypernatremic dehydration অন্য কারণেও হতে পারে।
 ওরস্যালাইন এর ব্যবহার বিধিঃ
১. এক প্যাক স্যালাইন আধা লিটার পানিতেই গুলতে হবে, কম বেশী করার সুযোগ নাই একদম।
২. একবার বানানো স্যালাইন ১২ ঘন্টার বেশি রাখা যাবেনা। যদি রয়ে যায়, তবে তা ফেলে দিয়ে নতুন করে বানাতে হবে।
মাত্রাঃ ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে
৫০-১০০ মিলি (এক বছরের নীচে), প্রতিবার পায়খানার পর
১০০-২০০ মিলি ( ১-৫ বছর) আরও সহজে, যত কেজি তত চামচ। অথবা চিকিৎসক এর নির্দেশিত নিয়মে।
ঔষধের চামচে এক চামচ = ৫ মিলি
স্যালাইন জোর করে বা দ্রুত খাওয়াতে গেলে বাচ্চা বমি করতে পারে, এতে হিতে বিপরীত হবে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়াতে হবে। ডাক্তারের কাছ থেকে অবশ্যই মাত্রা এবং ফ্রিকুয়েন্সি বুঝে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এই ওরস্যালাইন কিন্তু ডায়রিয়া ভাল হওয়ার জন্য না। বরঞ্চ ডায়রিয়ার জন্য শরীর থেকে যে পানি ও লবণ বেরিয়ে যাচ্ছে, তা পূরণের জন্য।
বেশীর ভাগ ডায়রিয়াই ভাইরাল, মাত্র ১৫% ব্যাক্টিরিয়াজনিত। তাই এন্টিবায়োটিক এর রোল কম। ধৈর্য ধরলে ৩-৫ দিনে নিজে নিজেই সেরে যায়।
কিছু বিপদ চিহ্নঃ
বাচ্চা নেতিয়ে পড়া বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, তালু ডেবে যাওয়া, অতিরিক্ত বমি বা এত বেশি পায়খানা যা স্যালাইন দিয়ে পূরণ সম্ভব না, পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, তীব্র জ্বর।
এসব লক্ষণ দেখলে মোটেও কালক্ষেপণ করবেন না।
পরামর্শক: ডা. খন্দকার মোবাশ্বের আহমেদ
শিশু পুষ্টি ও গ্যাস্ট্রোলিভার বিশেষজ্ঞ।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।