-
Positive Think
- News Blogs
- 0 Comments
সম্প্রতি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা মহাবিশ্বের কয়েকশ কোটি বছর আগের প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন ও চমকপ্রদ কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে সারাবিশ্বে বিজ্ঞানপ্রেমিদের মাঝে হইচই ফেলে দিয়েছে। নাসা হতে প্রকাশিত ছবিগুলোই এ এযাবৎকালের মহাজগতের প্রাচীনতম অবস্থার সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তোলা চিত্র। ছবিগুলো গত মঙ্গলবার (১২ জুলাই) একযোগে টুইটার, ইন্সাগ্রাম ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে নাসা।
এক হাজার কোটি ডলার মূল্যের এই জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল গত বছর ২৫শে ডিসেম্বর। মহাকাশে সুপরিচিত হাবল টেলিস্কোপের জায়গা নিতে তৈরি করা হয় এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র আকাশে অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করবে। তবে এর প্রধান দুটি লক্ষ্য হলো- প্রথমত, মহাকাশে ১৩৫০ কোটি বছর আগে একেবারে প্রথম জন্ম নেয়া তারাগুলোর আলোর বিচ্ছুরণ কীভাবে ঘটেছিল তার ছবি নেয়া; এবং দ্বিতীয়ত, দূরের গ্রহগুলো মানুষের বাসযোগ্য কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করা। নাসা হতে প্রকাশিত ছবিগুলোতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রথম লক্ষ্যটি অর্জনে সক্ষম।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। এতে ৬.৫ মিটার চওড়া সোনার প্রলেপ লাগানো প্রতিফলক আয়না আছে এবং আছে অতি সংবেদনশীল ইনফ্রারেড তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের যন্ত্রপাতি।নক্ষত্রপুঞ্জ প্রায় সাড়ে চারশ কোটি আলোক বর্ষ দূরে। কিন্তু এর ভর এমন ভাবে বেঁকে গেছে যাতে এর আলোর বিচ্ছুরণ অনেক ব্যাপক পরিসরে, অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। নাসার বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছেন যে, ছবিতে (নাসার ছবিগুলো) যা দেখা যাচ্ছে এই টেলিস্কোপ তার থেকেও অনেক গভীরে গিয়ে মহাজগতের চিত্র তুলে আনতে সক্ষম। এর ফলে, অতি শক্তিশালী এই দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাশূন্যের অনেক ভেতর পর্যন্ত এখন দেখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। হাবল টেলিস্কোপকে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে আকাশে পর্যবেক্ষণ করতে হতো। কিন্তু অপরদিকে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মাত্র সাড়ে ১২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে মহাবিশ্বের গভীর থেকে এই ছবি তুলে এনেছে।
নাসা হতে প্রকাশিত ঐতিহাসিক ছবিগুলোর পেছনে জড়িয়ে আছেন বাংলাদেশি এক জ্যোতির্বিদ লামীয়া আশরাফ মওলা। তিনি নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দলের সহযোগী কানাডার ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে জ্যোতির্বিদ হিসেবে এই টেলিস্কোপ তৈরিতে কাজ করেছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডাপ্রবাসী এই বিজ্ঞানী লামীয়ার জন্ম ঢাকার মালিবাগের শান্তিনগরে। কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তারপর ইংরেজি ভার্সনে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল সম্পন্ন করার পর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন সেখানকার ওয়েলসলি ইউনিভার্সিটিতে। পরবর্তীতে আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাস্ট্রোনমিতে পিএইচডি করে গবেষক হিসেবে যোগ দেন টরন্টো ইউনিভার্সিটির ডানল্যাপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে। বর্তমানে সেখানে কাজ করছেন।
সূত্রঃ নাসা, বিবিসি