fatullah
বুড়িগঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক শহর ফতুল্লা মডেল থানা অঞ্চল। দুই হাজারের অধিক গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠিত এ নগরীতে গড়ে উঠেছে ডায়িং, নীটওয়্যার, পাওয়ার প্ল্যান্ট, ওয়েল কোম্পানী,  মিল্ক ল্যান্ড, জুটমিলসহ দেশের অর্থনীতি চাকার নানান শিল্প-কারখানা।

ফতুল্লা থানা এলাকাটি বর্তমানে নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার অন্যতম ব্যস্ত নগরী হলেও একসময় এ অঞ্চলটি ছিলো নদীর চর এলাকার একটি সমতল ভুমি। প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে এখানে প্রথম মানব বসতির উল্লেখ পাওয়া যায়। সময়ের পরিক্রমায় ব্রিটিশ শাসনামলে অঞ্চলটি নদী কেন্দ্রীক একটি বাণিজিক ভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর তখন থেকেই এলাকাটি নারায়ণগঞ্জ মহকুমার একটি বিশেষায়িত অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে।

ফতুল্লা থানার ইতিহাস

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার বর্তমান ফতুল্লা ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা নিয়ে সর্বপ্রথম ফতুল্লা ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করে। পরবতীতে ১৯৬২ সালে এ ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন গঠিত হয়।বর্তমানে ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে এ ফতুল্লাহ থানা অঞ্চলটি গঠিত রয়েছে।ইতিহাস থেকে ধারণা পাওয়া যায়, ১৬০৫ সালে হযরত আমীর শাহ ফতেহ উল্লাহ নামক একজন ইসলামিক পন্ডিত এখানে ধর্ম প্রচারের স্বার্থে আগমন করে বসবাস শুরু করলে তার পরলোক গমনের পর অঞ্চলটির নাম উচ্চারণ অপভ্রংশ হয়ে ফতুল্লা নামে আত্মপ্রকাশ করে।
১১৩.৯৮ বর্গ কি.মি. আয়তনের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্য ভাগের প্রায় অর্ধ অংশ নিয়ে ফতুল্লা থানা অঞ্চলের অবস্থান।মাদক, চোরাকারবাড়ি, ছিন্তাই, অপহরণ, খুন-ঘুমসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধের সংমিশ্রন অঞ্চল ফতুলার বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণই উল্টোদিকে ধাবিত হচ্ছে।প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের এ আবাসভুমি ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বহু দিক থেকে ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে।বহুমানুষের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন এ বাংলাদেশের মানচিত্রে ফতুল্লার বীর সন্তান শ্রী সন্তোষ কুমার সাহার সমাহিত স্থান রয়েছে ফতুল্লা শহরের উত্তর মাসদাইর এলাকার কেন্দীয় সিটি শ্বশান এ।
থানার মাসদাইর এলাকার এই একই স্থানে পাশাপাশি অবস্থান করছে প্রতিটি মানুষের আপন ঠিকানা মুসলিমদের করস্থান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্বশান।শ্বশানের ভিতরে নির্মিত রয়েছে স্মৃতি মন্দির তারক চন্দ্র রায় ও যোগেন্দ্র চন্দ্র রায় এর সমাধি।ফতুল্লা নগরের হিন্দু-মুসলিমের শেষ মঞ্জিল এই কবর ও শ্বশান এর পাশাপাশি অবস্থান প্রমান করে তাদের অসাম্প্রদায়িকতার মনোভাব।তবে ফতুল্লা মুলত মুসলিম প্রধান অঞ্চল। এখানকার শাসনগাঁও শাহী মসজিদটির নিপুণ নির্মাণ অঞ্চলের মুসলিমদের একটি গর্বিত স্থাপনা।
ঘন ইট-ইমারতের এ শহরটিতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনস, নৌবাহিনী ইউনিট,  বিসিক ভবন, বিআইডাব্লিউটিসি,  ওসমানী পৌর স্টেডিয়াম, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় ইদগাহ ও জেলা শিক্ষা ভবনসহ সহ একটি জেলা শহরের প্রায় সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাই এই ফতুল্লা থানা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত।প্রতিদিন ভোরে মুয়াজ্জিন এর আজানের ধনীতে ফতুল্লা শহরের মানুষের জেগে ওঠা. . .সূর্যের কিরণের সাথে সাথেই নগরটি পূর্ণ ব্যস্ততায় ভরে ওঠে। গার্মেন্টস শিল্প বা শ্রমভিত্তিক কারখানার শ্রমিকরা ধীরে ধীরে শহরের প্রত্যেকটি অলী-গলি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।যেন এটাই তাদের মর্নিং ওয়ার্ক বা সকালে শরীর চর্চা।
সকাল আটটা বাজার সাথে সাথেই তারা পৌছে যায় কারখানায়। সচল হয় শক্ত হাতের ছোয়ায় বাংলার অর্থনিতি।হাজার হাজার শ্রমিকের মিল বন্ধনে তৈরি হচ্ছে, রঙ-বেরঙের পোশাক। তাদের হাত আর মেশিনের শব্দই মূলত দেশের অর্থনিতির সুর। ডায়িং কারখানা এলাকা গুলো প্রকৃতির চোখে অন্য এক দৃশ্য ধারণ করে। বাতাসে দোলা দেয় সারি সারি একই রঙের কাপড়। যা রোদ্রে শুস্কতা শেষে চলে যায় আবারো কোন শ্রমিকের হাতে।অন্যদিকে  একই ভাবে সুতা কারখানাগুলোও শ্রমিক ও মেশিনের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।ফতুল্লা মডেল থানা অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত বুড়িগঙ্গা নদীর  বক্তাবলী ফেরিঘাট প্রকৃতির অন্যতম দৃষ্টি নন্দন রুপ। নদীর পাড় থেকে বিশাল আকারের লঞ্চ গুলোর আসা-যাওয়া দেখতে প্রকৃতি প্রেমিদের খুবই আকর্ষিত করে তোলে।সাধারণত অঞ্চলের ছোট ছোট যান বা আঞ্চলিক পরিবহণগলোর বুড়িগঙ্গার এপাড় ওপাড় পাড়াপাড়ে বক্তাবলি ফেরিঘাটটি ব্যপক ভূমিকা পালন করে।
অঞ্চলের গ্রাম কেন্দ্রিক ইউনিয়নের মানুষের জীবন-যাত্রা শহর থেকে সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম।কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পের ভিত্তিতে তারা জীবন নির্বাহ করে থাকে। উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নটিতে দেখা মিলবে নদীর উপকণ্ঠ জুড়ে বিস্তৃত সারি সারি ইটের ভাটা।এখানে রয়েছে শাখা নদীর উপর নির্মিত বাশের ব্রীজ যা শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে এক অন্যকরম অনুভুতি।
ফতুল্লা মডেল থানা অঞ্চলে বিশেষ স্থান হিসেবে পরিচিত রয়েছে, শাহ ফতেহ উল্লাহ মাজার শরীফ রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মেরি আন্ডারসন ভাসমান রেস্টুরেন্ট।উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে এখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধর্মগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামেয়া কাশেমুল উলুম মাদ্রাসা। তাছারাও ফতুল্লায় গড়ে উঠেছে একটি চাইল কেয়ার স্কুল।বর্তমানে এ অঞ্চলের শিক্ষার হার প্রায় 80 শতাংশে উপনীত হয়েছে।অন্যদিকে অঞ্চলের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে রয়েছে শহরের নানা প্রান্তে গড়ে ওঠা একাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।প্রায় ৩০টি মৌজার সমষ্টিত ৫টি ইউনিয়নের ফতুল্লা এলাকা যেমনি প্রসিদ্ধ নগরী হিবেসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তেমনি এ থানা অঞ্চলটিতে ঘটছে প্রতিদিন নানারকম ঘটনা।যা স্থানীয় গণমাধ্যম ও অনলাইন পোর্টালগুলোতে প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে।ফতুল্লায় কিশোরী অপহরণ, দুই লাখ টাকার হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কাচামাল ব্যবসায়ী নিখোজ, কুতুবপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী খালেকের অজানা কাহিনী। তালাকপ্রাপ্ত স্বামীর ঘর থেকে সাবেক স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, স্কুলের সীমানা প্রাচীর ধসে আহত তিন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষনের অভিযোগসহ প্রতিদিনই ঘটছে নতুন নতুন অপরাধ সমূহ।
প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়ে পরিচালিত ফতুল্লা মডেল থানার অকুতভয় সৈনিকগণ এসব অপরাধগুলোর মামলা, তদন্ত, রহস্য উদঘাটন ও অপরাধ রোধ কল্পে নিয়মিত ভাবে সামাজিক কাজেও অংশগ্রহণ করছেন।সত্য উদঘাটন করা পুলিশের কাজ, আমি পুলিশ, আমি কখনোই সত্য ও সততার পথ থেকে বিচ্যুত হবো না
এ বাক্যের শপথে বলিয়ান ফতুল্লা মডেল থানা অঞ্চলকে শতভাগ অপরাধমুক্ত করার প্রয়াসে গত ১৪ মে ২০২২ এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়িত হয়েছেন জনাব মোহাম্মদ রিজাউল হক।সততা, কর্মনিষ্ঠা ও ন্যায় পরায়নতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে তিনি ইতোপূর্বে পদায়িত থানা অঞ্চলসমুহকে অপরাধমুক্ত করতে প্রায় শতভাগ সফল হয়েছেন। তিনি এ থানায় যোগদান করে মাত্র দেড় মাসেই স্থানীয়দের কাছে বহুল প্রশংসা অর্জন করেছেন।তিনি জানান ফতুল্লা শহরটি অধিক ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানকার মানুষ নানাভাবে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা রুখতে ফতুল্লা মডেল থানা কাজ করছে। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের যাতে থানার সেবা নিতে বেগ পেতে না হয় সেজন্য তার নেতৃত্বে অঞ্চলের বিট পুশিং ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে।জনাব মোহাম্মদ রিজাউল হক, নিয়মিত ভাবে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় মসজিদ ভিত্তিক আলোচনায়, ফলে জনসাধারণের মধ্যে আইনের সঠিক ধারণা পৌছানো সহজ হয়ে উঠেছে।তার বক্তব্য সমাজের মানুষের মধ্যে বিদ্যমান অপরাধ প্রবণতা রোধে সহায়ক হচ্ছে।
অন্যদিকে অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দিনে দিনে অপমৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন।সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে অফিসার ইনচার্জ এর চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই।ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম বার পিপিএম বার স্যারের নিরশনায় ও নারায়ণগণ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ফতুল্লা থানা অফিসার ইনচার্জ তার প্রশিক্ষিত বাহিনীর মাধ্যমে অঞ্চলের বিবিধ অপরাধ রোধে কাজ করে চলেছেন।অপরদিকে থানায় নথিভূক্ত হওয়া সাধারণ ডায়েরী, বিবিধ মামলা সমুহের সঠিক তদন্ত, রহস্য উদঘাটনে ইতোমধেই সফলতা দেখিয়েছেন জনাব মোহাম্মদ রিজাউল হক। আবার এসব মামলা তদন্ত কালে কিছু নতুন রহস্যেরও উম্মোচন হয়ে থাকে। তেমনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেন ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ।
একজন পুলিশ অফিসারের সততা-নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়নতা ফতুল্লা মডেল থানাবাসির দির্ঘ দিনের প্রত্যাশা। যা পূরণ হয়েছে জনাব মোহাম্মদ রিজাউল হক এর এ থানায় যোগদানের মধ্য দিয়ে। নি:সন্দেহে এই স্বপ্ন পুরণই অঞ্চলের মানুষের জন্য সবুজ সংকেত।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।