images 14 4
উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও ব্রিটিশ শাসনামলে একটি ঠাকুর পরিবারের উদ্যোগে, বর্তমানে পৌরসভা এলাকার কাছাকাছি কোনো একস্থানে থানা হিসেবে স্থানান্তরিত হয়; পরবর্তীতে ঐ পরিবারের নামানুসারেই এই জেলার নাম হয় ঠাকুরগাঁও। ১ হাজর ৭৮১ দশমিক ৭৪ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত অপূর্ব সৌন্দর্যের এই জেলায় কালের সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাস ঐতিহ্যের অসংখ্য নিদর্শন। তেমনি এক অনন্য নিদর্শন হরিপুর জমিদারবাড়ি। পজেটিভ থিঙ্ক বিডি’র আজকের প্রতিবেদনে থাকছে তা নিয়ে বিস্তারিত।
দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক এই রাজবাড়িটির অবস্থান ঠাকুরগাঁও জেলা সদর হতে ৫০ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে। ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম শাসনামলে ঘনশ্যাম কুণ্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে আসেন হরিপুরে। তখন এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম নারী। সে সময়ে তাকে জমিদারির খাজনা দিতে হতো তাজপুর পরগনার ফৌজদারের কাছে। খাজনা অনাদায়ের কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুণ্ডু তা কিনে নেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ঘনশ্যামের বংশধর রাঘবেন্দ্র রায় হরিপুর রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। রাঘববেন্দ্র রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করলেও তা শেষ করে উঠতে পারেননি; তার আগেই তিনি মারা যান। পরবর্তীতে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে বিভিন সমাজ সেবামূলক কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার জগেন্দ্র নারায়ণ রায়কে ‘রাজর্ষি’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
বহু পুরনো হরিপুরের এই রাজবাড়ির দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে প্রাচীন অনেক নিদর্শন ফুটে উঠেছে। লতা পাতার নকশাকৃত দ্বি-তল এই জমিদার বাড়ির পূর্ব দেয়ালে রয়েছে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চোদ্দটি আবক্ষ মূর্তি। বাড়ির পূর্ব পাশে রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো টেরাকোটার নকশাকৃত শিব ও নাট মন্দির। রয়েছে একটি বিশাল পাঠাগার। ১৯০০ সনের দিকে ঘনশ্যামের বংশধররা বিভক্ত হবার কারনে হরিপুর মূল রাজবাড়ী বড় তরফের রাজবাড়ী ও ছোট তরফের রাজবাড়ী হিসেবে দুটি অংশে ভাগ হয়ে যায়। রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে নগেন্দ্র বিহারী রায় চৌধুরী ও গিরিজা বল্লভ রায় চৌধুরী ১৯০৩ সালে আরেকটি রাজবাড়ি নির্মাণ করেন; যার নামই হয় ছোট তরফের রাজবাড়ি। আর মূল রাজবাড়ির নামকরণ করা হয় বড়ো তরফের রাজবাড়ি। এই ভাগাভাগির কারণে কালের গর্ভে হারিয়ে যায় মূল রাজবাড়ির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শৈলী ও নিদর্শন।
যথাযথ সংরক্ষণ, সংস্করণ ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে হারাতে বসেছে ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যেময় প্রাচীন এই রাজবাড়ি। সমাজকে আলোকিত করতে জগেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ে যে কাজ করে গেছেন তা কালান্তরের সাক্ষী হিসেবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্মৃতিবিজড়িত করে রাখতে সরকারিভাবে স্থায়ী সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই সময়ের দাবি।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।