IMG 20220517 163225 scaled

শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে হাতিরঝিলের ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’। ঢাকার শহরের তীব্র যানযটে যখন নগরের বেশিরভাগ মানুষ অতিষ্ঠ তখন ঢাকা শহরে বসবাস করা একটি অংশের মানুষের কাছে স্বস্থির নাম ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’। যান্ত্রিক শহরে বাস পেতে কষ্ট, বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা, নারীদের ভোগান্তি থেকে শুরু করে নানান জটিলতা থাকে যাতায়াতে। শহরের জ্যামে আটকে যখন চাকুরিজীবীরা অফিসে দেরিতে পৌছাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা যখন সঠিক সময়ে ক্লাসে পৌছাতে পারছেনা তখন শহরের এক অংশের মানুষ ‘ওয়াটার ট্যাক্সিতে’ যাতায়াত করে সময়ের সঠিক ব্যবহার করছে।

রাজধানীর হাতিরঝিলে দেখা মিলে এই ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবার’, কেউবা অফিস করছে এই ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাতায়াত করে, আবার শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাতিরঝিলের সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে অনেক ভ্রমন পিপাসুদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’। ইট পাথরের যান্ত্রিক শহরে ক্লান্তিকে ক্ষনিকের জন্য বিদায় জানাতে বিনোদনের খঁুজে অনেকেই আসেন ‘ওয়াটার ট্যাক্সিতে’ ঘুরতে।

৩০ টাকার টিকিটে গুলশান ১ থেকে কাওরান বাজার এফডিসি পয়েন্টে যেতে সময় লাগে ১৫ মিনিট, যেখানে বাসে সময় কতক্ষণ লাগবে সেটা অনিশ্চিত। হাতিরঝিল পুলিশপ্লাজা থেকে ২০ টাকার টিকিটে এফডিসি পয়েন্টে যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ৮ মিনিট। সময় সাশ্রয়ী এই ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’ যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি ভ্রমণকালে নিরাপদও মনে করছে যাত্রীরা। হাতিরঝিল এলাকায় রামপুরা, গুলশান, পুলিশপ্লাজা ও এফডিসি পয়েন্টে চলাচল করে এই ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’।

আরও পড়ুন : ঐতিহাসিক মুকসুদপুর থানা

সময় সাশ্রয়ী এই বাহনে যাতায়াত করা যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের অভিজ্ঞতা ও ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’র ইতিবাচক দিক নিয়ে। শামছুল আলম নামের এক যাত্রী জানান, সারাদিনে অফিসের ক্লান্তি শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন মনে হয় আমি বাসায় যাচ্ছি না ভ্রমণ করছি, পরিবেশ বান্ধব এই বাহন ঢাকা শহরের জন্য খুব উপকারি। বাসের জন্য কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো!, জ্যামে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে যায় তার চেয়ে বরং ‘ওয়াটার ট্যাক্সিতে’ যাই, আরামদায়ক ভ্রমণও হয়ে যায়, কম সময়ে অফিসে আসি ও বাসায় যাই। ঢাকার শহরে আরও কোথাও যদি এ ধরণের সেবা চালু করা যায় এতে মানুষের দুর্ভোগ কমে আসবে, যানযট নিরসনে অনেক ভূমিকা রাখবে।

ইকবাল আহমেদ নামের এক যাত্রী জানায়, আমি নিয়মিত যাতায়াত করি এটি অত্যান্ত আরামদায়ক একটি বাহন, সময়ের সাথে অর্থটাও বাচে। কম টাকায় কম সময়ে নির্দিষ্টস্থানে পৌছানো ঢাকার শহরের জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধাজনক যাতায়াত ব্যবস্থা তবে এটা নিয়ে তেমন কোনো প্রচার প্রচারণা দেখা যায় না। ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’ নিয়ে প্রচারণা চালালে আরও মানুষ জানতে পারবে, তারাও যাতায়াতে উদ্ধুদ্ধ হবে।

শিরিন আক্তার নামের আরও একজন যাত্রীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় আমি আমার শিশু সন্তান নিয়ে ওয়াটার বাসে যাতায়াত করি, আমার চেয়ে আমার মেয়ের আগ্রহই বেশি এটা দিয়ে যেতে। তিনি সাতার জানেন কিনা ও ঝুিঁকর কথা মাথায় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিপদ আল্লাহ তায়ালার হাতে কখন হবে আমরা জানবো না, তবে লাইফ জ্যাকেট আছে। যাতায়াত করি বিপৎজনক মনে হয় না ।

তবে কিছু শিক্ষার্থীদের আছে একটু অভিযোগ। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ওয়াটার বাসের সংখ্যা খুব কম। প্রায় সময়ই ‘ওয়াটার ট্যাক্সির’ জন্য অপেক্ষা করা লাগে। ‘ওয়াটার ট্যাক্সির’ সংখ্যা বাড়ালে যাতায়াত ব্যবস্থাটা আরও ভালো হয়। বিকেল গড়িয়ে এলে ভিড় বাড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়, কর্মস্থল থেকে মানুষ বাসায় ফিরে। তাই চাপ থাকে বেশি।
হাতিরঝিল ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’ কতৃর্পক্ষ জানান, দিনদিন চাহিদা বাড়ছে। মানুষ খুব পছন্দ করে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ থেকে ১৬০০ মানুষ যাতায়াত করে। আমরা মানুষের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, আশেপাশে আবর্জনা থাকায় অনেক র্দুগন্ধ ছড়ায় এতে যাত্রীদের যেমন অসুবিধা হয় তেমনি আমাদেরও। এই বিষয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন নজর দিলে আরও পরিবেশ বান্ধব হবে। ২০১৬ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে হাতিরঝিলে চালু হয় ‘ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা’। এ ট্যাক্সি সেবার উদ্বোধন করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।