bogra

সারাদেশ: বগুড়ার কাহালুতে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে একটি পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন নূরুল ইসলাম। মাছসহ পুকুরের গলাসমান পানি নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর পুকুরের মাঝ বরাবরে দেখা মিলেছে একটি সুড়ঙ্গের। কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়ায় গত মঙ্গলবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় তুমুল হৈচৈ পড়ে গেছে। দলে দলে লোকজন ছুটছেন সেই পুকুরটি দেখতে।

মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) বিকেলে কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামে এমনই ঘটনা ঘটে।

পুকুরের মালিক নূরুল ইসলাম (৮০) জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ওই পুকুরে মাছ চাষ করছিলেন তিনি। ১৭ শতক আয়তনের ওই পুকুরে এবারও প্রায় ২০০ কেজি মাছ ছাড়া হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের মাঝ বরাবরের পানিতে বুদবুদ উঠতে দেখেন। প্রচন্ড গরমের কারণে হয়তো এমনটি হচ্ছে ভেবেছিলেন তিনি। গত শুক্রবার থেকে সেই বুদবুদ বাড়তে শুরু করে। পরে সোমবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের পানি ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু হয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে। এ নিয়ে এলাকায় অনেকটা আতঙ্কও দেখা দেয়। পরের দিন বিকেলে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে পুকুরের পানি। নিমিষের মধ্যেই গলা সমান পানি গায়েব হয়ে যায়। পানি তো নেই-ই, এমনকি কোন মাছের ছিঁটে ফোটাও নেই।

সমতল এলাকায় এমন ঘটনা বিরল বলছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষকরা। তাদের মতে, পাহাড়ি অঞ্চল বা খনি এলাকায় এমনটি হলেও সমতল এলাকায় এমন ঘটনা তেমন ঘটে না। এটিকে ‘সিঙ্ক হোল’ বলা হয়। বিষয়টি ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের খতিয়ে দেখা দরকার বলে অভিমত তাদের।

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও শিশুরা দলবেঁধে দেখতে এসেছেন পুকুরটি। অনেকে কাদা মাড়িয়ে নিচে নেমে উঁকি দিয়ে দেখছেন সুড়ঙ্গের গভীরতা।

পুকুরের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের পানি ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু হয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর সেই অবস্থা কিছুটা কমে যায়। এরপর পুকুরের পানি পরের দিন বিকেলে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে। পুকুরের মাঝখানে পাক খেতে খেতে পানি নামতে শুরু করে। নিমিষেই গলাসমান পানি নেই হয়ে যায়। এমনকি কোনো মাছের ছিটেফোঁটাও ছিল না ওপরে। পানি নেমে যাওয়ার পর তারা দেখতে পান পুকুরের মাঝ বরাবরে একটি বিশাল গর্ত। পরে নেমে দেখেছেন প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর সেই গর্ত। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ শেষ হয়ে গেছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও পাইকড় ইউনিয়নের সদস্য হারুনুর রশিদ জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ওই পুকুর থেকে বালু তুলে বাড়ি করেছেন নুরুল ইসলাম। তার ধারণা, এ কারণে সেখানে ধস দেখা দিয়ে এমনটি হয়েছে।

তবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বালু উত্তোলনের পর কয়েক দফা পুকুরটি খনন করা হয়েছে। তখন সেখানে এমন কোনো লক্ষণই ছিল না।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তুরস্কসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমন ঘটনার নজির আছে। পাহাড়ি অঞ্চল বা খনি এলাকায় ‘সিঙ্ক হোল’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সমতল এলাকায় এটি খুবই বিরল।

অধ্যাপক আব্দুল হাই বলেন, ‘ভূগর্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি, বালু বা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করলে নিচের স্তরে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, সেই শূন্যতা পূরণের জন্যই এমন সুড়ঙ্গ বা গর্ত তৈরি হয়। এটি যেহেতু সমতল এলাকায় হয়েছে, এ কারণে এটি ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের খতিয়ে দেখা উচিত যে হঠাৎ এমনটি কেন হলো। সেখানে ভূগর্ভে কোনো স্তরের সমস্যা থেকে এটি হয়েছে? নাকি অন্য কোনো কারণে, তা অবশ্যই অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।