kazi asmaaaa

বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে ১৩০টি দেশ ভ্রমণ করে বিশ্বকে অবাক করেছেন কাজী আসমা আজমেরি, সর্বশেষ ১৩০তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশ সেন্ট লুসিয়া ১৮ ই মে। আজমেরি বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করতে চান পুরো বিশ্ব। প্রতিটি দেশে রেখে আসতে চান বাংলাদেশের পদচারণা, আর অনুপ্রাণিত করতে চান তার পরিবর্তনের ধারা দিয়ে বিশ্বের হাজার হাজার তরুণ তরুণীদের। ট তবে ভ্রমণ করতে গিয়ে পরতে হয়েছে বিভিন্ন বিড়ম্বনায় আফ্রিকার ভয়ঙ্কর ডাকাতের কবলে পড়েছেন, কিংবা পকেটমারের খপ্পরে, সর্বোচ্চ খুইয়েছেন। এমনকি জেল খাটতে হয়েছে বেশ কয়েকবার পাসপোর্টে বিশ্ব ভ্রমণ করতে গিয়ে ২০১০ সালে ভিয়েতনামে ভ্রমণ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন তিনি। ইমিগ্রেশনের যাওয়ার পর তাকে রিটার্ন টিকেট দেওয়া হয়নি বরং বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেখার পর ভিয়েতনামের ইমিগ্রেশনের জেলে ২৩ ঘণ্টা বন্দী করে রাখা হয় তাকে। সেই আক্ষেপ থেকেই তিনি বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের চিন্তা করেন,,২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়েই।

আলাপচারিতায় আজমেরি বলেন, ডিপ্রেশনে ভুগলে আত্মহত্যার মতো পথে না হেঁটে; ভ্রমণের পথে হাঁটা উচিত, মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে পারবে। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি খুব দুরন্ত ছিলাম, ঘুরে বেড়নোর ইচ্ছে ছিল প্রবল, ইবনে বধু তার গল্প শুনতে শুনতে নিজেকে আধুনিক জীবনে কাজী আসমা আজমেরী হয়ে ওঠা। প্রথমে গিয়েছিলাম থাইল্যান্ডে ২০০৭ সালে নীল সমুদ্র দেখার পর আমার মনে হয়েছিল ভ্রমণের জন্য যত টাকা খরচ হয়েছে এই সমুদ্র দেখার পর সব ওঠে গেছে, এক কথায় থাইল্যান্ডের সৌন্দের্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম।

Kazi Asma Azmery 5

এরপর বন্ধুর মায়ের টিটকারিতে মেয়েরা বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে না, ঐ খোব থেকে এরপর ২০০৯ সালে নেপালে যাই, হিমালয় দেখার পর পুরো বিশ্বের সৌন্দর্য আমাকে টানতে থাকে, তখনই প্রতিজ্ঞা করে ফেলি ৫০টি দেশ ভ্রমণ করবো। ঐ থেকে আমি পৃথিবীর নানা দেশে যাওয়ার ভিসা সংগ্রহের লক্ষ্যে নামি। আমি যেই দেশে গিয়েছি মানুষকে বাংলাদেশ সম্পর্কে পরিচিতি দিয়েছি , কিছু কিছু জায়গায় বিপদে আপদে বাংলাদেশি যারা ছিল, তারা আমাকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করেছেন, অনেক দেশের মানুষ আামাকে ভারতের নাগরিক ভাবতেন, তাদের সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতাম আমি ভারতের নয়, হৃদয়ের লাল সবুজের পতাকাওয়ালা বাংলাদেশি “গ্রীন পাসপোর্ট গার্ল”।

ভ্রমণের বিষয়টি পরিবার আত্মীয়স্বজন কীভাবে দেখেন? কখনো নিরুৎসাহের শিকার হয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আত্মীয়রা আমাকে নিয়ে কানাঘুষা করত, আমার বাবাই বলে দিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনকে ভ্রমণের বিষয়টি না বলার জন্য। যেসব আত্মীয়রা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলে আমিও তাদের এরিয়ে চলি। আমার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এর চিওড়া কাজীবাড়ি পরিবারের প্রতিটি মানুষ আমাকে উৎস উদ্দীপনা দেয় । আমার পরিবারের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ আরো সহজ হয় যেটা গত ২০১৮ সাল থেকে।

কাজী আসমা আজমেরি সেই ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সময় ধরে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এর সংগ্রামের গল্প, বিশ্বের ৫০০০০ ছাত্রছাত্রী ও তরুন তরুনীদেরকে সাতশোর উপর ইনস্টিটিউট, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে তার ভ্রমণের একটি মুসলিম নারীর সামাজিক বাধা-বিপত্তি, সবুজ পাসপোর্টের সংগ্রামের গল্প বলে স্বপ্নবাজ করে অনুপ্রাণিত করেছেন, তার থিম Traveling is Fun way to Learn” সম্পর্কে জানাচ্ছেন। পরিবেশের সচেতনতা গড়ে তুলতে ১০০ তম দেশ তুর্কিমিনিস্থান থেকে একটি করে গাছ রোপন করে আসছে। তার ভ্রমণের সংগৃহীত সামগ্রী দিয়ে লাইব্রেরি, চালু করেছেন খুলনার রায়পাড়ায় তার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িতে। যা সাত থেকে বাইশ বছর পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

ভ্রমণের ফলে মানুষের মধ্যে কী ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে জানতে চাইলে আজমেরি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন, নিয়ম নীতি নৈতিকতা জানা ও শেখা যায়, ভ্রমণ করলে নিজের মধ্যে থেকে হিংসা বিদ্বেষ চলে যাবে, যারা ভ্রমণ করে তারা উদার মনের হয়, নিজের মধ্যে দক্ষতা তৈরি হয় ভ্রমণের মাধ্যমেই।
তিনি মরুভূমির বুক থেকে হেঁটেছেন কখনো ৩-৪ দিনের জন্য কখনো আবার উটের পিঠে উঠেছেন খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন, কখনো ৫৭ ঘন্টা টানা ট্রেন জার্নি করেছেন বিরতি ছাড়া। বেইজিং থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ট্রেনে জার্নি অনেক উল্লেখযোগ্য মঙ্গোলিয়া। বরফের ভিতর শীতের কষ্টে কাতলিয়েছেন নর্থ আমেরিকাতে। সমুদ্র অনেক পছন্দ, নীল জলে জল তরঙ্গের মত ভেসে বেরিয়েছেন ইস্কুবা ডাইভিং করতে ।
তার ভ্রমণের অর্থের উৎসাহ কি জানতে চাইলে, নিউজিল্যান্ডে রেডক্রসে তিনি দেড় বছর চাকরি করে টাকা জমিয়ে ছয় মাসের জন্য ভ্রমণ করেন।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।