Akhaura

একসময়ের পূর্ববঙ্গের প্রবেশদ্বার এবং ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের পালাবদলে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম জনপদ – আখাউড়া। এ অঞ্চলটি ব্রিটিশ আমলে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী হিসেবেও পরিচিত ছিলো। আখাউড়ার নামকরনের ইতিহাসের সাথেই জড়িয়ে আছে এর সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গল্প। পূর্বে এ অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদার রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের আওতাধীন ছিল। তিনি তার শাসনামলে এ এলাকার ৪টি পৃথক স্থানে আলাদা আলাদা ধর্মীয় আখড়া নির্মাণ করেন। ফলে এলাকাটিতে আখড়ার আধিক্যের কারনে কালক্রমে এর নামকরন হয় আখাউড়া। ১৯৭৬ সালে আখাউড়া একটি থানা অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যা প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়।

 

 

অবস্থানঃ

রাজধানী ঢাকা থেকে ১২৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাংশে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী জনপদ আখাউড়া। ৯৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ অঞ্চলটিতে ২০১১ সালের আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী বসবাস করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। আখাউড়া থানা অঞ্চলের পূর্বদিকে ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও কসবা উপজেলা, উত্তরে বিজয়নগর উপজেলা এবং দক্ষিণে কসবা উপজেলার অবস্থান। বর্তমানে এ থানা অঞ্চলটি ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল উত্তর আখাউড়া, দক্ষিন আখাউড়া, ধরখাড়, মানিয়ান্দ ও মগরা।

মুক্তিযুদ্ধঃ

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আখাউড়ার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৮ই এপ্রিল আখাউড়ার দরুইন গ্রামে পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল। এই গ্রামেই তাকে সমাহিত করা হয় এবং নির্মিত হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধি সৌধ। বীরত্বগাথা এ যুদ্ধের স্মৃতি আজও বহন করছে উপজেলা কেন্দ্রীয় স্মৃতিস্তম্ভ ও গঙ্গাসাগর গণকবর।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই এ থানা অঞ্চলটি শিক্ষা খাতে ক্রমান্বয়ে উন্নতি লাভ করে চলেছে। আখাউড়া থানা অঞ্চলে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৯৭ শতাংশ এবং শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। কোমলমতী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ সহ ৪টি কলেজ, ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেশকিছু কমিউনিটি স্কুল ও মাদ্রাসা।

যোগাযোগঃ

বর্তমানে সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত থাকায় সারা দেশের ন্যায় আখাউড়াতেও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। দূরপাল্লায় যাতায়াতের জন্য এ থানা অঞ্চলে রয়েছে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কপথ। রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় সহ ৭টি রাজ্যের প্রবেশদ্বার আখাউড়া স্থলবন্দর। যেখান থেকে প্রতিনিয়ত মালবাহী পন্য নিয়ে সহজেই যাতায়াত করছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ। রয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী গঙ্গা সাগর রেল ষ্টেশন। এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে রয়েছে কসবা-আখাউড়া সড়ক, আজমপুর সড়ক সহ পর্যাপ্ত ব্রিজ ও কালভার্ট।

অর্থনীতিঃ

আখাউড়া থানা পুলিশের নিষ্ঠা ও কর্মতৎপরতায় এ এলাকার মানুশ বেশ সাচ্ছন্দেই তাদের জীবন মান পরিচালনা করে আসছে। এ থানা অঞ্চলে বিস্তৃত কৃষি জমি থাকায় এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষি পন্য উৎপাদন ও বিপনন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। কৃষকের উৎপাদিত প্রধান অর্থকরী ফসলগুলোর বাইরেও স্থানীয় মানুষজন চাকরি, ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে যুক্ত থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

স্বাস্থ্য

থানা বাসীর সার্বিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে আখাউড়াতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি পরিবার কল্যান কেন্দ্র, ও বেশকিছু কমিউনিটি ক্লিনিক। পশুপাখির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে রয়েছে উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

এছাড়া, রয়েছে সাংবাদিকদের আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন আখাউড়া প্রেস ক্লাব।

দর্শনীয় স্থানঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র আখাউড়া থানা অঞ্চলটিতে রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য  দর্শনীয় স্থান। এখানেই রয়েছে সুবিশাল এক দিঘী; নাম গঙ্গাসাগর। প্রায় ১৫শ বছর আগের কথা… ত্রিপুরার মহারাজা ইশ্বরচন্দ্র মানিক্য খাজনা আদায়ে এ এলাকায় আসা-যাওয়া করতেন। তিনি চারদিকে শুষ্ক পরিবেশ দেখে মানুষের কথা ভেবে একটি বড় দীঘি খনন করতে নির্দেশ দেন। অতঃপর গঙ্গাদেবীর নামানুসারে এর নাম রাখেন গঙ্গাসাগর। এ বিশাল দীঘিটি এখনো সাক্ষী বহন করে আছে ঐতিহাসিক স্মৃতির। তাছাড়াও এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে জমিদারদের স্মৃতিবিজড়িত গঙ্গারানী জমিদার বাড়ি, মাওলানা আব্দুল খালেক (রহঃ) এর মাজার, পীর গিয়াস উদ্দীন দারাজী বা কল্লাহ শহীদ (রহঃ) এর মাজার, শ্রী শ্রী রাধামাধব আখড়া, দুর্গা দেবীর আখড়া সহ বেশ কিছু ধর্মীয় এবং দর্শনীয় স্থান।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।