Sudharam Model Thana

সুধারাম… বর্তমান নোয়াখালী সদরের আদি নাম এটি। মধ্যযুগে এই নোয়াখালীর সদর দপ্তর ছিল ভুলুয়া। ১৯৪৮ সালে ভুলুয়া মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে সদর দপ্তর মাইজদীতে অস্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত হয়। সুপ্রাচীন কাল থেকে গড়ে ওঠা রূপবৈচিত্রে পরিপূর্ণ সুধারাম বর্তমানে একটি আধুনিক থানা অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত। এটি নোয়াখালী জেলার ২য় বৃহত্তম থানা অঞ্চল হলেও প্রশানিক ও বাণিজ্যিক বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ জনপদটির নামকরনের পিছনে বেশ কিছু মতামত প্রচলিত রয়েছে। তবে, জনশ্রুতি আছে যে, সেসময় এলাকার ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ী ও জনহিতৈষী ব্যাক্তি ‘সুধারাম মজুমদারের’ নামানুসারেই এ অঞ্চলের নাম হয় সুধারাম । ১৮৬১ সালে সুধারাম থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় যা দেশভাগের পর ১৯৮৩ সালে নোয়াখালী সদর উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

 

 

অবস্থানঃ

ঢাকা থেকে প্রায় ১৫৯ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে এবং নোয়াখালী জেলা সদরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত এক সমৃদ্ধ জনপদ সুধারাম মডেল থানা অঞ্চল। রুপ-বৈচিত্রে পরিপূর্ণ এ এলাকার পূর্ব দিকে কোম্পানিগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা, পশ্চিমে কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা, উত্তরে বেগমগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর সদর এবং দক্ষিনে সুবর্ণচর উপজেলার অবস্থান। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রায় ৩৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জনপদটিতে বসবাস করেন সাড়ে ৫ লক্ষাধিক জনগন। বর্তমানে সুধারাম মডেল থানা এলাকাটি ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমুহ হল – চর মটুয়া, দাদপুর, নোয়ান্নই, কাদির হানিফ, বিনোদপুর, নোয়াখালী, ধর্মপুর, এওজবালিয়া, কালারদপ, অশ্বদিয়া, নিয়াজপুর, পূর্ব চর মটুয়া ও আন্ডারচর।

মুক্তিযুদ্ধঃ

একাত্তরের বীরত্বগাথা মুক্তিযুদ্ধে চিরস্বরণীয় হয়ে আছে এ অঞ্চল। ২২শে এপ্রিল পাক হানাদারেরা প্রথম নোয়াখালী সদরে প্রবেশ করে। ১৮ই জুন সোনাপুর এলাকার শ্রীপুর গ্রামে পাকসেনারা ৭০ জন নিরীহ গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের প্রতিরোধ করতে এক হয় মুক্তিকামী জনতা। চরমটুয়া খাদ্যগুদাম রাজাকার ক্যাম্প, মাইজদী শহর ও অন্যান্য কয়েকটি স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। বহু আত্মত্যাগের পর ৭ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় সুধারাম মডেল থানা অঞ্চল। তাদের এসব আত্মত্যাগের ইতিহাস চির স্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত হয়েছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ, স্বাধীনতা চত্বর, ভাস্কর্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।

শিক্ষাঃ

বর্তমানে সুধারাম মডেল থানা অঞ্চলে শিক্ষার মান ক্রমান্বয়ে উন্নততর হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ অঞ্চলের শিক্ষার হার প্রায় ৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখানেই রয়েছে দেশের ২৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা গ্রহনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা ঘটে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আরও রয়েছে নোয়াখালী সরকারি কলেজ ও সোনাপুর কলেজ সহ ১১টি কলেজ, ১টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউিট, ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কিছু মাদ্রাসা। এছাড়া খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় রয়েছে নোয়াখালী জেলার সর্ববৃহৎ স্টেডিয়াম শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম।

যোগাযোগঃ

সারা দেশের ন্যায় সুধারাম মডেল থানা অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাবস্থাতেও পরিলক্ষিত হচ্ছে দৃশ্যমান উন্নয়ন। দুরপাল্লার যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছে কুমিল্লা – নোয়াখালী মহাসড়ক। তাছাড়া, থানাবাসীর আঞ্চলিক যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্মিত হয়েছে লক্ষ্মীপুর-রামগতি হাইওয়ে, সোনাপুর-কবিরহাট সড়ক সহ বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ সড়কপথ ও পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট। রয়েছে জেলার ব্যস্ততম নোয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন সহ মোট ৪টি রেলওয়ে স্টেশন। ফলে, এখান থেকে দেশের যেকোনো প্রান্তেই যাতায়াত সহজতর হয়েছে।

অর্থনীতিঃ

থানা পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জনগণ বেশ স্বাচ্ছন্দেই তাদের জীবনমান পরিচালনা করে আসছে। এ এলাকার উল্লেখযোগ্য অংশ শহরাঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও সিংহভাগ মানুষ কৃষি পেশার সাথে সংযুক্ত। ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমান অর্থকরী ফসল ও ফলমুল উৎপাদন হচ্ছে। যা কৃষকেরা এখানকার প্রায় ৫৫টি হাটবাজার সহ, বিভিন্ন মেলা ও পার্বণে বাজারজাত করে থাকে। তাছাড়া সদর এলাকার মানুষজন বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানাসহ চাকুরি, ব্যবসাখাতে যুক্ত থেকে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে।

ধর্মঃ

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদ হলেও অসাম্প্রদায়িক এ থানা অঞ্চলটিতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সম্মিলিত বসবাস। তাদের উপাসনার জন্য রয়েছে উপজেলা মডেল মসজিদ সহ মোট ৫৬২টি মসজিদ ও ১৫টিরও বেশি মন্দির অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়।

স্বাস্থ্য

তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে রয়েছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল সহ মোট ৬টি হাসপাতাল, ১টি টিবি ক্লিনিক, ৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১টি পৌর স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র। এছাড়া পশুপাখির সুচিকিৎসায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে।

প্রেসক্লাবঃ

এ থানা অঞ্চলেই রয়েছে স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের সম্মিলিত সংগঠন নোয়াখালী প্রেসক্লাব। রয়েছে দৈনিক নোয়াখালী বার্তা, দৈনিক সচিত্র নোয়াখালী, দৈনিক জাতীয় নিশান, দৈনিক নোয়াখালীর কথা সহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম।

দর্শনীয় স্থানঃ

সুধারাম মডেল থানা অঞ্চলটিতে রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। রয়েছে প্রায় আড়াইশত বছর পূর্বে নির্মিত বাঁশি খন্দকার জামে মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদটিতে নামাজ আদায় করা ও স্থাপত্যশৈলী দেখার উদ্দেশ্যে প্রতিনিয়ত দূর দুরান্ত থেকে এখানে আসেন মুসল্লিরা। আরও রয়েছে, পীর সৈয়দ আব্দুল আজিজ শাহ (রঃ) এর মাজার ও ঠাকুর রামচন্দ্র দেবের মন্দির। পাশাপাশি আরও রয়েছে বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র ও পার্ক।  –

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।