Bancharampur

বাঞ্ছারামপুর… আঁকাবাঁকা তিতাস নদী আর প্রমত্তা মেঘনা নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠা একটি সমৃদ্ধ জনপদ। বাঞ্ছারামপুর নামটিই যেন এ অঞ্চলের সুপ্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বহন করে চলেছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে, আদি ঢাকার তৎকালীন জমিদার রূপলাল বাবুর বিশ্বস্ত বাঞ্ছারাম দাস এ এলাকায় বাস করতেন। সেই জমিদার, বাঞ্ছারাম দাসের বিশ্বস্ততা, কর্মপরায়নতা ও আনুগত্যের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার নামানুসারেই এ অঞ্চলের নামকরণ করেন বাঞ্ছারামপুর। পূর্বে এ এলাকাটি নবীনগর থানার পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ১৯২০ সালে ৭টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে বাঞ্ছারামপুর একটি পূর্ণাঙ্গ থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যা ১৯৬৫ সালে ১৩টি ইউনিয়নে বর্ধিত করা হয়। দেশভাগের পর ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে এ থানা অঞ্চলকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

 

 

অবস্থানঃ

ঢাকা থেকে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার উত্তর পূর্বাংশে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত একটি নদীবিধৌত অঞ্চল বাঞ্ছারামপুর। এর পূর্ব দিকে নবীনগর ও মুরাদনগর উপজেলা, পশ্চিমে মেঘনা নদী ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা, উত্তরে মেঘনা নদী ও নরসিংদী সদর উপজেলা এবং দক্ষিণে কুমিল্লার হোমনা উপজেলা ও তিতাস নদীর অবস্থান।

২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী ১৮৭ দশমিক ৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ থানা অঞ্চলটিতে বসবাস করেন প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ। বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা এলাকাটি ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল তেজখালী, পাহাড়িয়াকান্দি, দরিয়াদৌলত, সোনারামপুর, দড়িকান্দি, ছয়ফুল্লাকান্দি, বাঞ্ছারামপুর, আইয়ুবপুর, ফরদাবাদ, রুপসদী, ছলিমাবাদ, উজানচর ও মানিকপুর।

মুক্তিযুদ্ধঃ

১৯৭১ এ বাঞ্ছারামপুরের একাধিক স্থানে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এলাকার আসাদনগর, দুর্গারামপুর, ঝগড়ার চর, দশদোনা, ধরিয়ারচর যুদ্ধের পাল্টা আক্রমনে পিছু হটতে শুরু করে পাক হায়েনারা। সবশেষ ১৪ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় বাঞ্ছারামপুর। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মৃতি ও বীরত্ব গাঁথা চির স্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত হয়েছে বধ্যভূমি, মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ।

শিক্ষাঃ

বর্তমানে এ থানা অঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী শিক্ষার হার প্রায় ৩৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। রয়েছে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ সহ ৭টি কলেজ, ১টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, দশদোনা উচ্চ বিদ্যালয়, রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয় সহ ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেশ কিছু মাদ্রাসা।

যোগাযোগঃ

বাঞ্ছারামপুর মডেল থানা পুলিশের কর্মতৎপরতায় আইন শৃঙ্খলা সমুন্নত থাকার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে দৃশ্যমান উন্নয়ন। রয়েছে ভুলতা–নবীনগর–রাধিকা সড়ক, হোমনা–বাঞ্ছারামপুর সড়ক, মুরাদনগর–বাঞ্ছারামপুর সড়ক ও নবীনগর–বাঞ্ছারামপুর সড়ক। এতে করে বিভিন্ন স্থানে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে থানাবাসী। তাছাড়া নদীবেষ্টিত অঞ্চল হওয়ায় নৌপথেও যাতায়াতের সুব্যবস্থা রয়েছে। কড়িয়াকান্দি ফেরি ঘাট ও বাঞ্ছারামপুর লঞ্চ টার্মিনালের ফলে, নৌযান ব্যবহার করেও নিয়মিত চলাচল করছে এ অঞ্চলের মানুষ। নির্মিত হয়েছে প্রায় ১৩৭ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৫ কিলোমিটার আধাপাকা রাস্তা, ১৮২ কিলোমিটার নৌপথ সহ পর্যাপ্ত ব্রিজ কার্লভার্ট।

অর্থনীতিঃ

আইন শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতায় এখানকার মানুষ বেশ স্বাচ্ছন্দেই তাদের জীবনমান পরিচালনা করে আসছে। বিস্তৃত কৃষিজমি ও নদী বেষ্টিত এলাকা হওয়ায় কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী শ্রেনির আধিক্য লক্ষ করা যায়। ফলে এ থানা অঞ্চলে প্রতিবছর উৎপাদিত হচ্ছে বিপুল পরিমান অর্থকরী ফসল সহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। পাশাপাশি সদর এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চাকরি, ব্যবসা সহ নানা খাতে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।

স্বাস্থ্য

তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বাঞ্ছারামপুর হাসপাতাল, ২টি পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৮টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৫টি ক্লিনিক সহ ইউনিয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে রয়েছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বাঞ্ছারামপুর প্রেসক্লাব।

কৃতিসন্তানঃ

এখানেই জন্মগ্রহন করেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্বের কনিষ্ঠতম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান মোহাম্মদ আশরাফুল। জাহেরাইট খনিজ পদার্থের আবিষ্কারক ভূতাত্বিক এম এ জাহের, পুরাতাত্বিক ও গবেষক আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া এবং কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ডলি জহুরের জন্মস্থানও এই বাঞ্ছারামপুর।

দর্শনীয় স্থানঃ

প্রাচীন এ জনপদের ঐতিহাসিক সাক্ষি হয়ে আছে এখানে অবস্থিত বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন ও জমিদার বাড়ি। বাঞ্ছারামপুরের উজানচর গ্রামে রয়েছে জমিদার কংশনারায়ন রায়ের নির্মিত উজানচর জমিদার বাড়ি ও জমিদার তীর্থ চন্দ্র রায়ের নির্মিত অসাধারন কারুকার্য খচিত রুপসদী জমিদার বাড়ি। এছাড়াও রয়েছে উজানচর আনন্দ মহাকালী আশ্রম, মাওলানা রাহাত আলি শাহের মাজার শরীফ সহ বেশ কিছু ধর্মীয় ও দর্শনীয় স্থান। এসব স্থানগুলোতে আগত পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পুলিশ সদস্যগণ।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।