Bijoynagar Thana

বিজয়নগর… ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অদুরে অবস্থিত ভৌগলিক বৈচিত্রে পরিপূর্ণ সুপ্রাচীন এক জনপদ। সবুজ ধান ক্ষেতের আল ধরে কৃষকের অবিরাম ছুটে চলা, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ আর গ্রামীণ সরল জনজীবন… সব মিলে যেন ফুটে ওঠে রূপসী বাংলার চির চেনা লাবণ্য। তবে, ২০১০ সালের আগেও এ অঞ্চলে বিজয়নগর নামের অস্তিত্ব ছিলো না। পূর্বে এ এলাকাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা এলাকার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। জানা যায়, ২০১০ সালে বিজয় দিবস উদযাপন কালে এর নামকরণ করা হয় বিজয়নগর। সেসময়, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির একটি বৈঠকে একে উপজেলায় উন্নীত করলে বিজয়নগর ৪৮২তম উপজেলা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে।

 

 

অবস্থানঃ

ঢাকা থেকে প্রায় ১১১ কিলোমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি নবগঠিত থানা অঞ্চল বিজয়নগর। এর পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও সরাইল উপজেলা, উত্তরে নাসিরনগর ও মাধবপুর উপজেলা সহ প্রবাহমান তিতাস নদীর একাংশ এবং দক্ষিণে আখাউড়া উপজেলার অবস্থান। ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী প্রায় ২২১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জনপদটিতে বাস করেন ২ লক্ষ ৫৭ হাজার ২৪৭ জন মানুষ। বর্তমানে এ থানা অঞ্চলটি ১০টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল বুধন্তি, চান্দুরা, ইছাপুরা, চম্পকনগর, হরষপুর, পত্তন, সিংগারবিল, বিষ্ণুপুর, চর ইসলামপুর ও পাহাড়পুর।

মুক্তিযুদ্ধঃ

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিলো এ অঞ্চল। এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর ব্যপক সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। অতঃপর ১৯শে নভেম্বর পাহাড়পুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর সর্বপ্রথম শত্রু মুক্ত হয়। এছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা সর্বপ্রথম এ ইউনিয়ন দিয়েই এ দেশে প্রবেশ করে। মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি চিরস্মরণীয় করে রাখতে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন।

শিক্ষাঃ

বর্তমানে বিজয়নগর থানা অঞ্চলে শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য হারে উন্নতি সাধিত হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ অঞ্চলটির শিক্ষার হার ছাড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে। রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ৪টি কলেজ, ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রায় ১০০শো’রও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেশ কিছু মাদ্রাসা।

যোগাযোগঃ

থানা অঞ্চলের সার্বিক আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে দৃশ্যমান উন্নয়ন। বিজয়নগর দিয়েই বয়ে গেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। তাছাড়া বহমান তিতাস নদীর কল্যাণে নদীপথেও যাতায়াত করতে পারছে সাধারণ মানুষ। নির্মিত হয়েছে ১৪৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ও পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট সহ আঞ্চলিক সড়কপথ।

অর্থনীতিঃ

বিজয়নগর থানা পুলিশের নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে এ অঞ্চলের মানুষ নিবিঘ্নে তাদের জীবনমান পরিচালনা করে আসছে। জনপদটির মোট অধিবাসীর অধিকাংশই কৃষি পেশার সাথে সংযুক্ত। ফলে, উৎপাদিত হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ অর্থকরী ফসল। তবে, এলাকাটি বিভিন্ন মৌসুমি ফলমূল ও মধু উৎপাদনের জন্য বেশ বিখ্যাত। তাছাড়া, এ অঞ্চলটি প্রবাসী অধ্যুষিত জনপদ হওয়ায় থানার মানুষজন রেমিট্যান্স অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

স্বাস্থ্য

থানাবাসীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১০টি ইউনিয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল। এছাড়া পশুপাখির স্বাস্থ্য সেবায় রয়েছে উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

প্রেসক্লাবঃ

বিজয়নগর থানা অঞ্চলে রয়েছে স্থানীয় সাংবাদিকদের সম্মিলিত সংগঠন বিজয়নগর উপজেলা প্রেসক্লাব। রয়েছে বিজয়নগর নিউজ, সাপ্তাহিক তিতাস বানী সহ বেশ কিছু পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যম।

কৃতিসন্তানঃ

বিজয়নগর থানা অঞ্চলটি বহু বিখ্যাত গুণী মানুষের জন্মস্থান। এখানেই জন্মগ্রহন করেন একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও শিক্ষাবিদ আল-মামুন সানাউল হক। এছাড়াও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক অলি আহাদের জন্মস্থানও এই বিজয়পুর।

দর্শনীয় স্থানঃ

বিজয়পুরেই রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র। কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ১৮৬৬ সালে নির্মিত ছতরপুর শাহী ঈদগাহ মসজিদ। রয়েছে সূফী সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহাম্মাদ (রহঃ) মাজার সম্বলিত দৌলতবাড়ি দরবার শরীফ ও ছোট বড় পাহাড়ি টিলা। এছাড়া থানা অঞ্চলের বিজয়নগরের কালাছড়ায় বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে লিচু বাগান। এসব দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলো ঘুরে দেখতে এবং বিখ্যাত এই লিচু সংগ্রহ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসুরা।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।