Chuddagram

শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো সুসজ্জিত জনপদের চিত্রপট আর ডাকাতিয়া নদীর কোলঘেঁষা ভারতের সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল চৌদ্দগ্রাম। অঞ্চলটির নামের সাথেই মিশে আছে এর সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গল্প। তৎকালীন সময়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার রাজা বিরেন্দ্র কিশোর বাহাদুরের বেশ পছন্দের জায়গা ছিল এ অঞ্চল। প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব আদায় হওয়ায় খাজনা আদায়ের সুবিধার্থেই এখানে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি পরগনা। ১৪ টি গ্রাম নিয়ে এ পরগনাটি গঠিত হওয়ায় এর নামকরন করা হয় চৌদ্দগ্রাম। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে এ অঞ্চলটি পৃথক একটি থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অতঃপর ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় উন্নীত হয়।

ভৌগলিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে গড়ে ওঠা আধুনিক এ জনপদটির সব ধরণের আইনি সেবায় এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক জনাব নুরেআলম মিনার একনিষ্ঠ কর্মদক্ষতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে;  কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন আব্দুল মান্নান বিপিএম বার। যার নিষ্ঠা ও কর্মপরায়ণতায় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ যাচ্ছে কুমিল্লা জেলা পুলিশের চৌদ্দগ্রাম সার্কেল তথা চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ। এ অঞ্চলের আইন শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি, সমসাময়িক চিত্র, ভৌগোলিক  জনমানুষের বৈশিষ্ট‌  ও দর্শনীয় স্থানসমূহ নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের সবুজ সংকেত – চৌদ্দগ্রাম থানা।

 

 

অবস্থানঃ

ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্ব দিকে এবং কুমিল্লার মাত্র ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণাংশে অবস্থিত একটি বৃহৎ জনপদ চৌদ্দগ্রাম। ২৭০.৪৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ থানা অঞ্চলে বসবাস করেন প্রায় সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি জনগণ। অঞ্চলটির পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে নাঙ্গলকোট ও লাকসাম উপজেলা, উত্তরে কুমিল্লা সদর এবং দক্ষিণে ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার অবস্থান। বর্তমানে এ থানা অঞ্চলের আওতাধীন রয়েছে ১টি পৌরসভা ও ১৩ ইউনিয়ন। ইউনিয়ন সমূহ হল কাশিনগর, উজিরপুর, কালিকাপুর, শ্রীপুর, শুভপুর, ঘোলপাশা, মুন্সিরহাট, কনকাপৈত, বাতিসা, চিওড়া, গুণবতী, জগন্নাথদীঘি ও আলোকরা।

মুক্তিযুদ্ধঃ

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষের ভূমিকা ছিল বেশ প্রশংসনীয়। ১৯৭১ সালের ২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর জগন্নাথ দিঘি ক্যাম্প দখল করে নেয়। পর পর কয়েকটি লড়াইয়ে শহীদ হন ২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। রক্তক্ষয়ী পাল্টা আক্রমনে সবশেষ ৭ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় চৌদ্দগ্রাম। তাদের বীরত্বের স্মৃতি আজীবন স্মরনে নির্মিত হয়েছে সমাধিক্ষেত্র, স্মৃতিস্তম্ভ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন এবং মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই চৌদ্দগ্রামবাসীর শিক্ষার মান ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এ এলাকার শিক্ষার গড় হার ৫৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। রয়েছে ১০টি কলেজ, ৫৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেড় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০৭টি কিন্ডার গার্টেন ও ৮০টিরও বেশী মাদ্রাসা সহ বেশ কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও থানাবাসির মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার গুরুত্ব বিবেচনায় স্থাপিত হয়েছে নোয়াপুর শহীদ স্মৃতি গনপাঠাগার ও মিলনায়তন।

যোগাযোগঃ

বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সারাদেশের ন্যায় চৌদ্দগ্রাম থানা অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও এসেছে বহুমুখী পরিবর্তন। চৌদ্দগ্রামের উপর দিয়েই বয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা–চট্টগ্রাম হাইওয়ে। এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রাখতে নির্মিত হয়েছে চৌদ্দগ্রাম–লাকসাম সড়ক সহ অভ্যন্তরীণ সড়কপথ এবং পর্যাপ্ত ব্রিজ কার্লভার্ট। তবে, মহাসড়ক থাকায় হাইওয়ে পুলিশের সমন্বয়ে হাইওয়ে কেন্দ্রিক দুর্ঘটনা ও অপরাধগুলো দ্রুত আমলে নিয়ে সদা সোচ্চার অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ।

অর্থনীতিঃ

চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের সার্বক্ষণিক কর্ম প্রচেষ্টায় আইন শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে এ থানা অঞ্চলে। ফলে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের জীবন-মান পরিচালনা করে চলেছেন। এখানকার প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তবে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন খাত ও চাকরির মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

স্বাস্থ্য

থানাবাসীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে রয়েছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ প্রায় ১১টি হাসপাতাল, ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক ও ১টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এছাড়া গবাদি পশুর সুচিকিৎসা সেবায় রয়েছে ১টি উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

দর্শনীয় স্থানঃ

চৌদ্দগ্রাম নামটির ইতিহাসই বলে দেয় এলাকাটিতে একসময় বিদ্যমান ছিল জমিদারী প্রথা। তৎকালীন রাজা ও জমিদারদের অত্যন্ত পছন্দনীয় এলাকা হওয়ায় এখানে তারা বেশকিছু জলাধার ও দীঘি স্থাপন করেন। যার সাক্ষী হিসেবে এখনও রয়ে গেছে রাজবল্লভপুর দীঘি, জগন্নাথ দীঘি ও সুয়ামার দীঘি। এছাড়াও রয়েছে চান্দিশকরা সেনবাহাদুর বাড়ি, চিওড়া কাজী বাড়ি, কালি ও মহাদেব মন্দির এবং বেশ কিছু মাজার শরীফ।

 

প্রেসক্লাব

থানা এলাকার সাংবাদিকদের কার্যক্রমকে বেগবান রাখতে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চৌদ্দগ্রাম প্রেসক্লাব। রয়েছে আলোকিত চৌদ্দগ্রাম সহ বেশ কিছু অনলাইন গনমাধ্যম।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।