Nangalkot Thana

নাঙ্গলকোট, যেন গ্রামীণ রূপবৈচিত্রের এক শাশ্বত রূপ। এলাকাটির নামকরনের সাথেই মিশে আছে এখানকার অধিবাসীদের জীবন মান, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। লোকশ্রুতি রয়েছে ব্রিটিশরা এ অঞ্চলে আগমনের পর এখানকার জনগণের উন্নত জীবনমান ও পোশাক সজ্জা দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিল। ধারণা করা হয় এখানে কোট পড়া লোকের আধিক্য থেকেই এর নামকরন করা হয়েছে নাঙ্গলকোট। এ অঞ্চলটি পূর্বে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অংশবিশেষ ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে নাঙ্গলকোট আলাদা উপজেলা এবং একটি সতন্ত্র থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

অবস্থানঃ

ঢাকা থেকে প্রায় ১৪১ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বাংশে এবং কুমিল্লা থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত ২২৫.৯৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল নাঙ্গলকোট। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুসারে এ জনপদটিতে বসবাস করেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৫২ জন মানুষ। এলাকাটির পূর্বদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, পশ্চিম লাকসাম উপজেলা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে চৌদ্দগ্রাম ও লালমাই উপজেলা এবং দক্ষিণে সেনবাগ ও দাগনভূঞা উপজেলার অবস্থান। বর্তমানে এ থানা অঞ্চলটি ১টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল বাঙ্গড্ডা, পেড়িয়া, রায়কোট, মৌকরা, মক্রবপু্‌র, দক্ষিণ আদ্রা, পশ্চিম জোড্ডা, ঢালুয়া, দৌলখাঁড়, বক্সগঞ্জ, সাতবাড়িয়া, হেসাখাল, বটতলী, পূর্ব জোড্ডা, দক্ষিণ রায়কোট ও উত্তর আদ্রা।

 

 

মুক্তিযুদ্ধঃ

৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রক্তাক্ত ইতিহাস রচিত হয়েছে নাঙ্গলকোটে। ২নং সেক্টরের আওতাধীন এ থানা অঞ্চলটিতে পাকবাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় প্রাণ দিতে হয়েছে বহু নিরীহ মানুষকে। এমনকি রাজাকারদের সহায়তায় একাধিক মুক্তিযোদ্ধাদের উপরেও নির্যাতন চালায় হানাদারেরা। সবশেষে এলাকার বটতলী বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মুখোমুখী যুদ্ধে জড়ায় পাকিস্তানি দখলদাররা। যুদ্ধে পাকিস্তানিরা পরাজিত হলে শত্রু মুক্ত হয় নাঙ্গলকোট। মুক্তিযোদ্ধাদের এসব স্মৃতি স্মরনে রাখতে এখানে নির্মিত হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, প্রত্যয় স্মৃতিসৌধ ও প্যারিকোট বদ্ধভুমি।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই নাঙ্গলকোটকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উন্নত করে গড়ে তুলতে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। অঞ্চলটির বর্তমান শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এলাকাটির শিক্ষার মানোন্নয়নে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৯টি কলেজ, ৩টি কারিগরি কলেজ, ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রায় ৩৪টি মাদ্রাসা।

এ থানা অঞ্চলেই জন্মগ্রহন করেন বাংলাদেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. জাকির হোসেন।

যোগাযোগঃ 

বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা সমুন্নত থাকায় সারাদেশের ন্যায় যোগাযোগ ব্যাবস্থায়ও উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে নাঙ্গলকোটে। দূরপাল্লায় যোগাযোগের জন্য এখানে রয়েছে দীর্ঘ রেলপথ। এ থানা অঞ্চলের নাঙ্গলকোট রেল ষ্টেশনের কল্যাণে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করছে হাজার হাজার মানুষ। লাকসাম-নাঙ্গলকোট সড়ক, খিলা-নাঙ্গলকোট সড়কের মাধ্যমে থানাবাসীর আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। নির্মিত হয়েছে প্রায় ৩২৬ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৩০ কিলোমিটার আধাপাকা রাস্তা সহ পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট।

অর্থনীতিঃ

নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের সার্বিক কর্মতৎপরতায় এ এলাকার মানুষ বেশ সাচ্ছন্দে জীবনযাত্রা পরিচালনা করে যাচ্ছে। অঞ্চলটিতে কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে এখানকার বার্ষিক মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিকটন ছাড়িয়েছে। এছাড়া বিস্তীর্ণ উর্বর কৃষি ভূমি থাকায় এখানে প্রচুর পরিমাণ অর্থকরী ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি থানাবাসী চাকরি, ব্যবসা, সেবা ও পরিবহন খাত সহ প্রবাসী থেকে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

নাঙ্গলকোট বাসীর সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ১১টি পবিরার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ১টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রসহ ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়া পশুপাখির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে রয়েছে উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারি হাসপাতাল।

দর্শনীয় স্থানঃ

প্রকৃতির কোলে সুশোভিত নাঙ্গলকোট থানা অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে মুঘল আমলে নির্মিত বাল্লেগশাহ ফকির তিন গম্বুজ মসজিদ বা দাড়াচৌ গায়েবি মসজিদ। এছাড়া রয়েছে সাতবাড়িয়া জলাভূমি ও ব্রিজ। থানায় আগত দর্শনার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানে সোচ্চার অবস্থান পালন করে আসছে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ।

প্রেসক্লাব

নাঙ্গলকোট থানা অঞ্চলে রয়েছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন নাঙ্গলকোট প্রেস ক্লাব। রয়েছে দৈনিক আলোকিত নাঙ্গলকোট ও দৈনিক আমাদের নাঙ্গলকোট সহ বেশ কিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যম।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।