Burichong Thana Sobuj Songket Thumbnail 2024 02

বুড়িচং…দেশের অনন্য প্রাচীন সভ্যতাগুলোর নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত একটি জনপদ। এ অঞ্চলের পূর্বনাম ছিলো বিজয়পুর। তবে, খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকের গোড়ার দিকে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এ এলাকায় ভ্রমণকালে জ্ঞানী-গুনীদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন। তাই, তিনি এ অঞ্চলকে বুড্ডি চিয়াং নামে অভিহিত করেন। বুড্ডি অর্থ জ্ঞানী এবং চিয়াং অর্থ আবাসস্থল। যার আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় জ্ঞানী-গুনীদের আবাসস্থল। কালের বিবর্তনে বুড্ডি চিয়াং বুড়িচং হিসেবে লোকমুখে সমাদৃত হতে থাকে। ১৯১৬ সালে, কুমিল্লা সদর এর কিছু অংশ এবং বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার অংশবিশেষ নিয়ে পুলিশ ফাঁড়ী স্থাপনের মাধ্যমে বুড়িচং থানার গোড়াপত্তন হয় যা ১৯৭০ সালে একটি সতন্ত্র থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের ফলে ১৯৮৩ সালে বুড়িচং উপজেলায় উন্নীত হয়।

 

 

ঢাকা থেকে প্রায় ১০২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং কুমিল্লা জেলা শহরের অদূরে প্রায় ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার উত্তরাংশে অবস্থিত ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চল বুড়িচং। ১৬৩ দশমিক সাত ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তনের মোট ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বুড়িচং থানা এলাকায় ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বসবাস করেন প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। ইউনিয়ন সমূহ হলো, রাজাপুর, বাকশীমূল, বুড়িচং সদর, ষোলনল, পীরযাত্রাপুর, ময়নামতি, মোকাম, ভারেল্লা, ও দক্ষিণ ভারেল্লা। এ অঞ্চলের পূর্বদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও কুমিল্লা সদর উপজেলা, পশ্চিমে দেবিদ্বার ও চান্দিনা উপজেলা, উত্তরে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা ও দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা সদর অবস্থিত।

মুক্তিযুদ্ধঃ

স্বাধীনতার যুদ্ধে বুড়িচংবাসীর অবদান ভুলবার নয়। সেসময় এ অঞ্চলটি ২ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে এলাকাবাসীর প্রত্যক্ষ ভূমিকায় তোপের মুখে পড়তে শুরু করে পাঁক হানাদারেরা। বেশ কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধের মধ্যে, পাঁচড়ার যুদ্ধ, বুড়িচং থানা অপারেশন, রামনগর যুদ্ধ, জালালপুর যুদ্ধ ও চড়ানলের যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। এসব যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় শতাধিক সেনা আহত ও নিহত হয়। ফলে, এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাঁক হায়েনার দল। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় বুড়িচং থানা অঞ্চল। রক্তক্ষয়ী এ যুদ্ধে শহীদ হন বুড়িচং এর প্রায় ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের স্মৃতিস্মরনে নির্মিত হয়েছে উপজেলা শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ।

শিক্ষাঃ

বর্তমানে শিক্ষাখাতে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে বুড়িচং থানা অঞ্চলে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ এলাকার শিক্ষার গড় হার ৫৭ শতাংশ। রয়েছে প্রায় ৯টি কলেজ, ৮১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ৪০টিরও বেশী মাদরাসা।

যোগাযোগঃ

আইন শৃঙ্খলার মান সমুন্নত থাকায় যোগাযোগ খাতেও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে বুড়িচং থানা অঞ্চল। বুড়িচং এর বুক চিরেই বয়ে গেছে গোমতী নদী এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ ঢাকা-চট্রগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক। ফলে, নদীপথে এবং সড়কপথে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে এ অঞ্চলের মানুষজন। তাছাড়া রাজাপুর রেল স্টেশনের কল্যাণে রেলপথেও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। নির্মিত হয়েছে ১২০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৪৫ কিলোমিটার আধাপাকা রাস্তা সহ আঞ্চলিক সড়কপথ এবং পর্যাপ্ত ব্রিজ কালভার্ট।

তবে, সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এ এলাকার অপরাধের ধরনে বৈচিত্র্যতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে, জমি বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট অপরাধ, বাল্যবিবাহ সহ মাদক চোরাচালানের প্রভাব দেখা যায়। চট্রগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি নুরেআলম মিনা যোগদানের পর পরই তিনি সকল ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান গ্রহণ করে আসছেন। তারই কার্যকরী নেতৃত্বে, কুমিল্লা জেলার কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বিপিএম বার জেলাবাসীর সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিশ্চিতে যুগোপযোগী ও কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। সে লক্ষেই, সদর সার্কেলের আওতাধীন বুড়িচং থানার পুলিশ সদস্যগণ নিষ্ঠার সাথে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

*থানার সাফল্য + বিট পুলিশিং + বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা রোধে তাদের সচেতনতা কার্যক্রম (সার্কেল এএসপি + ওসি)

অর্থনীতিঃ

বুড়িচং থানা পুলিশের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা বেগবান হচ্ছে। বুড়িচংবাসীর প্রধান আয়ের উৎস কৃষি হলেও, তাদের একটা বিশেষ অংশ প্রবাসে থেকে দেশের রেমিট্যান্স এ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কৃষকেরা প্রধান অর্থকরী ফসল উৎপাদনের বাইরেও নানা রকম শাকসবজি, ফলমূল সহ হাস-মুরগি ও গবাদীপশু পালন করে জীবনমান পরিচালনা করে আসছেন। তাছাড়া এ অঞ্চলের একটি বিশেষ অংশ প্রবাসে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এবং কর্মজীবীরা ব্যবসা, চাকুরি, যোগাযোগ ও শিল্প খাতে নিযুক্ত থেকে এ অঞ্চলের অর্থনীতির মান উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পাবলিক ইন্টারভিউ

ধর্মঃ

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদ হলেও অসাম্প্রদায়িক এ অঞ্চটিতে হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সম্মিলিত বসবাস। তাদের উপাসনার জন্য রয়েছে উপজেলা মডেল মসজিদ সহ মোট ২৯০টি মসজিদ ও ময়নামতি কালী মন্দির সহ ২৩টিরও বেশি মন্দির।

স্বাস্থ্য

বুড়িচংবাসীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাছাড়া গ্রামবাসীর দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৬টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গবাদিপশুর সুচিকিৎসায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল রয়েছে।

প্রেসক্লাব

এ থানা অঞ্চলে রয়েছে স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের সম্মিলিত সংগঠন বুড়িচং প্রেস ক্লাব।

বুড়িচংবাসীর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা সোচ্চার থাকতে হয় বুড়িচং থানার সকল পুলিশ সদস্যদের। তাদের নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে গ্রামাঞ্চল ও দুর্গম এলাকাগুলোতেও জনগনের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পোঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।

এস আই ইন্টারভিউ (বিট পুলিশিং) *এ থানায় নেই (অন্য থানা থেকে ম্যানেজ করে দিতে হবে)

দর্শনীয় স্থানঃ

বুড়িচং কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে এক ঐতিহাসিক ইতিহাসের। ২য় বিশ্বযুদ্ধ তথা ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে ময়নামতি একটি ক্ষুদ্র গ্রাম হলেও সেখানে সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটি তৈরি হয় এবং বড় হাসপাতাল স্থাপিত হয়। যুদ্ধে নিহত ও যুদ্ধাহত হয়ে মারা যাওয়া সৈনিকদের প্রায় ৭৩৬টি রণ সমাধিই বলে দেয় সে সময়ের গুরুত্ববহ স্মৃতি।

শালবন বৌদ্ধ বিহার বাংলার প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত এ বিহারটিতে রয়েছে মোট ১১৫টি কক্ষ। জানা যায় এ কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস ও ধর্মচর্চা করতেন। বিহারটির ধবংসাবশেষ থেকে ৮টি তাম্রলিপি ও ৪ শতাধিক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক ও মূর্তি পাওয়া গেছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এ বৌদ্ধ বিহার ও জাদুঘরটিতে ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করতে ছুটে আসেন নানা পর্যটক।

বুড়িচং এর দক্ষিণগ্রামে রয়েছে পদ্মবিল যেখানে ফুটে তিন রঙের পদ্মফুল। শতাধিক একর জুড়ে বিস্তৃত বিলের পানিতে ফুটে উঠা সাদা গোলাপি ও হলুদ পদ্মফুলের স্নিগ্ধতা নিতে আসেন ভ্রমনপিপাসুরা। সারাবছর এ বিলটিতে পদ্মফুল থাকলেও, শরৎকালে ফুটে ওঠা পদ্মফুলগুলো যেনো তার সমস্ত সৌন্দর্য্য উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের চোখকে সার্থক করে তোলে।

পর্যটক সহ থানার সকল অধিবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা সোচ্চার অবস্থানে রয়েছে বুড়িচং থানা পুলিশ।

আত্মহত্যাঃ

তবে, একসময় এ অঞ্চলটিতে আত্মহত্যার প্রভাব ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিলো। কিশোর-কিশোরীদের প্রেমঘটিত কারণ ও পারিবারিক কলহের জের ধরে অনেকেই এসব গুরুতর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধকল্পে বুড়িচং থানা পুলিশ সদস্যগণ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতি সপ্তাহে পুলিশের উঠান বৈঠক সহ নানা সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে এই নেক্কারজনক অপরাধটিকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ওসি ইন্টারভিউ (আত্মহত্যা)

এ অঞ্চলের প্রায় সকল পরিবারেই প্রবাসী সদস্য থাকায় নানাবিধ বিড়ম্বনা যেমন, ভিসা সংক্রান্ত লেনদেন, দালালদের জালিয়াতি সহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ গুলো প্রবাসী হেল্প ডেস্ক এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে থাকেন।

এছাড়াও, দাম্পত্য কলহকে কেন্দ্র করে নারী নির্যাতনের প্রভাব লক্ষণীয় এ অঞ্চলে। বিশেষ করে যৌতুকের জন্য শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন, ইভটিজিং সহ বাল্যবিবাহ , প্রতিবন্ধীদের নানাবিধ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়া, বয়স্ক ব্যক্তিদের ভরণপোষন সংক্রান্ত সমস্যা দেখা যায়। এসব সামাজিক অপরাধ রোধে এ থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক রয়েছে। এ ডেস্কে দ্বায়িত্বরত নারী পুলিশ সদস্য এসব বিষয় পর্যালোচনা করে প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ইন্টারভিউ (নারী শিশু বয়স্ক প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক)

তবে বর্তমানে বুড়িচং এর সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল মাদকদ্রব্যের অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা। তাছাড়া এ থানা অঞ্চলটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদকের ভয়াবহতার জাল ব্যপক হারে বিস্তার লাভ করেছিলো। চট্রগ্রাম রেঞ্জ এর ডিআইজি নুরেআলম মিনা শুরু থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছিলেন। সে লক্ষেই কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বিপিএম বার এর নেতৃত্বে থানার পুলিশ সদস্যগণ মাদকের প্রভাব সমূলে উৎখাত করতে সার্বক্ষণিক টহল এর পাশাপাশি সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাদক নিয়ন্ত্রনে সচেতনতা বাইট (ওসি) এবং এএসপি | এবং ওসি ইন্টারভিউ (সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও সেবা চলমান)

বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ফলে পুলিশি সেবায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। স্মার্ট পুলিশিং এর কল্যাণে বাংলাদেশ পুলিশের ডিজিটাল সেবা এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নে এখন জনগন চাইলেই থানায় না এসে থানার সেবা গ্রহন করতে পারে। ঘরে বসে অনলাইন জিডি, ইমারজেন্সি সেবা ৯৯৯ সহ, বাংলাদেশ পুলিশ ফোনবুক এপ্সের মাধ্যমে থানার নম্বরে ফোন দিয়ে সরাসরি অভিযোগ করতে পারে।

ইন্টারভিউ ওসি (বর্তমান পুলিশ ও আগের পুলিশ) ফিনিশিং

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।