Cumilla Sadar

কুমিল্লা সদর… বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী মহানগরী। শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নিখাদ ভালোবাসা এ নগরীকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। ঐতিহাসিক পটভূমিতে গড়ে ওঠা এ অঞ্চলটি অতীতে ত্রিপুরা রাজ্যের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ১৯৬০ সালে কুমিল্লা একটি জেলায় রূপান্তরিত হলে, ১৯৮৩ সালে কুমিল্লার সদর এলাকাকে কোতয়ালী থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় কোতয়ালী মডেল থানাকে সদর উপজেলা এবং ২০০৫ সালে পুনর্গঠিত করে আদর্শ সদর উপজেলায় উন্নীত করা হয়।

অবস্থানঃ

রাজধানী ঢাকা থেকে ১০৪ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত সমৃদ্ধ একটি জনপদ কুমিল্লা সদর আদর্শ উপজেলা তথা কোতয়ালী মডেল থানা অঞ্চল। যার পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পশ্চিমে বরুড়া ও চান্দিনা উপজেলা, উত্তরে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা এবং দক্ষিনে সদর দক্ষিন উপজেলার অবস্থান। ২৩২.১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ থানা অঞ্চলটিতে ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বসবাস করেন প্রায় ৫ লাখ ৩২ হাজারেরও অধিক মানুষ। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ থানা অঞ্চলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ও কুমিল্লা সেনা নিবাসের বাইরেও ৬ টি ইউনিয়ন রয়েছে। ইউনিয়ন সমূহ হল কালিরবাজার, দক্ষিণ দুর্গাপুর, উত্তর দুর্গাপুর, আমড়াতলী, পাঁচথুবী ও জগন্নাথপুর।

 

 

মুক্তিযুদ্ধঃ

স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই এ অঞ্চলের মানুষ দেশ ও জনগণের অধিকার আদায়ে বিভিন্নও আন্দোলনে আগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে। একাত্তরের রনাঙ্গনেও দেখা যায় এর পূর্ণ প্রতিফলন। পাক হানাদাররা এ দেশে আক্রমণ করলে স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। অতঃপর আমড়াতলি, পাঁচথুরি ও কংসতলার যুদ্ধ সহ বেশ কিছু সম্মুখযুদ্ধে হানাদারেরা পিছু হটলে ৮ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় এ অঞ্চল। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি আজীবন স্মরন রাখতে এখানে নির্মিত হয়েছে কটকবাজার মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকেই শিক্ষা ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের বেশ সুনাম রয়েছে, যা পরবর্তি সময়ে আরও বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা এলাকার শিক্ষার হার ৬৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। স্থাপিত হয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। এ থানা অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রয়েছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ১ টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ সহ ১১টি কলেজ, ৮ টি কারিগরি কলেজ, কুমিল্লা জিলা স্কুল ও নবাব ফয়জুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ ৭৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৮৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বেশ কিছু মাদ্রাসা। এর পাশাপাশি আরও রয়েছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গনপাঠাগার সহ বেশ কিছু শিক্ষা বান্ধব প্রতিষ্ঠান।

যোগাযোগঃ

এ থানা অঞ্চলের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় উন্নততর হচ্ছে। সারাদেশে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্মাণ হয়েছে বেশ কিছু আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়ক। দেশের অর্থনীতির পাইপলাইন খ্যাত ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়কটি বয়ে গেছে এ থানা অঞ্চলের বুক চিরেই। এছাড়া ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম বাইপাস সড়ক, কুমিল্লা নোয়াখালী মহাসড়ক এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থানও এ থানা অঞ্চলে।

অর্থনীতিঃ

কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এ অঞ্চলের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের জীবনমান পরিচালনা করে আসছেন। আধুনিক সমৃদ্ধ এ জনপদে বসবাসরত বেশির ভাগ মানুষের পেশা শিল্প, ব্যবসা ও চাকুরি নির্ভর। রয়েছে বিবির বাজার স্থল বন্দর যেখান থেকে প্রতি নিয়ত বিশাল পরিমাণ পণ্য আমদানি রপ্তানি পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি নাগরিকদের বৃহৎ একটি অংশ কৃষি কাজের সাথেও সংযুক্ত। তাছাড়া প্রায় অধিকাংশ পরিবারেই প্রবাসী সদস্য থাকায় দেশের রেমিট্যান্স অর্জন করে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সব মিলিয়ে গ্রাম ও শহরের মিশেলে গড়ে উঠেছে যুগোপযোগী উন্নত একটি জনপদ।

স্বাস্থ্য

কোতয়ালী থানা অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে রয়েছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল সহ ৩টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র, ১৪টি ক্লিনিক এবং বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল। তাছাড়া গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে রয়েছে উপজেলা প্রানীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

দর্শনীয় স্থানঃ

অতীতে জমিদার অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এখনও বেশকিছু প্রাচীন নিদর্শন লক্ষ্য করা যায় এ থানা অঞ্চলে। এখানেই রয়েছে প্রাচীন ত্রিপুরার মহারাজা ধর্মমাণিক্যের সময়কালে নির্মিত কৃত্তিম জলাশয় ধর্মসাগরদীঘি। প্রায় ৫৫০ বছর আগে নির্মিত এ দীঘিটিকেই কুমিল্লা শহরের কেন্দ্র বলা যায়। ধর্মসাগরপাড়েই রয়েছে ত্রিপুরা রাজবংশের নির্মিত বিশ্রামগার রাণীর কুঠি। তাছাড়া, কোটবাড়িতে অবস্থিত রয়েছে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আনন্দ বিহার যা ময়নামতীতে আবিষ্কৃত সর্ব প্রাচীন সৌধমালা হিসেবেও পরিচিত। রয়েছে বীরচন্দ্র গনপাঠাগার সহ বেশ কিছু বিনোদন কেন্দ্র ও নজরুল স্মৃতি রক্ষা পরিষদ। এসব দর্শনীয় স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো নিজ চোখে দেখতে প্রায়শই দূরদুরান্ত থেকে আসেন নানা পর্যটক। যান না খালিহাতেও, নিয়ে যান কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী মাতৃভান্ডারের রসমালাই। কুমিল্লার মনোহরপুরেই রয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন দোকান মাতৃ ভান্ডার। ১৯৩০ সালে প্রতিষ্টিত এ দোকানটিই রসমালাই কে চিনিয়েছে পুরো পৃথিবীতে, প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের। দেশ স্বাধীনের পর মাতৃভান্ডারের রসমালাই দিয়েই আপ্যায়ন করা হতো বঙ্গভবনের অতিথিদের।

কৃতিসন্তানঃ

কোতয়ালী মডেল থানা অঞ্চলেই জন্মগ্রহন করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেববর্মণ। চর্থায় রয়েছে তার স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ি সহ আরও বেশকিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। জানা যায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শচীন দেবের এ বাড়িটিতে একবার অতিথি হয়ে এসেছিলেন। এছাড়াও মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য, প্রখ্যাত আইনজীবী অখিল চন্দ্র ও সমাজসেবক দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য সহ বহু বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের জন্মস্থানও এ অঞ্চলে।

প্রেসক্লাব

কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা এলাকায় রয়েছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন কুমিল্লা প্রেস ক্লাব। রয়েছে দৈনিক রূপসী বাংলা,  দৈনিক আমাদের কুমিল্লা, দৈনিক মুক্তকন্ঠ, কুমিল্লার বার্তা সহ বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।