ritu
একমাত্র ছোট ভাইকে হারিয়ে কষ্টে কাতর হয়েছে আছেন ফুটবলার রিতু পর্ণা চাকমা। শোকহত রিতু দিলেন ভাইয়ের মৃত্যু বর্ণা। ফেসবুকে তিনি লিখেন-
আমি সবসময় খুব দ্রুত প্রিয় জিনিসগুলো হারিয়ে ফেলি। গত ২৬জুন মালেশিয়া সাথে খেলার পরে রুমে এসে বলেছিলাম ভাই তুই কি খেলা দেখছিস? ভাই বললো হ্যাঁ দেখছি ভালো খেলছে বাংলাদেশ দূর্ভাগ্য গোল পায়নি বাংলাদেশ, পরে বলে (সিজি) বাড়িতে আসবে না ছুটি দেবে না..? আমি বলছিলাম জানি না তো ছুটি দেবে কিনা কিছু বলেনি,, ভোটারের জন্য কাগজপত্রগুলো সাথে নিয়ে আনিস। বলে,, আমিও জমা দিইনি কাজপত্র। তুই এলে একসাথে জমা দেবো একসাথে ভোটার হবো কতই না আশা ছিল। ২৮জুন রাতে কল দিয়ে বলি ভাই আমাদের ছুটি দিয়েছে আমি ২৯জুন সকাল ৭.৪৫টায় গাড়িতে উঠবো। অন্যান্য দিনে ছুটির কথা শুনে আমার মন খুশিতে ভরে উঠতো। কিন্তু এবারে ছুটির কথা শুনে মনটা চটপট করতেছিল কি জানি একটা মনের ভিতর শূন্য এমনটা অনুভূতি ছিল। পরে গাড়িতে উঠে মাকে কল দিয়ে বলি মা আমি গাড়িতে উঠছি তুমি কই মা বলে আমি বাজারে তোর কিছু প্রিয় খাবার নিতে আসছি। মায়ের সাথে কথা শেষ হলে ভাই কল দিয়ে বলে (সিজি) আসতেছিস আমি বললাম হুম ,, ও আই বলে ভাই ফোনটা কেটে দেয়। এটাই ছিল ভাইয়ের সাথে শেষ কথা। গাড়িতে উঠে মনটা আমার কেমন জানি একাকী লাগছিল । গাড়িতে উঠে সবাইকে জানালাম বাসায় আসছি আমি। আমি বাসায় যাবো বলে সবাই খুব খুশি ছিল বিশেষ করে মা ভাই দিদিরা । আমি কোনো জার্নি করলে মা একটু পরপরই কল দিয়ে বলতো (সিজি)কই এখন কোন জায়গায়.. সেদিন একবার করে মা কল দেয় তখন আমি কুমিল্লায় কাছাকাছি ছিলাম তখন১০.৪৫ টা হবে। পরে গাড়িতেই আমি ঘুমায় পরি।১.৪৩সময় ফোন খুলে দেখি জেঠু কল দিয়েছে৷ হঠাৎ করে উনার কল দেখে বুকটা চমকে উঠল,,বলে কই আমি কোন জায়গায় বাসায় আসছি কি না আর কতখানি লাগবে আমার বাসা থেকে আমাকে কল দিয়েছে কিনা।
পরে ভাবলাম মা আমাকে কল দিচ্ছে না কেন, কি ব্যপার পরে আমি মাকে কল দিই মা কল রিসিভ করে না। দিদিরে কল দিই দিদিও রিসিভ করে না কাকী রিসিভ করতেছে বারবার কাকী বলে তোর মা একটু কাজে গেছে ফোনটা রেখে গেছে। পরে মেজো দিদিরে কল দিই রিসিভ করে কান্না কন্ঠস্বরে বলে তুই কই আমি কুমিল্লা ফেলে এসেছি বলে,, ও। বাসার কাছাকাছি আসলে কল দিস তোকে কাকি নিতে আসবে। ভাবি কি ব্যপার দিদি কান্না কন্ঠস্বরে কথা বললো কেন জিজ্ঞেস করলাম দিদি কি হয়েছে দিদি বলে কিছু হয়নি। ভাবলাম আমাকে তো নিতে আসবে ভাই কাকি কেন.? দিদি বলে কিছু হয়নি অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর বললো ১২.০০ সময় তোর ভাই কারেন্টে শখ খাইছে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে । একটু আগের থেকে ভালো হয়ছে একটুপর বাসায় নিয়ে আসবে। স্বাভাবিকভাবে নিলাম ব্যপারটা। পরে কেমন জানি আবার মনটা চটপট করতেছে কি যেন নেই নেই অনুভূতি হচ্ছে। পরে তহুরাকে কল দিয়ে বললাম তহুরা দিদিকে কল দিয়ে দেখোতো কি বলে এসব এটা কি সত্যি । আমি বারবার মা আর সেজো দিদি ভাইকে কল দিচ্ছি বারবারই কাকি রিসিভ করতেছে ব্যপারটা কেমন জানে লাগলো যতই বারই কল দিচ্ছিলাম ততো বারই কাকি রিসিভ করতেছে মা আর সেজো দিদির কথা জিজ্ঞেস করলেই একটা সচলনা দিয়ে রেখে দিচ্ছিলো কলটা। তহুরাকে বললাম আমার বাসায় কি হয়ছে জিজ্ঞেস করো তো আমি কল দিলে কাকি কেন রিসিভ করে। তহুরাকে দিদি বলেছিল পার্বন আর নেই। কিন্তু তহুরা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলছিল ভাই সুস্থ আছে হাসপাতাল থেকে একটুপরে বাসায় নিয়ে যাবে। আমার সন্দেহ জাগলো কিছু । পরে আমি ভাবলাম যেহেতু ভাই হাসপাতালে আছে বাসায় নিয়ে যাবে আমিও হাসপাতালে যাবো একসাথে বাসায় ফিরবো। হাসপাতালে গিয়ে শুনি একমাত্র কলিজার ভাইটা আমার আর দুনিয়াতে নেই। যখনই কথাটা শুনি মনে হলো আকাশটা যেন আমার মাথার উপরে ভেঙে পরলো। চোখের সামনে ভাইয়ের লাশ আর মায়ের কান্না দেখে দুনিয়াটাই পুরা অন্ধকার মনে হলো। খনিকের মধ্যে কিভাবে এসব হলো।কখনো ভাবিনি ভাইয়ের জীবন্ত লাশ দেখতে পাবো এভাবে ভেবেছিলাম ভাই সুস্থ হয়ে দুজনে একসাথে বাড়ি ফিরবো কিন্তু সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেনি সবাইকে কাদিয়ে মায়ের বুক খালি করে চলে গেল না ফেরা দেশে। একটা মাত্র আদরের ছোট ভাই আমাদের কতই না আশা ভরসা ছিল ওর প্রতি।
ভাই তুই যেখানেই থাকিস না কেন তুই সবসময় আমার প্রতিটা মুহূর্তে অন্তরে থাকবি । আমার মনে হচ্ছে না তুই যে নেই আমাদের মাঝে। মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই। মাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না,।ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি আজ তোকে হারালাম মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে ভাই । তোর এর অকাল মৃত্যু আত্মার শান্তি ও সৎগতি কামনা করছি।
আমার ভাইয়ের জন্য সবাই আর্শিবাদও দোয়া করবেন

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।