Faridpur@2x copy
পাখির কলতানে মুখর শাই শাই শব্দে বয়ে চলা বাংলার কীতিনাশা পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাড়ের সমতল ভুমি ও ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে বড় থানা অঞ্চল, ফরিদপুর কোতয়ালি থানা।দেশের প্রশাসনিক অঞ্চল সমুহের মধ্যে একটি প্রাচীন জনপদ এই কোতয়ালী।আজ থেকে প্রায় ৭ শত বছর আগে যখন বিখ্যাত সাধক হযরত শেখ শাহ ফরিদ এখানে অবস্থান করেছিলেন তখনও এই জনপদটি ছিলো মানুষের আবাসস্থল। ধারণা করা হয় তারও বহুকাল আগে থেকেই এই জনপদটি মানুষের বসবাস উপযোগি হিসেবে বিবেচিত ছিলো। তবে ফরিপুর নাম করণের আগে এ অঞ্চলের নাম ছিলো ফতোয়াবাদ। পরবর্তীতে প্রখ্যাত সুফি সাধক শাহ শেখ ফরিদুদ্দিনের নামানুসারেই ফতোয়াবাদ থেকে ফরিদপুর নাম করণ করা হয়।

সমতল ভুমি ফরিদপুর

১৯৯৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অঞ্চলের গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা কোতয়ীলি থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রায় ১০০ বছর পর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য ১৮৮৪ সালের ১লা ডিসেম্বর ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কোতয়ালি থানা অঞ্চলটি ফরিদপুর সদর উপজেলা নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
উল্লেখ, ফরিদপুর পৌরসভার স্বীকৃতি লাভ করেছিলো ১৮৬৯ সালে। উপজেলা শহরের মধ্যভাগ ও পৌরভার দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদীটি অঞ্চলের প্রকৃতিকে এখনো জিইয়ে রেখেছে, যদিও বর্তমানে নদীর সেই পুরোনো যৌলুশ আর দেখা যায় না। তবুও বলা যায় কুমার নদীটি ফরিদপুর অঞ্চলের প্রাণকে এখনো সতেজ রাখছে। খড়া মৌসুমে, স্থানীয় খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়, একেবারেই পানি শুন্য হয়ে পড়ে। তখন অঞ্চেলের নলকূপগুলোতেও খড়ার প্রখরতা দেখা দেয়। কৃষকদের ফসলের মাঠ তখন পানির জন্য হাহাকার করে। একদিকে প্রখর রোদ অন্য দিকে খরতা, যেন ক্ষেত-খামারগুলো মরুভূমিতে পরিণত হয়। ঠিক এই সময়গুলোতে কুমার নদীর মহিমা বৃদ্ধি পায় স্থানীয়দের কাছে। তাই বলা যায়, নদী দখলমুক্তকরণ এখন সময়ের দাবি।
৪০৭.০২ বর্গ কি.মি আয়তন বিশিষ্ঠ বৃহত এ থানা নগরীতে বাস করছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। বিস্তৃর্ণ এ ভূ-খন্ডটির শহর ও গ্রাম সবুজ বৃক্ষের এক বিশাল অরণ্যভূমি। মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের ফরিদপুর-রাজবাড়ি গোলচত্তর থেকে 3.8 কি.মি. ফরিদপুর মহাসড়কটি শহরের হাজরা তলা থেকে মোড় নিয়ে কুমার নদী পাড় হয়ে আলীপুরে গিয়ে আঞ্চলিক সড়কে পরিবর্তিত হয়েছে। ফরিদপুর সিআইডি অফিস সংলগ্ন ফরিদপুর মহাসড়কটিকে ক্রস করে শহরের উত্তর প্রান্ত দিয়ে চলমান রয়েছে ফরিদপুর রেল সড়ক। জেলা শিক্ষা ভবনের পাশেই রয়েছে একটি রেল স্টেশন। রেল স্টেশনের দক্ষিণে মহাসড়কের কোল ঘেষে অবস্থিত পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও সড়কের বিপরীতে অবস্থিত ফরিদপুর সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জজ কোর্ট ও পাশে রয়েছে শেখ জামাল স্টেডিয়াম। পৌরনগরের পূর্ব-দক্ষিনে রয়েছে, জেলার একমাত্র দূর্ণীতি দমন কমিশন ভবন। তার পশ্চিমে খানিক দুরে রয়েছে আঞ্চলিক পাস্পোর্ট অফিস। পৌরনগরের উপকণ্ঠে চকবাজার অঞ্চেলে রয়েছে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা ভবন।  মূলত মহাসড়কের দুইপাশকে কেন্দ্র করেই ফরিদপুর শহর অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। গ্রাম-পল্লীগুলোও গড়ে উঠেছে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠের বুক চিরে বয়ে চলা আকা-বাকা বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের কোল ঘেষে। এখানকার চাষীরা বোরো মৌসুমে ধান চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করে।
এ উপজেলার মোট জমিতে এবার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধান ধান হয়েছে। অন্যান্য বারের তুলনায় অধীক ফলন না হলেও কোন কোমতি হয়নি ফলনের। তাছাড়া, পাট, গম, আলু, পেয়াজ সহ মৌসুমী সবজি চাষ করে ফরিদপুরের কৃষকদের বছর শেষ হয়। অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জীবন ধরণ একই রকম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বা ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানার উপর নির্ভর করে তাদের বছর শেষ হয় কখনো হাসিতে কখনো কান্নায়। বলা হয় ফরিদপুর শহরের নগর উন্নয়ন হয়েছে কখনও শম্বুক গতিতে, কখনও কিছুটা ত্বরিত গতিতে, আবার কখনও নানা কারণে এর উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।
পদ্মা সেতুর উদ্ভোধন এর মাধম্যে ফরিদপুর অঞ্চলের শিল্প বাণিজ্যে যে আমুল পরিবর্তন আসবে তা উপজেলার মানুষের শত বছরের প্রত্যাশিত স্বপ্ন। ধারণা করা হচ্ছে খুব শিঘ্রই ফরিদপুর উপজেলা হবে জেলার অন্যতম ব্যবসায়িক নগরী। বর্তমানে উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে ব্যপক উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়। অঞ্চলের শিক্ষার হার প্রায় ৮০ শতাংশে উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন ইন্সটিটিউ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বর্তমানে কিছু কারিগরি প্রতিষ্ঠানের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি সরকারি টিচিার্চ ট্রেনিং কলেজ। রয়েছে একটি সরকারি হাসপাতালসহ প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন বিভাগীয় চিকি’সা কেন্দ্র।  শিক্ষা-সাহিত্যে ফরিদপুরের নাম ছড়িয়ে আছে বাংলার কোটি মানুষের হৃদয় জুড়ে।এ উপজেলার মাটিতেই শায়িত আছেন পল্লী কবি নামে খাত কবি জসিম উদ্দিন। কবির বাড়ীটি স্মৃতির পাহাদার হয়ে দাড়িয়ে আছে উপজেলার আম্বিকাপুর রেলষ্টশনের উত্তরে কুমার নদীর দক্ষিণে গোবিন্দপুর গ্রামে। উপজেলা সদর হতে ৮ কি.মি.  দুরে কানাইপুর গ্রামে দাড়িয়ে আছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষি বহনকারী শিকদার বাড়ি। শিকদার ভবতারিনীর প্রতিষ্ঠিত এ বাড়িটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি বড় পুরাকৃর্তি স্থান। রয়েছে, বিসমিল্লাহ শাহ মাজার, গেরদা ফলক, শতবর্ষী হিজল গাছ ও ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল শিশুপার্ক। তবে কোতয়ালী থানা অঞ্চলাধীন সবচেয়ে বড় আকর্ষণ স্থান হয়ে উঠেছে  আফসানা মন্জিল।
প্রকৃতির সমারোহে, স্নিগ্ধ পরিবেশেেএক অন্যরুপে নির্মিত এ বাড়িটি উপজেলার বদরপুর গ্রামে অবস্থিত রয়েছে। তাছাড়াও এ উপজেলাতেই রয়েছে দেশের একমাত্র নদী গবেষনা ইনষ্টিটিউট। নানা গুণে বিশেষায়িত এ অঞ্চলের আকাশ কখনো কখনো কালো মেঘে ঢেকে যায়, এখানে বসবাসরত মানুষের বিবিধ- ডাঙ্গা, খুন, ধর্ষণ, মামলা-মকদ্দমা ইত্যাদি কারণে। আবার কখনো প্রশংসায় ভাসতে থাকে কাগজের পাতায়।
তেমনি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃতিসন্তান বেগম শামসুন্নাহার বিউটির পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত হওয়ার এ সংবাদ উপজেলাবাসিকে সফলতার অনুপ্রেরণা যোগায়।
দৈনিক ফরিদপুর, দৈনিক কুমার, সাপ্তাহিক গণমন, ফরিদপুর কণ্ঠ ইত্যাদি পত্রিকাগুলো ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা অঞ্চলাধীন মানুষের নানান সফলতা, ঘটনা-অঘটন নিয়মিতই প্রকাশ পাচ্ছে।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।