Jorarganj Thana

চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত ঐতিহাসিক মীরসরাই উপজেলার একটি বিশেষ প্রশাসনিক থানা অঞ্চলের নাম জোরারগঞ্জ। এ অঞ্চলটি প্রায় এক শতাব্দী ধরে মিরশরাই থানার আওতায় পরিচালিত হতো। স্বাধীনতা পরবর্তীতে জোরারগঞ্জ এলাকায় মানুষের বসতি ঘন হতে থাকে এবং তাদের প্রয়োজনে গড়ে উঠতে থাকে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান। এরপর মিরসরাই থানা উপজেলা মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করলে জোরারগঞ্জ নামটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরে ২০০০ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় দপ্তরের তৎকালীন মন্ত্রী জনাব জিল্লুর রহমান মিরসরাইয়ের হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ ও ধুম এই তিনটি ইউনিয়ন এর জামালপুর, পূর্ব হিঙ্গুলী, পশ্চিম হিঙ্গুলী, আজমনগর, সোনাপাহাড়, ইমামপুর ও ধুম-এই সাতটি মৌজার সর্ব মোট ২.১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে বারৈয়ারহাট পৌরসভার প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে ঘোষনা করে। যা বাংলাদেশের ২১৫ তম পৌরসভা হিসেবে স্থান দখল করে। এরই ধারাবাহিকতায় অঞ্চলবাসির নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুর্ণবিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির (নিকা) সভায় মীরসরাই থানাকে বিভক্ত করে জোরারগঞ্জ নামে একটি নতুন থানার অনুমোদন দেয়া হয়। এবং একই বছর ১৯ মে, মিরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট, ২নং হিঙ্গুলী, ৩নং জোরারগঞ্জ, ৪নং ধুম, ৫নং ওসমানপুর, ৬নং ইছাখালী, ৭নং কাটাছড়া, ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়ন ও বারৈয়ারহাট পৌরসভা নিয়ে জোরারগঞ্জ থানার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।

 

 

চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে ৭৩ কিলোমিটার উত্তরে মীরসরাই উপজেলার উত্তরাংশে ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এলাকা নিয়ে গঠিত জোরারগঞ্জ থানা এলাকার মোট আয়তন ৩৩৪.৫৬ বর্গ কি.মি.। উপজেলার সর্ববৃত্তম ইউনিয়ন তথা জোরারগঞ্জ থানার সবচেয়ে বড় ইউনিয়নটি হলো করেরহাট ইউনিয়ন। যার মোট আয়তন ১৫৮.৪১ বর্গ কিলোমিটার। এবং সর্বনিম্ন ইউনিয়নটি হলো কাটাছড়া ইউনিয়ন যার আয়তন মাত্র ১৩.৯৫ বর্গ কিলোমিটার। সম্পূর্ণ থানা অঞ্চলটি ৪৯টি মৌজা ও ১১৪টি প্রধান গ্রামের সমষ্ঠিত ভুমি। এ ভুমিতে বসবাস করছে ৫০ হাজারের অধিক পরিবারে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। তাদের সন্তানদের শিক্ষার আলোতে গড়ে তুলতে জোরারগঞ্জ থানায় রয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে ১৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ ও জোরারগঞ্জ মহিলা কলেজ নামে ২টি মহাবিদ্যালয়।  শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ও খেলাধুলা নিয়ে জোরারগঞ্জ থানার প্রতিটি ইউনিয়ন তার আপন গতিতে চলমান।

চারদিকে সবুজ ফসলী মাঠ এবং বড় বড় পুকুর বেষ্টিত জোরারগঞ্জের প্রধান অর্থনীতি কৃষিকেই বলা যায়। ফেনি ও ইছাখালী নদী বেষ্ঠিত এ থানা অঞ্চলটি কৃষির জন্য বেশ উর্বর। এছাড়াও এখানে কয়েক শতাধিক মাছের প্রকল্প থাকার কারণে বছরে অনেক মুনাফা অর্জন করে জোরারগঞ্জ থানা অঞ্চলের মানুষ। তবে আশার বিষয় হলো, ইছাখালী ইউনিয়নের পীরের চরে মোট ৩০০০০ একর জমিতে ইতোমধ্যে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন নির্মাণ করা হয়েছে যা দেশের সর্ববৃহত শিল্পনগর মিরসরাই ইকোনমিক জোন “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর” নামে পরিচিত। এ প্রকল্পটির সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে এ এলাকার লাখ লাখ মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যা জোরারগঞ্জ থানাবাসির জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।

ইতিহাস ঐতিহ্যে জোরারগঞ্জ নিয়ে খুব বেশি চর্চা নেই আগন্তকদের মাঝে। তবে জোরারগঞ্জের পর্যটন এলাকাগুলো আগন্তকদের সহজে কাছে টানে। তারমধ্যে একটি হলো দূর্গাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র যা মহামায়া লেক নামে পরিচিত। উক্ত মহামায়া লেকে বিশেষ দিনসহ সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

এছাড়া ইছাখালী ইউনিয়নে রয়েছে মুহুরী সেচ প্রকল্প। এটি দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তর সেচ প্রকল্প যা বৃহত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাই ও ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলা সীমান্তে অবস্থিত। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ও এর পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক অনাবিল নৈসর্গিক শোভা যে কোনো পর্যটককে আকর্ষিত করতে পারে।

অন্যদিকে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের পশ্চিমে দেখা মিলবে পাঁচ শতাধিক বছরের প্রাচীন ছুটি খাঁ জামে মসজিদ। অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্যতম এই প্রাচীন মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে প্রতি শুক্রবার জুমার দিন এবং দুই ঈদের দিন এখানে দেশ বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে। যা জোরারগঞ্জকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করেছে।জোরারগঞ্জ সবুজ প্রকৃতির বিশাল অভয়ারণ্য। ১নং ইউনয়নের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সবুজ বনায়ন। যা পর্যটকদের মনে অন্যরকম প্রশান্তি যোগায়।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।