Kabirhat

সুশোভিত প্রান্তর, পরিপূর্ণ জলাধার ও ফসলের মাঠ আর তারই মাঝে উকি দিচ্ছে ক্ষুদ্র একটি নগরী… নাম…কবিরহাট। এ অঞ্চলটি যেন অপরুপ গ্রামবাংলা নিয়ে লেখা কোন বিখ্যাত কবিতার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। ধারনা করা হয়, এখানেই জন্মগ্রহন করেছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ্‌। ১৯ শতকে এ এলাকার জমিদার ছিলেন কবির পাটোয়ারী। তার মৃত্যুর পর এখানে তার নামানুসারে কবির পাটোয়ারী দিঘি ও কবিরহাট নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই কবিরহাট বাজার নামের সুত্র ধরেই এখানে একের পর এক প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে জনবসতি, স্কুল, কলেজ সহ বহু প্রতিষ্ঠান। সবশেষ ২০০৬ সালে প্রশাসনিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এ অঞ্চলটিকে নোয়াখালী সদর থেকে আলাদা করে কবিরহাট নামে পৃথক একটি উপজেলা গঠন করা হয় এবং একই সাথে সুধারাম মডেল থানা থেকে আলাদা হয়ে কবিরহাট একটি স্বতন্ত্র থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

 

অবস্থানঃ

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৭৭ কিলোমিটার দক্ষিন পূর্বে এবং নোয়াখালী সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বাংশে একটি নবগঠিত থানা অঞ্চল কবিরহাট। এর পূর্ব দিকে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে নোয়াখালী সদর উপজেলা, উত্তরে বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলা এবং দক্ষিনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। ১৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ থানা অঞ্চলটিতে ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী বসবাস করেন প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ। এটি ১টি পৌরসভা ও মোট ৭ টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল নরোত্তমপুর, সুন্দলপুর, ধানসিঁড়ি, ঘোষবাগ, চাপরাশিরহাট, ধানশালিক ও বাটইয়া।

মুক্তিযুদ্ধঃ

১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ অঞ্চলে রচিত হয়েছে এক বীরত্বগাথা ইতিহাস। সেসময় কবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকাররা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করলে তাদের সহায়তায় পাক হানাদারেরা বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণহত্যা চালায়। তাদেরকে প্রতিহত করতে ১৭ই অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা এক হয়ে রাজাকার ও পাকবাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অতঃপর তাল মোহাম্মদহাট যুদ্ধ, চাপরাশির হাট যুদ্ধ এবং কোয়ারিয়ার টেক যুদ্ধসহ বেশ কিছু সম্মুখযুদ্ধে শত্রু মুক্ত হয় কবিরহাট।

শিক্ষাঃ
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই এ অঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ অঞ্চলের শিক্ষার হার ছাড়িয়েছে ৬৪ শতাংশে। কোমলমতী শিক্ষার্থীদের পাঠদানে রয়েছে ৩টি কলেজ, ৩৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কিছু মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীরা যেন বিপথে না যায় সেদিক লক্ষ্য রেখে কবিরহাট থানা পুলিশ প্রায়শই বিভিন্ন সচেতনতা মুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

যোগাযোগঃ

সারাদেশে চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে দৃশমান উন্নয়ন। বসুরহাট – কবিরহাট সড়ক, সোনাপুর – কবিরহাট সড়ক ও কবিরহাট – চাপরাশিরহাট সড়কের কল্যাণে দূর-দূরান্তে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে থানাবাসী। এছাড়া অভ্যন্তরীন যোগাযোগে নির্মিত হয়েছে ১৫২ কিলোমিটার পাকা রাস্তাসহ আঞ্চলিক সড়কপথ ও পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভার্ট।

কবিরহাট থানা অঞ্চলটি তুলনামূলক কম অপরাধ প্রবন থানা হিসেবে চিহ্নিত হলেও বেশ কিছু অসাধু চক্র চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মত ঘৃণিত অপরাধ সংগঠিত করে আসছে।

অর্থনীতিঃ

থানা পুলিশের নিবির তত্বাবধানে নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করছে কবিরহাটবাসী। বিস্তৃত কৃষি জমি ও জলাশয় থাকায় এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি পেশার সাথে সংযুক্ত রয়েছে। ফলে উৎপাদিত হচ্ছে বিপুল পরিমান ফলমূল ও অর্থকরী ফসল। পাশাপাশি ব্যবসা, চাকরি এবং পরিবহন ও সেবা খাতে নিয়োজিত থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কবীরহাটবাসী।

স্বাস্থ্য

তাদের স্বাস্থসেবা নিশ্চিতে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।  রয়েছে ৯টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৭টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র সহ ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক। তাছাড়া পশুপাখির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নির্মিত হয়েছে উপজেলা প্রানিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

দর্শনীয় স্থানঃ

কবিরহাট সুপ্রাচীন ইতিহাসে লালিত একটি জনপদ। এখানেই রয়েছে প্রায় ৩০০ বছর আগে নির্মিত মোঘল আমলের মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য নিদর্শন রমজান মিয়া জামে মসজিদ। যার অসাধারন নির্মাণ শৈলী মুগ্ধ করে আগত মুসল্লিদের। রয়েছে কবির পাটোয়ারী দীঘি ও জমিদারদের স্মৃতি বিজড়িত সুবিশাল খেড়ির দিঘি। এছাড়া অঞ্চলটির বৃহৎ একটি অংশ চরাঞ্চলবেষ্টিত হওয়ায় এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর দুরন্ত থেকে ভীর করে বহু ভ্রমণপিপাসু। আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে সর্বদা সোচ্চার অবস্থানে থাকে কবিরহাট থানা পুলিশ।

নারী প্রবাসীঃ

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।