ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নড়াইলের লোহাগড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট করেছেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মাশরাফী বিন মোর্তুজা।
আজ (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় দেওয়া পোস্টে তিনি এই হামলার ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পোস্টে মাশরাফী বলেন, ‘নড়াইলে যাদের কাছে রাজনীতি পেশা, মাশরাফি তাদের কাছে পেশা। একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন।’
মাশরাফি আরও লেখেন, ‘নড়াইলে প্রথম আক্রমণের কথা হয়তো সবাই ভুলে গেছে, তাই মনে করিয়ে দিচ্ছি। প্রথম ঝামেলা করল তারা মাওলানা মামুনুলকে নিয়ে। তাকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিল, তখন ওয়াজ করার জন্য তাকে নড়াইলে আনা হলো। কথা হলো, যখন ওয়াজ মাহফিল হয়, সেটার পারমিশন দিয়ে থাকেন ডিসি, নিরাপত্তার ব্যাপার দেখেন এসপি। এখানে এমপিদের কোনো কাজই নাই। কিন্তু ডিসি বা এসপি থেকে আমাকে বিন্দুমাত্র না জানিয়ে ওয়াজ মাহফিল দেওয়া হলো নোয়াগ্রামে, যেখানে আমার শশুর বাড়ি। তাকে আগেই বলা হলো যে ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি নেওয়া আছে, আপনি চলে আসেন। অথচ কালনা ঘাট পর্যন্ত আনার পর তবেই কেবল ডিসিকে জানাল, এসপিকে জানাল। ঘাট থেকে যখন তাকে বলা হলো যে, ‘আপনার চিঠি কোথায়?’ সে দিতে পারল না। মাহফিল কর্তৃপক্ষ তখন আমাকে ফোন করে বলল, ‘আপনি সমস্যা ঠিক করেন।’ কথা হলো, তখন এই সমস্যার সমাধান করা কিভাবে সম্ভব? এটা তো পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া, যা আরও সাত দিন আগে থেকে করতে হয়!
তখন ওই লোকগুলো বলা শুরু করে দিল, আমি নাকি ওয়াজ মাহফিল হতে দিচ্ছি না। পুরো খেলাটা খেলেছে এমন ভাবে, তাকে আমার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় এনে সরকারের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, আমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছি না। আর যদি না আসতে পারে, তাহলে প্রচার করা হবে যে, মাশরাফি ওয়াজ করতে দেয় না। দুই দিক থেকেই তাদের জয়। আর দুই পক্ষের কাছেই আমাকে খারাপ বানাবে।
‘তবে যাই হোক, আল্লাহ মালিক, সত্য আর চাপা থাকেনি। সবাই কম-বেশি জেনেছে সত্যিটা, আর যারা জানে না,তারা ভুল বুঝেই আছে।এবার উল্টো খেলা খেলল তারা। সনাতন ধর্মাবলম্বি মানুষদের উপর আক্রমণ করে তাদেরকে বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া।’
নড়াইলের মির্জাপুর তার সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার পরেও সেখানকার শিক্ষক অপমানের ঘটনায় তাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে মাশরাফী বলেন, ‘এমনকি, কিছুদিন আগে কালিয়ার মির্জাপুরে সম্মানিত একজন শিক্ষককে অপমানের ঘটনায়ও আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, অথচ ওটা আমার আসনের ভেতর নয়।’’
পোস্টের শেষদিকে আক্রমণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যাক, আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব। কিন্তু আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।
আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাদের কাছে পেশা, তাদের কাছে আমি এখন নেশা।’
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।