images 17 5
 যানজট নিরাসন ও নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনতে রাজধানীতে গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক অবকাঠামো। উন্নত বিশ্বের শহরগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে একাধিক মেগা প্রকল্প। যানজট নিরাসন আর নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে এতো মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া, সেই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কতটুকুই-বা ভোগান্তি কমবে নাগরিক জীবনে, স্বস্তি দিবে ধোঁয়া-ধুলায় অস্বস্তিতে ভোগা নাগরিকের যাপিত জীবনে— তা তুলে ধরা হলো পজেটিভ থিঙ্কের বিডি’র আজকের প্রতিবেদনে।
যানজট নিরাসনে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ করে গত এক দশকে রাজধানীতে সাতটি ফ্লাইওভার তৈরি করা হলেও সেগুলো রাজধানীর যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারছে না। উল্টো ফ্লাইওভারের আশপাশের ইন্টারসেকশনের কারণে তৈরি করছে তীব্র যানজট। ফুটপাত, বৃত্তাকার নৌপথ, ফুটওভারব্রিজ, আন্ডারপাসসহ রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও গত কয়েক বছরে ব্যয় করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু কার্যতপক্ষে সেগুলোও যানজট নিরাসনে তেমন ভূমিতা রাখতে পারেনি বরং সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে তীব্রভাবে। রাজধানীর সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ত্রুটি-বিচ্যুতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ গত চার বছরে গড়ে তোলা দশটি ইউটার্ণ। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা ইউটার্নগুলো যানজট কমানোর বদলে উল্টো বাড়িয়ে দিয়েছে।

images 17 5

 

এসব প্রকল্পে যানজট নিরাসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি, প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু ও শেষ করতে না পারায় সুফল পায়নি সাধারণ মানুষ। উল্টো বেড়েছে জনদূর্ভোগ। গত কয়েক বছরে যানজট ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। তাই রাজধানীকে ঘিরে যানজট নিরাসনে সরকারের সবচেয়ে বড়ো মেগা প্রকল্প ছিলো মেট্রোরেল। ইতোমধ্যে উত্তরা দিয়া বাড়ি থেকে আগারগাঁও এলাকা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে এই মেট্রোরেলের। পুরোদমে চলছে বাকি অংশের কাজ ও স্টেশন নির্মানের কাজ। চলতি বছর বিজয় দিবসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা এই মেট্রোরেল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২২ সালে গণ পরিবহনে যুক্ত হবে স্বপ্নের এই মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩৭ মিনিট। ২০.১০ কিলোমিটারের এই পথে স্টেশন থাকবে মোট ষোলটি।

 

images 23

তবে এই মেট্রোরেল বাস্তবায়িত হলে কতটুকু স্বস্তি ফিরবে নগরজীবনে। যানজটই বা কমবে কতটা— তার অনুমান নিতে আমরা চোখ বুলাতে পারি পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানের দিকে। অনেক আগে থেকেই ভারতের ১০টি শহরে চালু রয়েছে মেট্রোরেল। যত্রতত্র স্টেশন ও কয়েক লাখ যাত্রী উঠা-নামার জন্য একসাথে একই জায়গায় গাড়ি চলাচলের বিকল্প জায়গায় না রাখায় পরিববন খাতে জনগণের ভোগান্তি কিছুটা কমলেও যানজট কমার বদলে উল্টো বেড়েছে কয়েকগুন। জনদুর্ভোগ বেড়েছে শহরে। আপরদিকে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল শহর লাহোর। জনবহুল এই শহরে নাগরিকের জনজীবনে স্বস্তি আনতে পাকিস্তান সরকার ২০১৭ লাহোর মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু করেন; যেটি পাকিস্তানের একমাত্র মেট্রোরেল। ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে যাত্রা শুরু হয় এই মেট্রোরেলের। যথাযথ স্থানে স্টেশন নির্মাণ ও সড়কে শৃঙ্খলাবোধ থাকায় দেড় কোটি মানুষের বসবাসের জনবহুল এই শহরে যানজট অনেকাংশে কমে যায় প্রায় দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার যাত্রী প্রতিতিন চলাচলা করে এই মেট্রোরেলের মাধ্যমে।
তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ঠিক যে বাস্তবতা দেখা দিচ্ছে তাতে মেট্রোরেল নগরজীবনে স্বস্তির চাইতে ভোগান্তি বাড়াবে বলে অনেকাংশে আশংকা করা যাচ্ছে। একাধিক স্টেশনের সিঁড়ি নামানো হয়েছে ফুটপাতে। কয়েক লাখ যাত্রী উঠা-নামার জন্য রাখা হয়নি পর্যপ্ত জায়গা। আবার একের পর এক ফ্লাইওভার বানিয়ে ফুটপাত ছোট করে ফেলা হয়েছে। ফলে নগর জীবনে কতখানি স্বস্তি দিবে এই মেট্রোরেল তা নিয়ে রয়েছে আশংকা।
এছাড়াও চলতি বছর পহেলা ডিসেম্বর থেকে পরিক্ষামূলক চালু হবে বাস রোড ন্যাশনাইজেশন। এদিন কেরানিগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত চলবে ঢাকা নগর পরিবহন। প্রথম ধাপে ১২০টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করবে প্রকল্পটি। এছাড়াও বাস র্যাপিড ট্রানজিট গড়ে তোলা হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের পর্যন্ত। গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে আরো একটি বিআরটি রয়েছে পরিকল্পনায়। সমীক্ষার তথ্যনুসারে, এসব প্রকল্পগুলো ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার মোট যাত্রীর মাত্র ১৭ শতাংশ পরিবহনে সক্ষম হবে। এছাড়াও ঢাকাকে ঘিরে ২৫৮ কিলোমিটার পাতালরেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কতখানি স্বস্তি আসবে নগরজীবন তা হয়ত সময়ই বলে দিবে। এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তাবায়িত হলে যানজটমুক্ত নিরাপদ ঢাকা গড়ে উঠবে এটাই সকলের কাম্য।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।