2
পদ্মা, চন্দনা, গড়াই বিধৌত পলল উর্বর মৃত্তিকায় গঠিত একটি প্রাচীন বঙ্গ সমতট ভুক্ত জনপদের নাম পাংশা।উর্বর মৃত্তিকা যেমন পাংশাকে করেছে সুজলা সুফলা তেমনি এর প্রভাব রয়েছে মানুষের মন ও মননে। ঐতিহ্যগত ভাবে কৃষি নির্ভর এবং সহজ সরল জীবন যাপনে অভ্যস্ত পাংশা উপজেলার মানুষ অত্যন্ত অতিথি পরায়ন ও আমোদ প্রিয়। রাজবাড়ী জেলার বৃহত্তম উপজেলা পাংশা৷ ১৮৬৩ সালে পাংশা থানা প্রতিষ্ঠা লাভের মাধ্যমে এর কার্য্ক্রম শুরু হয় এবং ১৯৮৪ সালে উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
পাংশার নামকরণ নিয়ে দুটি আলাদা আলাদা মতবাদ থাকলেও অধিক গ্রহণযোগ্য মতবাদটি হলো পাঞ্জুশাহ নামক একজন ধর্ম প্রচারক সুদূর আরব থেকে এখানে পাচজন সঙ্গি সহ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন৷ তার ধারনা করা হয় পাঞ্জুশাহ এর নামটিই উচ্চারণ অপভ্রংশে পাংশা নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তবে এ অঞ্চলে প্রথম জনবসতি কবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস উল্লেখ না থাকলেও জানা যায়, পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া, মাগুরা, পাবনা অঞ্চলের অধিক সংখ্যক মানুষ এখানে অভিবাসিত হয়েছেন। অভিবাসিত জনগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও এখানকার মুল জনগোস্ঠীর এক অনিন্দ্য আনন্দ মিলনস্থল এই উপজেলা। এখানে সকলে মিলে মিশে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ । সকল সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ এক অন্যের ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে আন্তরিকতার সাথে অংশগ্রহন করে থাকেন।

পাংশা ইতিহাস সংস্কৃতি

সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে পাংশার অবদানও অনস্বীকার্য ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন ,কাজী আব্দুল ওদুদ, এয়াকুব আলী চৌধুরী ,রোকনুজ্জামান দাদাভাই, কাজী আনোয়ার হোসেন, প্রমুখ এদেশের সাহিত্যাঙ্গনকে করেছেন যেমন সমৃদ্ধ তেমনি সানজীদা খাতুন, ফাহমিদা খাতুন সঙ্গীতাঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধ। পাশাপাশি চিত্র বাংলা চলচ্চিত্রকেও আলোর গতি দেখিয়েছিল সমৃদ্ধ সম্মৃদ্ধ পাংশার প্রতিভাবান অভিনেত্রী কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর, শাবনুর। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ফ্রান্স সরকারের শেভালিয়র উপাধি প্রাপ্ত বিশ্বে দ্বিতীয় মূকাভিনয় শিল্পী পার্থ প্রতিম মজুমদার এর জন্মস্থানও এই পাংশা উপজেলা।
ছোট বড় তিনটি নদী বেষ্টিত নিবিড় শান্ত পরিবেশের এই উপজেলার মোট আয়োতন ২৫১.৩৭ বর্গ কিলোমিটার এবং বসবাস করছে সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এ উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা, ১০ টি ইউনিয়ন, ২৫৭টি মৌজা, ও ২৫৫টি গ্রাম। সমগ্র উপজেলা জুড়ে রয়েছে ১০টি কলেজ, ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৫টি মাদ্রাসা। যা এই উপজেলার শিক্ষা প্রসারে অবদান রেখে চলেছে। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত কৃষি। ধান,পাট, আখ ও পান উৎপাদন করেই প্রায় 60 ভাগ জীবিকা নির্বাহ করে। তাছাড়াও বর্তমানে দেখা মিলেছে নতুন নতুন বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের। যাদের সফলতা অঞ্চলটিকে সম্মৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। আর তারই দৈনন্দির সাক্ষ্য তুলে ধরছে এখানকার আঞ্চলিক কিছু গণমাধ্যম। তন্মধ্যে দৈনিক মাতৃকন্ঠ, পাংশা বার্তা, রাজবাড়ী সংবাদ, ও অনুসন্ধান অন্যতম।
অপরুপ সৌন্দর্যের এ জনপদের মানুষ সর্বদা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যেকে লালন করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই উপজেলাকে। তবে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে এ উপজেলায়। সদা শান্তি প্রিয় পাংশা উপজেলার মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ রয়েছে যারা সমাজের নানা অপরাধের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে। তাদের অনৈতিক কার্যক্রম বা অপরাধকে রুখতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে পাংশা মডেল থানায় নিয়োজিত একদল অকুতোভয় পুলিশ সদস্য। যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন পাংশা মডেল থানার অত্যান্ত কর্তব্যপরায়ন অভিভাবক একজন অফিসার ইনচার্জ।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।