HOSSENPUR
প্রাকৃতিক জলাভূমি, সবুজ অরণ্য, স্নিগ্ধ  বাতাস আর শান্তধারায় বহমান, ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বতীরের একটি প্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদের নাম হোসেনপুর। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. ও জেলা সদর হতে মাত্র ১৪ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত হোসেনপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন জনপদ। ১৭৮১ খ্রিঃ জেমস্ রেলেন অংকিত অবিভক্ত বাংলাদেশের ভৌগলিক মানচিত্রে কিশোরগঞ্জ জেলার যে ০৩টি জনপদের নাম উল্লেখ করে সীমানা চিহ্নিত করেছেন তার মধ্যে একটি জনপদের নাম হোসেনপুর।

হোসেনপুর এর অতীত ও বর্তমান

নয়নাভিরাম এ ভূ-খন্ডটি  ব্রহ্মপুত্র নদ ও নরসুন্দা নদ দ্বারা বেষ্টিত থাকায় প্রাচীনকালে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসিদ্ধ ছিল। বলা হয়, ততকালে পালতোলা বড় বড় নৌকা ও জাহাজ ভিড়ত হোসেনপুর অঞ্চলীয় উপকূলে।তখনকার সময় নদী পথে যাতায়ত অত্যান্ত সহজ ছিল বলে এ উপজেলার পিতলগঞ্জ গ্রামে, বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নীল চাষের জন্য নীল কুঠির স্থাপন করেছিল। সেসময় নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এ জনপদের প্রজারা বৃটিশদের সাথে বিদ্রোহ করেছিল। কালের সাক্ষ্যি হয়ে আজও এ জনপদে, সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত নীল কুঠির নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।
জানা যায় বর্তমান হোসেনপুর এলাকাটি ১৫শ শতাব্দীর পূর্বে দুল বাজার নামে পরিচিত ছিল। বাংলার তদানীন্তন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এ অঞ্চলের জন সাধারনের জীবন জীবিকা, সুখ- দুঃখ স্বচক্ষ্যে প্রত্যক্ষ করার জন্য তৎকালীন দুল বাজার নামক স্থানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। পরবর্তীতে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ্ এর নামানুসারেই দুল বাজার অঞ্চলটি হোসেনপুর নামে পরিচিতি লাভ করে।
গ্রাম বাংলার প্রসিদ্ধ গাজী কালু ও চম্পাবতি পুঁথি সাহিত্যের রচয়িতা সুনামধন্য পুঁথিকার ও সাহিত্যিক মরহুম আঃ রহিম মুন্সীর জন্মস্থান এ উপজেলারই গলাচিপা গ্রামে। ভাষা ও সংস্কৃতিতে হোসেনপুরের নাম বহুকাল পূর্ব হতেই সমৃদ্ধ রয়েছে।
আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর পূর্বে এ অঞ্চলের প্রভূত উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যে নিরাপত্তা বৃদ্ধিকল্পে, ১৯২২ সালে হোসেনপুরে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই হোসেনপুর অঞ্চলটি অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্যপকভাবে সম্মৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যায়।
কিন্তু ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে হোসেনপুর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৯৭১ সালে হোসেনপুর থানায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৩৯ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং এ অভিযানে প্রচুর গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হোসেনপুর থানা এলাকায় একটি সেতু বিস্ফোরণের সাহায্যে উড়িয়ে দেয় এবং রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করে রাইফেলসহ ১৪ জন রাজাকারকে বন্দি করে।স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৮৩ সালে হোসেনপুর থানা একটি মান উন্নিত থানা হিসেবে উপজেলার স্বীকৃতি লাভ করে। এবং ২০০৬ সালে ৫.৪৬ বর্গ কি.মি এলাকা নিয়ে হোসেনপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে হোসেনপুর উপজেলাটি ৯৮টি গ্রামে বিভক্ত ৭১টি মৌজায় মোট ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ১২১.২৯ বর্গ কি.মি. আয়তনের একটি জনপদ।
প্রখ্যাত মৎস্য বিজ্ঞানী আবুল কালাম মোহাম্মদ আমিনুল হক, মরহুম কবি আজহারুল ইসলাম, কবি ও পুঁথি সাহিত্যিক মরহুম আঃ রহিম মুন্সী ও জাতীয় ক্রীড়াবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ ছাত্তার বকুল এ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
ইতিহাসের সাক্ষ্যি কুড়িঘাট বধ্যভূমি, গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ী, শাসন, নিপিড়নে জর্জরিত বাঙ্গালীর দর্পন- ইংরেজ সাহেবের বাড়ী এখনো দাড়িয়ে আছে হোসেনপুরের চৌদার এলাকায়। রয়েছে জমিদার মানব বাবুর বাড়ি।
বিভিন্ন ঐতিহ্যর নিদের্শন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের  লীলাভূমি হোসেনপুর উপজেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ।তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ৪টি মহাবিদ্যালয়সহ মোট ১৪৫টি বিভিন্ন মাধ্যমের ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ সমীক্ষায় শিক্ষার মান ৪১.৮ শতাংশ দেখানো হলেও গত ১ দশকে হোসেনপুর উপজেলার শিক্ষার প্রভূত উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।
এ উপজেলায় প্রায় দুই লক্ষ মানুষের সুচিকিৎসা প্রদানে  রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক সহ বিভিন্ন বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। হোসেনপুর উপজেলার চলমান ঘটনা ও বিষয়বস্তু জনসাধারণের জন্য যুক্তিসঙ্গতভাবে তুলে ধরতে  রয়েছে একটি আঞ্চলিক গণমাধ্যম, সাপ্তাহিক হোসেনপুর বার্তা।
৩৬,৬৬৮ জন বেকার জনগোষ্টির বসবাস অঞ্চল হোসেনপুর উপজেলার সকল মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও সেবার ব্রত নিয়ে ২৪ ঘন্টা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন হোসেনপুর থানার একদল পুলিশ সদস্যসহ তাদের অভিভাবক থানার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একজন অফিসার ইনচার্জ। অফিসার ইনচার্জ জনাব শেখ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনগণের অংশিদারিত্বের  ভিত্তিতে সামাজিক শান্তি রক্ষা, অপরাধ চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধ, আইন লংঘনকারীকে বিচারের আওতায় আনা, জনগণকে সুরক্ষা, সাহায্য, সেবা প্রদান এবং আশস্তকরণ ইত্যাদি গুনাগুন বাংলাদেশ পুলিশ তথা হোসেনপুর থানা পুলিশের প্রধান বৈশিষ্ট।তবে হোসেনপুর অঞ্চলে সাধারণ কিছু অপরাধ চলমান রয়েছে।একটি সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় সাধন করে অপরাধীদের চিহ্নিত করা। হোসেনপুর থানা অঞ্চলকে অপরাধ মুক্ত তথা মাদক, জুয়া, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে অফিসার ইনচার্জ জনাব শেখ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বদ্ধ পরিকর। তার বর্তমান সফল কর্ম পরিচালনা আগামীর হোসেনপুরে উজ্জলতার প্রতিচ্ছবি বিনির্মাণে উপজেলাবাসীর প্রতি থাকছে জনতার পুলিশের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।