Pakunida
উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদ বিদৌত হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের অন্যতম পুরাকীর্তি স্থাপনা অঞ্চল আজকের পাকুন্দিয়া। এককালে এ অঞ্চলটি প্রভুত বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদের ধারে ভিনদেশী বণিক, সওদাগরগণের বাণিজ্য তরী রাজবাজবাদের সৈন্য সামন্ত এবং আমীর ওমরাহগণের পদচরনায় এ জনপদ ছিল মুখরিত। খ্রীষ্টিয় সপ্তক দশকে চৈনিক পরিব্রাজক ইউয়েন সাঙ্গ এর জীবন বৃত্তান্ত থেকে জানা যায় সমুদ্র থেকে নব উত্থিত এ ভূভাগ ছিল ঘনঅরণ্য বেষ্টিত। অরন্যবাসী পাহাড়ী জনগণ এসে এখানে বসতি স্থাপন করতে থাকেন।

ইতিহাসে পাকুন্দিয়া :
১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ বাংলার এ অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন, এবং পরে ফিরোজ শাহ তুগলক এর নিয়ন্ত্রনে আসে এ অঞ্চল। পরবর্তীকালে বাংলার বারভুঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁ ১৫৭৭ সালে এ এলাকার এগারসিন্দুর গ্রামকে রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন এই এগারসিন্ধুকে দখল করার জন্য মোঘল সম্রাট আকবর তার সেনাপতি মানসিংহকে যুদ্ধে পাঠান এবং যুদ্ধে মানসিংহের পরাজয় ঘটে। ১৬৩৮ সালে শাহ জাহানের রাজত্বকালে, আসাম রাজ ৫০০ নৌযানসহ এগারসিন্ধুর আক্রমণ করলে এগারসিন্ধুরের পতন ঘটে। এগারসিন্দুর নামে প্রায় ৬০ ফুট চওড়া মাটির যে দূর্গটি এখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল তা ১৭ শতাব্দীতে সুবেদার ইসলাম ধংস করে দেন এবং ১৮৯৭ সালে সংঘঠিত ভূমিকম্পে দূর্গের অবশিষ্ঠ অংশগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ইতিহাসের সাক্ষ্যি হয়ে এখনো টিকে আছে নানা রকম কারুকার্য খচিত ঈশা খাঁর নির্মিত ২টি মসজিদ। রয়েছে শাহ মাহমুদ মসজিদ নামে সম্পূর্ণ ভিন্ন আদলে তৈরি আরও একটি মসজিদ আছে। মসজিদটিতে ঢোকার পথে দোচালা আকৃতির ছোট ঘরের মতো একটি পাকা তোরণ রয়েছে, যা দেখলে সত্যিই অবাক লাগে।
রহস্যময় নামকরণে পাকুন্দিয়া :
ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাবলির ভূ-খন্ড অঞ্চল পাকুন্দিয়ার নামকরণে রয়েছে বিচিত্র কয়েকটি গল্প। বলা হয়মধ্যযুগে এ এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসা মলং শাহ নামে একজন আউলিয়া দরবেশের পবিত্রদেহ থেকে উর্দু শব্দে ‘পাকওয়ান দেহ’ যা লোকমুখে উচ্চারণ বিবর্তনের ফলে পাকুন্দিয়া শব্দে রূপ নেয় এবং এ অঞ্চলের নামকরণ হয় পাকুন্দিয়া। কিন্তু বহু ভাষাবিদ ও গবেষক ডঃ সুকুমার সেনের মতে এই অঞ্চলের দু পাশে খাল-নদী বেষ্টিত উঁচু স্থানে প্রচুর ‘পাকুড় গাছ’ ছিল। ‘পাকুন’ শব্দটি ‘পাকুড়’ শব্দের বিবর্তিত রূপ; এই বিবর্তিত শব্দ পাকুন এবং এখানকার ভৌগলিক পরিবেশ ‘দিয়া’ মিলে এ এলাকার নামকরণ হয়েছে ‘পাকুন্দিয়া’।
পাকুন্দিয়ার  ভৌগলিক পরিচিতি :
পাকুন্দিয়া উপজেলার আয়তন ১৮০.৫২ বর্গ কি.মি.।এ উপজেলার উত্তরে কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা,দক্ষিণে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া ও নরসিংদী জেলার মনোহরদি উপজেলা,পূর্বে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী,নিকলী ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলা অবস্থিত। এলাকাটিতে মানুষ ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে কালের পরিক্রমায় ১৯২২ সালে পাকুন্দিয়ায় স্থায়ীভাবে একটি থানা গঠন করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৩সালে পাকুন্দিয়া থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডঃ আব্দুল মজিদ খান পাকুন্দিয়া উপজেলার শুভ উদ্ভোধন করেন। অতপর ৩০ মার্চ ২০০৭ সালে ১৩.৩৩ বর্গ কি.মি. আয়তন নিয়ে পাকুন্দিয়াকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষনা করা হয়।বর্তমানে ১৮৪ বর্গ কি.মি আয়তনের পাকুন্দিয়া উপজেলাটি ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৯৭ টি মৌজায় বিভক্ত, ১৭৪টি গ্রাম সংশ্লিষ্ঠ একটি উন্নয়ন সমৃদ্ধির জনপদ।
অর্থনীতিতে পাকুন্দিয়া উপজেলা :
অপরূপ সৌন্দর্যের পাকুন্দিয়ায় বসবাসরত তিন লক্ষাধিক মানুষ তাদের জীবন নির্বাহে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত থাকলেও এ এলাকার রয়েছে অসংখ্যা বেকার জনগোষ্টি। এ উপজেলা সবজির জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছর এখানে অনেক সবজি ও ফল উৎপাদিত হয়। এখানের সবজি ও ফল বিশেষ করে সিলেট, ঢাকা সহ সারা দেশে সারা বছর সরবরাহ করা হয়। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর ঐতিহাসিক খ্যাতি এ উপজেলাতেই। তাছাড়া এখানে প্রচুর ধানও উৎপাদিত হয়, যা এখানের খাবারের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বলা হয় বর্তমানে তাদের অনেকেই এখন পাকুন্দিয়ার সফল উদ্যোক্তা। কেউ হলুদ তরমুজ চাষ, কেউ মৌ চাষ অথবা কেউ মৎস চাষ করে সুন্দর ভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।তাছাড়াও কালিয়া চাপড়া চিনিকল (বিলুপ্ত) বর্তমানে নিটল-‌নিলয় চিনিকল হিসেবে বেসরকারী পর্যায়ে চালু আছে। পাকু‌ন্দিয়ায় এক‌টি ঔষধ উৎপাদনকারী প্র‌তিষ্টান আছে যার নাম ডেল্টা ফার্মা‌সি‌টিক্যাল। দুইটি কোল্ড স্টোরেজ আছে যেগুলোর নাম এগারসিন্দুর কোল্ডস্টোরেজ, পূর্বাচল হিমাগার। এছাড়া সরকারি বিএডিসি স্টোরেজ, একটি ময়দা ফ্যাক্টরি, এবং অটোরাইসমিল আছে।
ব্রহ্মপুত্র , নরসুন্দা সিংগুয়া নদীর অববাহিকা পাকুন্দিয়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে লিছু ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্যা সামাজিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ প্রায় ৪২টি স্থাস্থ্যকেন্দ্র সমৃদ্ধ এ উপজেলার মাটিতে গড়ে উঠেছে সরকারি বেসরকারি প্রায় ৪০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

 

পাকুন্দিয়া উপজেলার দর্শনীয় স্থান :
হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ ও পুরাকীর্তি স্থাপনা নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলাতে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান ।

 

এগারসিন্দুর দুর্গ :
১১টি নদীর মোহনায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে উঁচু শক্ত এঁটেল লাল মাটির এলাকা ব্যবসা বাণিজ্য ও বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় বিধায় গঞ্জের হাট নামে প্রসিদ্ধ ছিল। গঞ্জের হাট ১১টি নদীর সংগমস্থলে ছিল বিধায় তখনকার জ্ঞানী লোকেরা ১১টি নদীকে সিন্দু নদ আখ্যায়িত করে গঞ্জের হাট থেকে স্থানটির নামকরণ করা হয় এগারসিন্দুর। এটি ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে গড়ে উঠেছিল। তবে এগারসিন্দুর দুর্গ-কে নির্মাণ করেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেহ বলেন রাজা আজাহাবা আবার কারো মতে বেবুদ রাজা এবং কারো মতে রাজা গৌর গ্যেবিন্দ। সুলতানী আমলের পরই এগারসিন্দুর এলাকাটি কোচ হাজংদের অধিকারে চলে যায়। বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁ কোচ হাজং রাজাদের পরাজিত করে এগারসিন্দুর দুর্গটি দখল করেন। এ দুর্গ থেকেই পরবর্তীতে মোঘল সেনাপতি রাজা দুর্জন সিংহ ও পরে রাজা মানসিংহকে পরাজিত করতে সমর্থ হন। তখন থেকেই এগারসিন্দুর দুর্গটি ঈশাখাঁর দুর্গ নামে খ্যাত। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিঃ মিঃ দূরে মঠখোলা-মির্জাপুর-পাকুন্দিয়া সড়কের পাশে এটি অবস্থিত।

 

সাদী মসজিদ :
পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর দুর্গ এলাকায় এ মসজিদটির অবস্থান। এ মসজিদটি সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। পোড়ামাটির অলংকরণে সমৃদ্ধ এ মসজিদটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরী। এটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতি মসজিদ। প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট। চারপাশে চারটি বুরুজ আছে। পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে প্রবেশ দ্বার রয়েছে। প্রবেশ পথগুলোর চারদিকে পোড়ামাটির চিত্র ফলকের কাজ রয়েছে। ভিতরে ৩টি অনিন্দ্য সুন্দর মেহরাব রয়েছে যা টেরাকোটার দ্বারা অলংকৃত। ১০৬২ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে শাহজাহান বাদশা গাজীর রাজত্বকালে শেখ নিরুর পুত্র সাদীর উদ্যোগে এ মসজিদটি নির্মিত হয় বিধায় মসজিদটির নামকরণ করা হয় সাদী মসজিদ।
শাহ মাহমুদের মসজিদ ও বালাখানা :
পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুরে অবস্থিত শাহ মাহমুদ মসজিদ ও অপূর্ব সুন্দর বালাখানা মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ডঃ দানীর মতে ১৬০০ খৃস্টাব্দের দিকে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। ১১৪৫ বঙ্গাব্দে ২৩ মাঘ তারিখে মসজিদের ব্যয় নির্বাহের জন্য জঙ্গলবাড়ী হতে দেয়া ওয়াক্ফ জমি এককানি সাড়ে সাত গন্ডা জমির দলিল আছে। বর্গাকৃতির এ মসজিদটির প্রত্যেক বাহু ৩২ ফুট। চার কোণায় ৪টি বুরুজ রয়েছে। একটি বিশাল গম্বুজ আছে। দু’পাশে দুটি সরু মিনার রয়েছে। ভিতরে পশ্চিমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে। বালাখানা : শাহ মাহমুদ মসজিদের প্রবেশ দ্বারটি ঠিক দো চালাঘরের আকৃতি যা বালাখানা নামে পরিচিত। ঘরটির আয়তন ২৫ ফুট ১৩ ফুট ৮ ইঞ্চি। এ বালাখানার মাঝখান দিয়ে প্রবেশ করে মূল ইমারতে যেতে হয়। শাহ্ মাহমুদ এ মসজিদ ও বালাখানাটি নির্মাণ করেছিলেন বলে মসজিদটির নামকরণ করা হয় “শাহ্ মাহমুদ মসজিদ”।
সালংকা জামে মসজিদ  :
পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দি ইউনিয়নের সালংকা গ্রামে এ মসজিদটি অবস্থিত। সুরকী জমানো ও বড় বড় পাথরের তৈরী এ মসজিদটি আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত হয়েছিল। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চূড়ায় ৪টি পিতলের কলসী, দুটি দরজা ও প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে। সামনের প্রবেশদ্বারে ফার্সী ভাষায় উৎকীর্ণ একটি সুন্দর শিলালিপি রয়েছে। প্রাচীন বাংলা লিখন পদ্ধতিতে চূড়ায় বড় কলসীর গায়ে হরে কৃষ্ণ ও হরি লেখা ছিল। কেউ বলেন প্রাথমিক অবস্থায় হিন্দু দেবালয় ছিল এবং পরে ইসলাম বিজেতা কেউ এসে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। প্রাচীন সুবৃহৎ এ মসজিদটি ভগ্ন ও জীর্ণ অবস্থায় আজো কালের প্রহর গুণছে।
হর্ষি জামে মসজিদ :
পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের হর্ষি বাজারে এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি অবস্থিত। সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১০৮০ হিজরী ১৬৬৯ খ্রিঃ এটি নির্মিত হয়। ময়মনসিংহ ডিষ্ট্রিক গেজেটিয়ার (১৯৭৮) সহ বিভিন্ন গ্রন্থে উক্ত মসজিদটিকে “মসজিদ পাড়া মসজিদ” নামে পরিচিত করা হলেও আসলে তা হর্ষি জামে মসজিদ। বর্গাকৃতির এ মসজিদটির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৯ ফুট। ৪ কোণায় অষ্ট কোণাকৃতির বুরুজ আছে। পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে প্রবেশ পথ রয়েছে। কেবলা প্রাচীরে ৩টি মেহরাব রয়েছে। প্যারাপেট এর উপরিভাগ মারলন দ্বারা অলংকৃত। অপূর্ব এ মসজিদটিতে মোঘল স্থাপত্য শৈলী চোখে ভেসে উঠে।
নিরগিন শাহ্‌র মাজার :
নিরগিন শাহ্‌ আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন। তিনি ঈশা খাঁর রাজত্বকালে একজন বড় সাধক ছিলেন। ধ্যানে বিঘ্নতা এবং লোক পীড়নের ভয়ে তিনি পাগলের বেশে থাকতেন। তিনি এগারসিন্দুরের একটি জঙ্গলে ছোট্ট কুঠিরে বাস করতেন। তিনি প্রায়ই উলংগ হয়ে হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াতেন ও বাজার থেকে ফেলে দেয়া পঁচা মাছ, মাংস, নাড়ীভুড়ি ইত্যাদি কুড়িয়ে গভীর জঙ্গলে চলে যেতেন এবং অলৌকিকভাবে পাক করতেন যার খুশবুতে জঙ্গল পরিপূর্ণ হয়ে যেত। বর্তমানে এগারসিন্দুরের পূর্ব প্রান্তে এই সাধকের মাজার রয়েছে। মাজারটির প্রতি হিন্দু-মুসলিম উভয় সমপ্রদায়েরই সমান ভক্তি দেখা যায়।
বাহাদিয়া পাঁচ পীরের মাজার :
বাহাদিয়া বাজারের ১০০ গজ উত্তর দিকে মির্জাপুর-মঠখোলা রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব তীরে বিশাল আকৃতির বহু পুরাতন বটবৃক্ষের নীচে পাঁচ পীরের মাজার অবস্থিত। কথিত আছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এখানে পাঁচ জন আউলিয়া এসেছিলেন এবং তাঁরা শাশ্বত সত্যের বাণী ইসলাম ধর্ম প্রচার করতেন। পাঁচ জন আউলিয়া এখানে একত্রে অবস্থান করে আধ্যাত্মিক সাধনায় মত্ত ছিলেন। পরবর্তীতে এখানকার মাজারের নামকরণ হয় পাঁচ পীরের মাজার।
মঠখোলা কালিমন্দির  :
পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নে মঠখোলা নামক স্থানে এ মন্দিরটি অবস্থিত। শাস্ত্র ধর্মের বিখ্যাত পাঠ হিসেবে ব্রহ্মপুত্রের তীরে একটি কালি পীঠ তৈরী হয়েছিল। পীঠটি স্থাপনের পর সপ্তদশ শতাব্দীর দিকে চারিপাড়ার রাজা নবরঙ্গ রায়ের অধঃস্তন ও শাস্ত্র ধর্মে দীক্ষিত জনৈক ভূস্বামী বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরের চূড়াটি বেশ উঁচু। মন্দিরের এক অংশ গৌড়ীয় রীতিতে দোচালা প্যার্টানে তৈরী। এ মন্দিরটি মিশ্র স্থাপত্য শিল্পের একটি প্রকৃষ্ট নিদর্শন। মঠখোলা কালিমন্দিরে প্রতি বছর শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ মন্দিরের পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতি বছর চৈত্র/বৈশাখ মাসে অষ্টমী সন্তান হয়। অষ্টমী সন্তান উপলক্ষ্যে দূর দূরান্ত থেকে পুর্নাথী হিন্দুভক্তগণ এখানে এসে মন্দির দর্শন করেন।

 

আংটি চোরার বিল :
এগারসিন্দুরে বেবুদ রাজার দিঘীর দক্ষিণ পূর্বাংশে একটি নীচু জলাশয়ই আংটি চোরার বিল নামে পরিচিত। একদিন বেবুদ রাজা তার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পাশের জলাশয়ে নৌকা বিহারে যেয়ে তন্দ্রা অবস্থায় থাকলে তার এক বন্ধু রাজার হাতের আংটিটি কৌশলে চুরি করার সময় আংটিটি বিলের পানিতে পড়ে যায়। এ অবস্থার পর রাজার কাছে ঘটনা খুলে বললে রাজ উন্মাদ হয়ে যায়। কারণ এ আংটিটি ছিল অলৌকিকভাবে তার দীঘিতে ডুবে যাওয়া পত্নী চম্পা রাণী থেকে পাওয়া। তারপর উক্ত বিলের পানি ছাঁকা ছাঁকা করেও আর হারানো আংটি পাওয়া যায় নি। সে ঘটনার পর থেকে এ বিলটির নাম হয় আংটি চোরার বিল।
৫১.৮০ শতাংশ সাক্ষরতার পাকুন্দিয়া উপজেলায় বসবাসরত মোট ৬০ হাজার পরিবারের মানুষের শিক্ষা, কর্ম ও সংস্কৃতিতে প্রথম গুরুত্ব উঠে আসে, এলাকার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। আর এর প্রধান ভূমিকা পালন করে পাকুন্দিয়া থানায় নিযুক্ত একদল পুলিশ সদস্য সহ তাদের অভিভাবক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
আইজিপি পদকপ্রাপ্ত সুদর্শন এ অফিসার উল্লেখ করেন পাকুন্দিয়া এলাকায় বসবাসকৃত মানুষের মধ্যে কিছু অপরাধ প্রবণতা বিষয় সম্পর্কে।একটি সমাজকে আলোকিত করতে হলে প্রয়োজন হয় একজন আলোকিত মানুষের। আর এই আলো সমাজে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন হয় প্রশাসন কর্তৃক সাধারণ মানুষের সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সময়ে আধুনিক পুলিশ কতটুকু এগিয়ে আছে সেকালের পুলিশি সেবা থেকে তাও উল্লেখ করেন জনাব মোঃ সারোয়ার জাহান।এক সময়ের ভয়ংকর ও নৌ ডাকাত প্রবণ পাকুন্দিয়া অঞ্চল এখন কেমন পরিবর্তনে রূপ নিয়েছে সে সম্পর্কেও তিনি স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।