salthaa

প্রমত্তা কুমার নদের তীরে অবস্থিত পুরাতন জলাভূমি অঞ্চল সালথা। যা একসময় নগরকান্দা প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে গঠিত ছিল। কালের বিবর্তন ও সময়ের প্রয়োজনীয়তায় 2001 সালে সালথা প্রথম বারের মত একটি আলাদা প্রশাসনিক থানা অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে ২০০৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সালথা থানা অঞ্চলটি একটি মান উন্নিত থানায় আত্মপ্রকাশ করে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর নবসৃষ্ট উপজেলাটির প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।

১৮৫.১১ বর্গকিলোমিটার আয়তন বেষ্ঠিত উপজেলাটি 0৮টি ইউনিয়ন ও ১০৭টি মৌজা নিয়ে গঠিত।

 

 

ফরিদপুর জেলা সদর থেকে সালথা থানা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৪কি.মি। উত্তরে ফরিদপুর সদর, পশ্চিমে বোয়ালমারী, দক্ষিণে মুকসুদপুর ও পূর্বে নগরকান্দা উপজেলা অবস্থিত।

দেশের নবগঠিত উপজেলা বা থানা সমুহের মধ্যে সালথা একটি অন্যতম জনপদ। কিন্তু বিশেষ এ অঞ্চলের নাম কিভাবে সালথা নামে পরিচিতি পেল তা নিয়ে স্থানীয়দের বরাবরই অজানা ছিলো, নামের মৌলিক ধারণামতে একসময়ে কুমার নদীর তীরে তালগাছের অনেকগুলো ডোঙ্গা ভেসে আসে। তা দেখে স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করে। তখন একজন বলে ওঠে ভয়কি হে..! এ তো সালতি… অর্থাত তাল গাছের সরু ডোঙ্গা। তার এই সালতি কথাটি ধীরে ধীরে সালথা নামে রুপ লাভ করে।

সালথা উপজেলার বুক চিরে বয়েছে এক সময়ের দাপটে নদ কুমার। এই কুমার নদের পানি ব্যবহার করেই প্রাচীণ কালে উপজেলাবাসী ভুমি সেচ দিতো। কিন্তু কিছু লোভী ও অসাধু মানুষের কারণে নদীর সেই তেজোদীপ্ত অবয়ব চেহারা কালের স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে উপজেলার খাল-বিলগুলো প্রকৃতির রূপে ঋতুবর্ষ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে ।

কৃত্তিমতা বর্জিত বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের কাগদী বাওর উপজেলার শোভাবর্ধণে ভূমিকা পালন করছে। বর্ষাকালে সালথা উপজেলার এই বাওরটি অন্যতম সৌন্দযে পরিণত হয়্। বাওরটির সৌন্দর্য দেখার জন্য উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপজেলাটির গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার হার কম হলেও শহরের দিকে শিক্ষার হার বেশ উন্নত। রয়েছে মহাবিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্যা মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সালথা উপজেলাটির চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলায় গড়ে উঠেছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একাধীক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান যা উপজেলাবাসীর বিবিধ রোগমুক্তিতে ভুমিকা রাখছে।

সালথা অঞ্চলের যাতায়াতের একমাত্র পথ সড়ক যোগাযোগ। একসময় অঞ্চলটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম ভাবে অবহেলিত ছিলো, তবে বর্তমানে উপজেলার শহর থেকে গ্রাম ও প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলোতে পিচ ঢালাই সড়কের ছোয়া লেগেছে।

ফলে উপজেলার লোকজন সহজেই জেলাসদর ও অন্যান্য উপজেলাবাসীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তাছাড়া উপজেলার কৃষিজপণ্য সহ বাজারজাতকরণ বিভিন্ন ফসলাদি খুব সহজেই অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহন করতে পারেন।

প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বসবাসরত সালথা একটি নিবিড় শান্ত উপজেলা। সালথা এলাকার কোন আঞ্চলিক পত্রিকা না থাকলেও অঞ্চলের নানা খবরাখবর প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমসহ  বেশ কিছু আঞ্চলিক অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে।

প্রায় ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। বর্ষা মৌসুমে এখানে কৃষিজ ফসল উতপাদন ব্যহত হলেও পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে সালথার ফসলি মাঠগুলো সবুজবর্ণে জেগে ওঠে।

স্থানীয়রা বলেন ব্যবসা বানিজ্য, চাকুরি ও অন্যান্য পেশার সাথে সংযুক্ত রয়েছে বিভিন্ন মৌসুমে হরেক রকম ফসলের চাষাবাদ। কৃষির আয় ছাড়া এখানে দু-মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকা দূস্কর। প্রধান ফসল হিসেবে চিহ্নিত পাট ও পেয়াজ।

পাট ও পেঁয়াজের রাজধানীখ্যাত সালথা উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে পাট ও পেঁয়াজের বীজ । এই উপজেলার অধিকাংশ কৃষক বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ ও পাটের বীজ উৎপাদন করছে। যা সারাদেশে রপ্তানি করা হয় । খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য সালথা উপজেলা বেশ প্রসিদ্ধ। শীতের আগমনে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ে গাছিরা। অঞ্চলের খেজুরের গুড় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হয়। উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠায় অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গবাদীপশু, হাঁস-মুরগী পালন, মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজসহ অন্যান্য কাজের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ইতিহাস সমৃদ্ধ এই উপজেলার প্রতিটি অঙ্গন । উপজেলার গট্টি ইউনিয়নে রয়েছে হযরত শাহমকদুম মাজার ও বাউষখালী এলাকায় প্রায় ২শতাধিক বছর ধরে দারিয়ে থাকা সিংহ পরিবারের জমিদার বাড়ি।

যা এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এখন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশার বাণী ঘোষিত হয়েছে। তাছাড়াও সালথা থানা অঞ্চলের পরতে পরতে ছরিয়ে থাকা প্রাকৃতিক রূপ প্রকৃতি প্রেমীদের মন ভরে দেয়।

বর্ষার শুরুতে যখন উপজেলা কানায় কানায় পানিতে পূর্ণ হয়ে যায় তখন এর রুপ আরও মায়াময় হয়ে ওঠে। বিনোদন ও ক্রীড়া প্রেমীরা বছরের বিভিন্ন সময় অনেক খেলা-ধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়জন করে থাকে। যা তাদের ঐতিহ্যের লালন বলে অবিহিত হয়।

উল্লেখ্য এ উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রমিলা রাজনীতিবিদ সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

সালথা অঞ্চলের মানুষের জীবনমাণ তুলনামুলক একটু কঠিন। ফলে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কিছু মানুষ।  ডাকাতি, জমি বিরোধ ও পারিবারিক কলহের মতো অপরাধগুলো একটু বেশিই চোখে পড়ে। যা নিয়ন্ত্রণে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে সালথা থানার ভিন্ন ভিন্ন পদের ৫৩ জন পুলিশ সদস্য।

আর তাদের অবিভাবক হয়ে থানার সর্বাধিক পদে ১২ এপ্রিল ২০২২ এ পদায়িত হয়েছেন একজন অভিজ্ঞ ও মোধাবী পুলিশ পরিদর্শক জনাব মো: শেখ সাদিক।

সততা, কর্মনিষ্ঠা ও ন্যায় পরায়নতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে তিনি ইতোপূর্বে পদায়িত থানা অঞ্চলসমুহকে অপরাধমুক্ত করতে প্রায় শতভাগ সফল হয়েছেন। তিনি এ থানায় যোগদান করে মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানে স্থানীয়দের কাছে বহুল প্রশংসা অর্জন করেছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে সালথা থানা অঞ্চলের নৈমিত্তিক অপরাধগুলো সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ তথ্য তুলে ধরেন….

তিনি বলেন সালথা থানা অঞ্চলের মানুষ একটু সহজ সরল প্রকৃতির, কিন্তু কেন এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দাঙ্গা বা মারামারির মত নেশা জন্ম হয় তার রয়েছে একটি বিচিত্র কারণ…

অফিসার ইনচার্জ জনাব মো: শেখ সাদিক জানান সালথা থানা অঞ্চলে দাঙ্গা-বা মারামরি ঘটনা ব্যতীত অন্য কোন অপরাধ তেমন নেই এবং আশার বাণী এই যে অঞ্চলটিতে তুলনামুলক অপমৃত্যুর সংখ্যা একেবারেই কম। যার যথার্থ কারণও উল্লেখ করেন জনাব মো: শেখ সাদিক।

ভয় বা আতঙ্ক নয় একমাত্র সচেতনতাই পারে অঞ্চলের মানুষের মধ্যকার এই সব অপরাধ প্রবণতাগুলো মুছে ফেলতে।

তাই তিনি নিয়মিত ভাবে স্থানীয় সমজিদে জুমআর নামাজ পূর্ববর্তী সময়ে মুসল্লীদের মাঝে সচেতনতামুলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে আইনের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।

অন্যদিকে অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃংখলার জন্য সালথা থানা পুলিশের সফল কার্যক্রম বা কিভাবে কাজ করেছে সালথা থানা পুলিশ সে সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করেন জনাব মো: শেখ সাদিক।

সালথা থানা অঞ্চলাধিন মানুষের সুখ-দুখ, হাসি-কান্নার আভ্যান্তরিন বিষয় বিবেচনা করে

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নির্দেশনায় ও ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মো: শেখ সাদিক থানা অঞ্চলের মানুষের মধ্যকার কিছু অপকৌশলধারীদের কথা উল্লেখ করে স্পষ্টই একটি সংকেত দেন যা এলাকাবাসীর প্রত্যাশিত বানী।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।