Shamim osman 3

বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত তেজোদীপ্ত রাজনীতিবিদ, আওয়ামীলীগের কাণ্ডারী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল খায়ের মোহাম্মাদ শামীন ওসমান । যিনি সফল ভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। যার ফলে, তিনি সপ্তম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সফলভাবে বিজয় লাভ করেন । যার হাত ধরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি আজও বহমান। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ বাসীর উন্নয়নের পাশাপাশি সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে রয়েছেন।

Shamim Osman 1

শামীম ওসমানের বেড়ে উঠা ও কৈশোর

এই মহান রাজনীতিবিদ ও সাংসদ নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারে ১৯৬১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আবুল খায়ের মোহাম্মাদ শামসুজ্জোহা এবং মায়ের  নাম নাগিনা জোহা। পরিবারিক ভাবে ওসমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় নামের শেষে যোগ হয় এ পদবি।ওসমান পরিবারের সুনাম ছিলো সেই আবহমানকাল থেকে।তাঁর দাদা থেকে বাবা এমনকি সবাই ছিলো সাংসদ । বলা যায়, তাঁদের পরিবার ছিলো রাজনীতিক ।

আর সেই বংশের উত্তরসূরীদের উন্নয়নে আজকার এই বন্দর নগরী । শামীম ওসমানের বাবা বাংলার রাজনীতির দিকপাল একেএম শামসুজ্জোহা ১৯৭০ সালে পাকিস্তানী আইনসভার সদস্য ছিলেন। পরবর্তী দুই বছর পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য হন। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের নাম-গৌরব-ঐতিহ্য ছিলো সমস্ত নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। সেই সাথে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

জানা যায়, সেই সময়ের তুখোড় এ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুবেই ঘনিষ্ঠ ছিলেন।সেই থেকে রাজনীতিবিদ ওসমান আলীর অনুসরণে তাঁর বড় ছেলে একেএম শামসুজ্জোহার । অথ্যাৎ তাঁর বাবার পদ অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে আসেন। আবার অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করেন। বলা চলে যে, ওসমানের পরিবারের ভিক্তি মূলত নেতৃত্ব ও রাজনীতি। শামীম ওসমানের তোলারাম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ ও পরবর্তী সময়ে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজনীতিক জীবন

ছোট বেলা থেকেই শামীম ওসমান ছিলেন জনদরদী । বাপ-দাদাদের মতো কাজ করতেন মানুষের উন্নয়নে। আর মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে গিয়ে একসময় হয়ে উঠেন নেতা। ছাত্র অবস্থায় আওয়ামী ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এবং রাজপথে সর্বদা ন্যায়ের দাবী নিয়ে আন্দোলন করতেন। এ আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকবার তাঁকে হয়রানিসহ হাজতেও যেতে হয়েছিলো । তৎকালীন ছাত্র-ছাত্রীদের নানাবিধ সমস্যা, কলেজের উন্নয়নের জন্যও আন্দোলন করেছিলেন। নানান নির্যাতন ও রাজনীতিক হয়রানির পর ১৯৯৬ সালে আওয়ালীগ থেকে নমিনেশন পান। এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শুরু হয় তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায় ।

Shamim Osman

আস্তে আস্তে শুরু করেন তাঁর রাজনীতির প্রভাব ।নগরের নানাবিধ সমস্যা ও নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।তবে জয়ের আনন্দের জোয়ার যেমন সব জায়গায় থাকে। কিন্তু বেদনার বা ব্যর্থতার পরখ সবাই গ্রহণ করে না। রাজনীতি প্রতিক্রিয়ায় ২০০১ সালে আওয়ামী সরকার হেরে গেলে শুরু হয় ক্ষমতার পালা-বদল । একা হয়ে পড়েন শামীম ওসমান। জীবনের প্রায় আটটি বছর ভারত ও কানাডায় অতিবাহিত করেন।

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসারপর নির্বাসনের দিন শেষে ২০০৯ সালে আবার নারায়ণগঞ্জে আসেন। বন্দর নগরীতে আসার পর আবারও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন । তবে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র নির্বাচনে তৎকালীন জনপ্রিয় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভির কাছে পরাজিত হন। পরবর্তী ৩ বছর শুধু জনগণের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়েছেন এবং কুড়িয়েছেন সুনাম ও জনপ্রিয়তা । অবশেষে, কেন্দ্রীয় কমিটি ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতৃত্ব নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ প্রার্থী কবরী সারোয়ারকে বাদ করে দেন।সেই আসনে মনোনয়ন পান শামীম ওসমান । তারপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন।

 

শামীম ওসমানের পরিবার ছিলো মূলত রাজনীতিক পরিবার। তাঁর বড় ভাই নাসিম ওসমান ছিলেন জাতীয় পার্টির অন্যতম সংসদ সদস্য। এবং তাঁর ছোট ভাইও সেলিম ওসমানও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর দাদা এম ওসমান আলীর হাত ধরে বংশানুক্রমে রাজনীতিক নেতৃত্বে লালন করে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। ছাত্র জীবন থাকা অবস্থায় সরকারী তোলারাম কলেজের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি আজও রয়েছে।

পরিবারিক সদস্য 

শামীম ওসমান তোলারাম কলেজের ছাত্র অবস্থায় সালমা লিপি সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথমে প্রেম এবং পরবর্তীতে বিয়ার রূপ নেয় ১১ জুলাই ১৯৮৭ সালের দিকে। ব্যক্তিগত ভাবে সবচেয়ে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও ধার্মিক। নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিচিত মুখ ।ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর এক মেয়ে অঙ্গনা ওসমান ও পুত্র অয়ন ওসমান । তাঁরাও বাবার মতো নগর বন্দরীতে উন্নয়নে আলোর অগ্নিশিখা ।

Shamim Osman 2

ওসমান পরিবারের উত্থান

ওসমান পরিবারের উত্থান শুরু হয় সেলিম ও শামিম ওসমানের দাদার দ্বারা। তাঁদের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী ১৯২০ সালে কুমিল্লা থেকে ঢাকার নারায়ণগঞ্জে এসে বসতি স্থাপন করেন । তারপর শুরু করেন ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি চারিদিকে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে যায় যোগ দেন রাজনীতিতে। অবশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি এবং সমাজকল্যাণ কাজের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাঁতে খান সাহেব উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই সময়ে জেষ্ঠ ওসমানের সুনামে ও উন্নয়নে নারায়ণগঞ্জ পুরো দখলে চলে আসে। সমাজের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজ শুরু করেন।

প্রাচ্যের ড্যান্ডি নামে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ সেই সময় থেকেই অন্ধকার যুগ থেকে আলোর পথে চলে আসে। তৈরি হয় নতুন নতুন স্থাপত্যশৈলী, ইমারাত, সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা। যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে সবার অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে চলে আসেন। উত্তম চরিত্র ও নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

আরও পড়ুন : স্বামীর জন্য কিডনী দান স্ত্রী শাহনাজ এর।

তিনি সাধারণ নির্বাচনে ঢাকার নবাব হাবিবুল্লাহকে পরাজিত করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের একজন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তাঁর প্রগতিশীল ও উদার চিন্তার কারণে নারায়ণগঞ্জ মুসলিম লীগের সভাপতিও ছিলেন । পরবর্তীতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ হলে তিনি ঢাকা মুসলীম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বাংলাদেশেল ভিতরে অন্যতম জেলা নারায়ণগঞ্জ । যেখানে তিনি বাংলার অবিসাংবাদিত নেতা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীকে গণ সংবর্ধণা দিয়েছিলেন।

তিনি বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ধারক-বাহক একাত্তারের অনুপ্রেরণা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেই সাথে ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য তাকেঁ জেলেও যেতে হয় । ওসমান আলী স্বদেশি, সাংবিধানিক আন্দোলনেও ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনের পাশাপাশি ৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে আন্দোলনে যোগ দেন । শুধু রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা ছিলো না তিনি সমাজ, সংস্কৃতি পরিমন্ডলে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। খান সাহেব ওসমান আলীর পদচারণায় পরবর্তীতে একেএম শামসুজ্জোহার পুত্র শামীম ওসমান।

সমালোচনা

কোনো মানুষ সমালোচনার উর্ধ্বে নয় ঠিক এই তেজোদ্বীপ্ত রাজনীতিবিদ শামীম ওসমান নয়। ২০১৩ সালে ছাত্র তানভীর মোহাম্মাদ ত্বকী নিখোঁজের ঘটনায় ওসমানের পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনেন। যদিও সেই সময়ে তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিতে গেলে প্রত্যাখ্যান হোন।

Shamim osman 3

শামীম ওসমানের বক্তব্য থেকে কিছু কথা

বাবা-মা পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে মা-বাবার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, ভালোবাসা একটি জীবন গড়তে সহায়তা করে। তাই তাঁদের প্রতি ভালোবাসা ও পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখা উচিত। আপনার একমাত্র পিতামাতার আদর ও ভালোবাসা এবং দোয়ায় সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

তাঁর অন্য একটি বক্তব্যে বলেন, ধর্ম শিখতে, পড়তে, বুঝতে পারলে আত্মাকে প্রশান্তি দেয় । আর নিজের বা একার চিন্তা না করে সামগ্রিক ভাবে চিন্তা করতে হয়। তাহলে আত্মার শান্তির পাশাপাশি পরমাত্মায় শান্তি পায়।

হতাশা বা ডিপ্রেশন বলতে বুঝান, অল্পতে তুষ্টি থাকতে হবে মূলত আপনার যা আছে তা নিয়েই ভালো থাকতে হবে অধিক কিছুর্ প্রত্যাশায় আপনি হতাশাগ্রস্থ হতে পারেন ।তাই ভালো থাকার টিপস হচ্ছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্টি থাকা।

জীবন একটা ছোট জিনিস তাকে বড় করলে বড়, ছোট করলে ছোট । তাই জীবনকে নিয়ে ভাবুন, জানুন নিজেকে আবিষ্কার করুন।

জীবনে ভালো থাকার জন্য যা লাগে তা হলো আত্মবিশ্বাস ও এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং প্রিয় মা-বাবার দোয়া।

মন কখনো মরে যায় না, ইচ্ছা শক্তি থাকলে ষাট বছর বয়সে এসেও লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। শুধু থাকতে হবে প্রবল ইচ্ছা ও সাধনা । শুধু লেগে থাকলেই হবে না ।পাশাপাশি লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।