স্বামীর জন্য কিডনী দান

নিজের কিডনী দিয়ে স্বামীকে বাচানোর চেষ্টা স্ত্রী শাহনাজের

পৃথিবীতে কতই না ঘটনা ঘটে যায় মানুষের জীবনে। কিছু ঘটনা মানুষকে হাসায় কিছু কাঁদায়। তার মধ্যে প্রিয় মানুষটিকে বাচানোর জন্য কয়জনই বা নিজের জীবন বাজি রাখতে পারে। নিজের অঙ্গ নির্দীধায় দান করতে পারে?

হ্যাঁ পারে। আর সেই কাজটি করতে যাচ্ছেন মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার ২০ বছর বয়সী মেয়ে শাহনাজ আক্তার। স্বামীর জন্য নিজের কিডনী দান করে স্বামীকে বাচানোর করুন আকুতি তুলে ধরেছে চ্যানেল আই পজিটিভ থিংক। বিয়ের দুই মাস পর থেকেই একাধারে স্বামীর সেবায় নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন এই শাহনাজ।

স্বামী মোঃ আওলাদ হোসেন ও স্ত্রী শাহনাজ আক্তার এর মুখে উঠে এসেছে তাদের জীবনের এই গল্প। আজ শাহনাজের সকলের কাছে আকুতি তার স্বামীকে বাচানোর জন্য একটু সাহায্য।

শাহনাজের ও আওলাদের প্রণয়ের শুরু…

আওলাদ হোসেনের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গৌরবদিয়া গ্রামে। বাবা নেই মা সহ নয় ভাই বোনের সংসার আওলাদের। সংসারের টানাপোড়নের কারণে ২০০৯ সালে পাড়ি জমান সুদূর মালায়শিয়াতে। ভালই চলছিল তার সংসার সবার ভালবাসায় সিক্ত ছিল আওলাদ। কারণ সে টাকা উপার্জন করতো। কিন্তু এই ভাল থাকাটা আর বেশিদিন থাকা হয়নি মানুষটির। সেই সময়টার শুরু ২০১৮ সাল থেকে। যখন সে বিয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ী আসে, পারিবারিক পছন্দেই বিয়ে করে শিবালয় থানার ডাকলা গ্রামের ১৮ বছর বয়সী মেয়ে শাহনাজ আক্তার কে। ভালই চলছিল আওলাদ ও শাহনাজের সংসার। ভালবাসায় সিক্ত ছিল তাদের সংসার। কিন্তু সেই ভালবাসা বেশিদিন দির্ঘ হলো না।

জীবন সংগ্রামের শুরু…

আওলাদ ও শাহনাজের বিয়ের ২ মাস পর একদিন হঠাৎ দেখা দিলো আওলাদের পেটে অনেক ব্যাথা। প্রথমে কিছুটা কম হলেও, দিন দিন বাড়তে থাকে। শাহনাজের জোরাজুরিতে আওলাদ ডাঃ এর পরামর্শের জন্য যায়। ডাঃ বিভিন্ন টেস্ট দেয়। যেদিন রিপোর্ট গুলো তাদের হাতে আসে সেদিন থেকে তাদের জীবনের সুখের অধ্যায়ের ইতি টানতে হয়। রিপোর্টে ধরা পড়ে আওলাদের দুটো কিডনি প্রায় অকেজো। এরপর থেকে তাদের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। শাহনাজ তার প্রানপ্রিয় স্বামীকে নিয়ে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। ডাঃ বলেন তাকে ২ দিন পর পর তার কিডনী ডায়ালাইসিস করতে হবে। আর যত ধ্রুত সম্ভব কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। তানা হলে আওলাদকে বাচানো সম্ভব নয়। শাহনাজের মাথায় যেন বাজ পড়ার মত অবস্থা। তারপর থেকে তাদের ঠায় হয় ঢাকার বস্তির ছোট্ট একটি রুমে। একে একে ১ মাস ৩ মাস ৬ মাস কেটে যায়। ডায়ালাইসিস ও চলতে থাকে একের পর এক। জমানো টাকা শেষ হতে শুরু করে। এদিকে কে কিডনি দান করবে বা কোথায় পাবে সেটাও বুঝতে পারছিল না শাহনাজ। দু-চোখে যেন অন্ধকার নেমে এলো। একদিনে প্রিয়তমা স্বামী আরেকদিকে ফ্যামিলির চাপ। আওলাদকে ছেড়ে যেতে। তার ভবিষ্যত রক্ষার চেষ্টায় শাহনাজের ফ্যামিলি। এদিকে টাকা শেষ। আওলাদ তার কেনা কিছু সম্পত্তি ছিল যা সে ঘর তৈরির জন্য রেখে ছিল। সেই জমিটিও বিক্রি করে দিল আওলাদ। খরচ করে জীবন যুদ্ধ করতে থাক এই দম্পত্তি। দেখতে দেখতে ১ বছর শেষ। কিন্তু তবুও আওলাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। ডাঃ তাদের সব সময় বলছে কিডনী যোগাড় করতে।

কিন্তু কোথায় পাবে এত টাকা? কে দেবে কিডনী? এসব চিন্তা যেন শাহনাজকে পাগল করে দেয়। একটি সময় শাহনাজ খুব কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। সে চিন্তা করে তার স্বামীকে বাচাতে সে নিজেই কিডনি দান করবে। আওলাদকে কথাটি বলতে ভয় পায় সে।  সেই চিন্তা থেকে শাহনাজ একদিন ডাঃ এর সাথে দেখা করতে যায়। এবং ডাঃ কে সব খুলে বলে। ডাঃ খুবই অবাক হয়ে তাকে বলে সত্যি তুমি দান করতে চাও? কিন্তু শাহনাজ তার কথাতে অটল। ডাঃ তাকে কিছু টেস্ট দেয় এবং সে কিডনি দান করতে ফিট বলে ডাঃ বলেন।

সেই ভাবনা থেকে একদিন শাহনাজ সাহস করে আওলাদকে বলে তার সিদ্ধান্তের কথা। আওলাদ তখন কিছুই বলতে পারে না। শুধু শাহনাজের দিকে তাকিয়ে এবং তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তারপর ডাঃ এর পরামর্শে আওলাদও কিছু টেস্ট করে দেখেন। কিন্তু বাধ সাজে অন্য বিষয়। আওলাদের ভি ভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে। অনেক কষ্টে অপারেশনের জন্য রেখে দেয়া টাকা গুলিও শেষ হয়ে যায় টানা ৬ মাস ভি ভাইরাস নেগেটিভ করার চিকিৎসায়।

এদিকে শাহনাজ তার স্বামীকে কিডনী দান করবে এই কথা তার ফ্যামিলি শুনে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু তাতেও দমে যাননি শাহনাজ। স্বামীকে একটু বাচনোর চেষ্টায় শাহনাজ আজ মানুষের কাছে হাত পেতেছে। আজ তারা দুজনই অপারেশনের জন্য ফিট কিন্তু টাকার অংকটাযে অনেক বড়। আজ যদি কেউ তাদের পাশে না দাঁড়ায় হয়তো শাহনাজের এই ত্যাগটাও বৃথা যাবে। বাচাতে পারবে না তার প্রান প্রিয় স্বামীকে।

তাই আওলাদ শাহনাজ দম্পত্তিকে আবার সুখের সেই স্মৃতি গুলোকে ফিরিয়ে দিতে আমরা এগিয়ে আসি। শাহনাজের দেয়া কিডনী পেয়ে দুজন যেন আবার সুখি জীবন যাপন করতে পারে।         

     

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।