জ্বালানী

জালানী সাশ্রয়ে ঘুটের ব্যবহার বাড়ানো উচিৎ

একটি সময় বাংলাদেশের বিখ্যাত হাওড় অঞ্চল কিশোরগঞ্জে প্রচুর পাঠা চাষ হতো। তখন বাড়ির গৃহকর্মিরা পাঠ কাঠিকে জালানী হিসেবে বুবহার করতো। কিন্তু যুগের বিব্ররতনে কৃষক্রা পাঠ চাশে নিজেদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে জালানী সংকট দেখা দিয়েছে তিব্র মাত্রায়। অপরদিকে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিতে জালানী কাঠ ব্যবহার ও হ্রাস পেয়ছে অধিক হারে। এখন গ্রাম বাংলার প্রতিটি কোনে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। তাই মানুষ গাছ লাগানোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আর এ কারণে কিশোরগঞ্জের পরিবেশ বান্ধব জালানী ঘুটের কদর প্রাকৃতিক জালানীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এবং অনেক পরিবার ঘুট তৈরি করে আয়ও করছে। ঘুটের মধ্য বেশি বিক্রিযোগ্য জালানী হচ্ছে মুঠে ঘুটে বা মুইঠ্যা।

ঘুট কাকে বলে বা কিভাবে ঘুট তৈরি হয়

গরু বা ছাগলের গোবরকে চটকে শুকনা কাঠের গায়ে মুষ্টি মুষ্টি করে লাগিয়ে জ্বালানীর যে উপকরণ তোইরি করা হয় তাকে মুঠে বা মুঠ্যা বলে। আবার হাতের তালুতে গবোর নিয়ে উঠনে, গাছে, দেয়াল সহ বিভিন্ন যায়গাতে লেপ্তে দিয়ে শুঁখোতে দিয়ে যে জালানী তৈরি করা হয় তাকে বলা হয় ঘুটে বা ঘুইঠ্যা। মুঠে ঘুটে জ্বালানীর জন্য ব্যবহার উপযোগি করতে পাঁচ থেকে সাতদিন সময় লাগে।

একটি সময় ছিল গ্রামের বাড়ির বউ হতে শুরু করে ছেলে মেয়ে একযোগে গরু ছাগলের গোবর কুড়িয়ে নিয়ে এসে ঘুটে মুঠে তৈরি করতো। মাঝে কিছুদিন গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিতে এই জ্বালানীর ব্যবহার কোমে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে গ্যাস, কাঠ ও অন্যান্য জ্বালানীর মুল্য বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার ঘুটের দিকে বেশি ঝুঁকছে গ্রামের মানুষ। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের সরল মানুষগুলি।

সেই এলাকার স্থানীয়রা আমাদের জানান, যেসব পরিবারের কাছে অধিক হারে গরু ও ছাগল পালন করে। তাদের পরিবারে মোটামুটি সকলেই ঘুটে মুঠে তোইরি করে থাকেন। তাদের মধ্যে শিশুরাও এই কাজে অংশগ্রহন করে। তারা বৃষ্টির দিনের ২ মাসের জন্য পর্যাপ্ত জালানী রেখে দিয়ে বাকিগুলো বিক্রি করে দেয়। আবার অনেক অঞ্চলে দেখা যায় পরিবারের নারী সদস্যগণ সারাবছরই মুঠে বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। এর কারণে রান্নার জ্বালানীর কাজে যেমন ব্যবহার হচ্ছে তেমনি প্রতিটি পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

স্থানীয়দের মাঝে একজন আমাদের জানান, গোবরের তৈরি মুঠেকে হাওরের জালানী চট বলা হয়। এবং তিনি জানান ইটনা উপজেলার প্রায় ৮০% ভাগ মানুষ এই ঘুটের উপর নির্ভরশীল।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জুয়েল জানান, মুঠে-ঘুটে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে কিশোরগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে সুখ্যাতি রয়েছে। এ জ্বালানি পদ্ধতির ফলে গাছ নিধন কমবে।

অন্যদিকে পাট গবেষণা আঞ্চলিক কেন্দ্র কিশোরগঞ্জের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, গোবর দিয়ে তৈরি মুঠে-ঘুটে বা জ্বালানি চট এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুঠে আগুনে পুড়ালে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। ফসলি জমিতে মুঠে পুড়ানো ছাই প্রয়োগ করলে মাটির ক্ষারকতা হ্রাস পায় এবং জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।