bede

সমাজের একটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ‘বেদে’। এরা বাংলাদেশ এবং ভারতের অতি পরিচিত একটি যাযাবর সম্প্রদায়। এদের রয়েছে রহস্যে ঘেরা ইতিহাস।

একসময় সাপ খেলা দেখিয়ে, সিঙ্গা লাগিয়ে, কবিরাজি করে, মাছের হাড় বিক্রি করে বেশ স্বাচ্ছন্দে দিন পার করেছে এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। তবে এখন জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়েছে এই সম্প্রদায়। দিন বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি তাদের ভাগ্য। এখন আর কেউ তাদের খোঁজ রাখে না। বেদে সম্প্রদায়ের বর্তমান প্রতিচ্ছবি সমাজের কাছে তুলে ধরতে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছে বিশেষ তথ্যচিত্র ‘বেদে’। ফরিদুর রেজা সাগরের প্রযোজনায় খাইরুল ইসলাম তুফান নির্মিত বিশেষ এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে বেদে সম্প্রদায় সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। এই তথ্যচিত্রে স্থান পেয়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার গল্প, বেদে সম্প্রদায়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প এবং এই বেদে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমানের ভূমিকার কথা। ‘বেদে’ তথ্যচিত্রটি সর্বপ্রথম প্রদর্শিত হয় চ্যানেল আইয়ের পর্দায়। পরে এটি চ্যানেল আই পজিটিভ থিংকের ফেইসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রাকাশিত হলে লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌছে যায়। নেটিজেনদের মন্তব্যে আর প্রশংসায় ভাসতে থাকে চ্যানেল আই পজিটিভ থিংকের কমেন্টবক্স। বেশিরভাগ নেটিজেন ডিআইজি হাবিবুর রহমানের মানবিকতায় মুগ্ধ হয়ে শ্রদ্ধা এবং স্বাগত জানিয়ে তাদের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।

বেঁদে জনগোষ্ঠী এলাকাভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও বেদে, বাইদা, আবার কোথাও মান্তা নামেও ডাকা হয় এই সম্প্রদায়কে। এদের নিজেদের একটি ভাষাও রয়েছে। বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষার নাম ‘ঠার।’ পুলিশের দায়িত্ব পালনে এবং বেদে জনগোষ্ঠীর অপরাধ ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বর্তমান ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি জনাব হাবিবুর রহমান জানতে পারেন এদের ভাষার কোন লিখিত রূপ নেই। বেদে জনগোষ্ঠীর মায়ায় পড়ে সর্বপ্রথম তিনি এই ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন এবং একান্ত প্রচেষ্টায় বের করেন তার নিজের লেখা গ্রন্থ ‘ঠার’।

বেদে সম্প্রদায় দীর্ঘদিন আমাদের বাংলাদেশে বসবাস করলেও এদের রীতি, আচার এবং সমাজ ব্যবস্থা একেবারেই ভিন্ন। বেদে সম্প্রদায়ের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। এদেশের চলমান সমাজ-সংস্কৃতি থেকে এই জনগোষ্ঠী একেবারেই আলাদা। এখনও এরা আমাদের সমাজের সাথে মিশে উঠতে পারেনি। অতীতের দিনগুলোতে বেশ হাস্যজ্জ্বলভাবে দিন নিপাত করতে পারলেও কালের বিবর্তনে দুর্দশা এবং দারিদ্রতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ঘিরে ফেলেছে এই জনগোষ্ঠীকে। তাই তারা বাধ্য হয়ে পূর্বপুরুষের এই পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় রূপান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছেন। নিজেদের পর্যাপ্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতা না থাকায় অনেকেই জড়িয়ে পড়েছিলেন অসৎ পথে এবং অবৈধ উপার্জনে।

ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি জনাব হাবিবুর রহমানের নিবিড় তত্বাবধানে ঢাকার সাভারে উত্তরণ ফাউন্ডেশন নির্মাণ করেছে একটি স্কুল। বিনামূল্যে এখানে বেদে সম্প্রদায়ের শিশুরা লেখাপড়া করছে। এছাড়াও প্রশিক্ষণের জন্য একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে একটি গার্মেন্টস এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

জনাব হাবিবুর রহমান ২০১৪ সালে যখন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন, তখন থেকেই তিনি বেদে সম্প্রদায়ের জীবন মান উন্নত করা এবং সমাজের মুল স্রোতের সাথে তাদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।