278580773 288038513533427 6835239203220684617 n

চর্মকার বা মুচি এখনও সমাজে অবহেলিত মানুষ

মুচি হচ্ছে এমন এক পেশার লোক, যারা জুতা ও ছাতার মেরামতের কাজ করে। ত্রুটিযুক্ত বা পুরনো জুতা-স্যান্ডেল মেরামত করে রং মাখিয়ে চাকচিক্য সৃষ্টি করাই তাদের কাজ। জুতা বা স্যান্ডেল যখন ছিঁড়ে যায়, তখন আমরা চর্মকার বা মুচিকে খুঁজি।

মুচির কাছে সাধারণত থাকে কালো রঙের একটি কাঠের বাক্স। বাক্সটির ভেতরের অংশ তিন ভাগে ভাগ করা। ওপরের সারিতে ডান দিকে চামড়া, বহু ব্যবহারে ক্ষয়ে আসা কাঠের আয়তাকার ছোট তক্তা। নিচের সারিতে বাঁ দিকে রাখা পেরেক, সুতা, সুচ, চিমটে ও ছুরি। জুতায় ব্যবহার করার জন্য কৌটায় রং। বাক্সের একটি অংশে আছে চামড়ার কাজ করার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম। তারা বাক্সটি রাস্তার পাশে রেখে ওপরে সরঞ্জামগুলো সাজিয়ে রাখে। আবার কখনো কাঁধে নিয়ে ছুটে চলে অলিগলিতে। বর্তমানে রাস্তার ধারে অসংখ্য মুচির সন্ধান মেলে। যারা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মুচি বলে আমরা তাদের সমাজে মুল্যায়ন করতে চাই না। কিন্তু একজন মুচির ঘর থেকেও হতে পারে আব্রাহাম লিংকন এর মত মেধাবী কোন বিজ্ঞানী।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বিশ্বের সেরা রাজনীতিবিদদের একজন। তাঁর বাবাও একজন মুচি ছিলেন। সংসার ঠিকমতো চলত না বলে আব্রাহাম নিজেও একসময় মুচির কাজ করেছেন।

মুচির আভির্ভাব

বাংলা সাহিত্যে মুচি ও তাদের জীবনযাত্রা যেভাবে স্থান করে নিয়েছে, তাতে ধরে নেওয়া যায়, প্রাচীনকাল থেকে সমাজ জীবনে মুচির একটা প্রয়োজনীয় অবস্থান ছিল। তবে সমাজ কাঠামোতে এই পেশাগত সম্প্রদায় কিভাবে আবির্ভূত হলো তার কোনো নিশ্চিত বিবরণ জানা যায় না।

ঐতিহাসিকগণ ভাবেন মুচিরা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তারা নিম্ন শ্রেণির ও সামাজিকভাবে অবহেলিত। তারা গ্রামে বা শহরে মহল্লার এক কোনায় আলাদাভাবে বসবাস করত। এ ধরনের মহল্লা মুচিপাড়া নামে পরিচিত। বর্তমানে মুচিদের জুতা বানানোর পুরনো পদ্ধতিকে দ্রুত বদলে দিয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার। এখন আর এসব পেশা নিম্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ নেই। মুসলিমসহ যেকোনো সম্প্রদায়ের লোক আজ এসব পেশায় যুক্ত হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের একজন মুচির গল্প

আর তেমনি একজন মুচি লিটন রবি দাস। কিশোরগঞ্জের একটি অঞ্চলে তিনিও রাতের আধারে কুপি বাতি জ্বালিয়ে মুচির কাজ করে থাকেন। এখনকার ডিজিটাল যুগেও তার ভরসা সেই ৮০ এর দশকের কুপি বাতি। কারণ তার এডিসনের আবিস্কার এলেক্ট্রিক বাতি জ্বালিয়ে কাজ করার ক্ষমতা নেই। বাংলাদেশে এমন হাজারো নিম্ন শ্রেণির মানুষের অভাব নেই। আর নিম্ন শ্রেনির মানুষগুলো না থাকলে আজ এই উচ্চ শ্রেনীর মানুষগুলোকেই এই কাজ গুলো করতে হতো।

কিশোরগঞ্জের এই লোকটি অভাবের তাড়নায় সারাদিন ক্ষেতে কাজ করে রাতের আধারে কুপি জ্বালিয়ে করে যাচ্ছে মুচির কাজ। তাকে যখন জিজ্ঞেস করি ”আপনি কি খুশি আপনার জীবন নিয়ে”? তার উত্তর ছিল ভাল আছি। কিন্তু কেন যেন এক মায়া কান্না চেপে রেখে কথা গুলি বলছিলেন লিটন রবিদাস। সমাজে তারা যদি একটু সম্মান পেত হয়তো সত্যি আমরা তাদের পরিবারে পক্ষ থেকেই পেয়ে যেতাম আব্রাহাম লিংকন এর মত মেধামী মানুষ।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।