পুলিশ

গ্রামের সুরক্ষায় রাতের অতন্দ্র প্রহরী গ্রাম পুলিশ

গ্রাম পুলিশ বাহিনী বাংলাদেশের একটি গ্রাম ভিত্তিক বিশেষায়িত একটি পুলিশ বাহিনী যারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে গ্রামের সুরক্ষা ও বাংলাদেশ পুলিশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে থাকেন।

গ্রাম পুলিশের ইতিহাস

মধ্যযুগীয় সময় বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে চৌকিদারদের মাধ্যমে পাহারা দেয়া হতো বর্তমানে যারা গ্রাম পুলিশ নামে পরিচিত। ১৮৮০ এর দশকে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং ব্রিটিশ রাজ কর্তৃক ১৮৯২ সালের আইন ১ এর মাধ্যমে চৌকিদারি আইন ১৮৭০ সংশোধন করা হয়।   

বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকারের অংশ ৪৫৬২ টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে গ্রাম পুলিশ বা চৌকিদার বাহিনীর ১০ জন কর্মী রয়েছেন। ২০০৮ সালে, বাংলাদেশ সরকার ঘোষনা করেছিলেন যে গ্রাম পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর মর্যাদা দেওয়া হবে। ২০০৯ সালে বাহিনী সদস্যরা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মজুরি প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করে। ২০১৭ সালের মধ্যেও, তাদের বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাহিনীর ৪৭ জন সদস্যের ব্যক্তিগত আবেদনের পরে বাংলাদেশ হাইকোর্ট একটি রায় জারি করে সরকারকে ব্যাখ্যা করতে বলে যে কেন তাদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গ্রাম পুলিশের কার্যক্রম সমুহ

দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদে ও প্রত্যেকটি গ্রামে এখন গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা আছে। তাদের যে কার্যক্রম রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,

  • গ্রাম পুলিশ রাত ও দিনের বেলা পাহার ও টহলদারী করবেন।
  • অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াধী পর্যবেক্ষন ও অনুসন্ধানে এবং অপরাধিকে গ্রেপ্তারে যথাসাধ্য পুলিশের সহায়তা করবেন।
  • ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউনিয়নকে সরকারী দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবেন।
  • প্রতি পনেরদিন পরপর এলাকার অবস্থা সম্পর্কে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবিহিত করবেন।
  • ইউনিয়ন ও গ্রামের খারাপ চরিত্রের লোকদের পর্যবেক্ষনে রাখবেন তারা কোন খারাপ উদ্দ্যশ্য সাধন করছেন কিনা বা প্ল্যান করছে কিনা। এবং তা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবিহিত করবেন।
  • ইউনিয়নে কোন লোক যার আয় নেই, বা তার কোন পরিচয় নেই, কিন্তু দিব্বি সে এলাকায় চলে বেরাচ্ছে, সেই সকল লোকদের সম্পর্কে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট প্রদান করবেন।
  • দাংগা হাংগামা, বা তুমুল কলহ সৃষ্টি করতে বা জনগনের শান্তি বিগ্নিত করতে পারে এমন সকল বিষয় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবিহিত করা।
  • জন্ম ও মৃত্যু রেজিষ্টার সংরক্ষন এবং এলাকার সব জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদকে অবিহিত করা।
  • মানুষ বা পশুর মধ্যে কোন মহামারি বা রোগ ছড়িয়ে পড়লে এবং ফসলে কোন পোকার আক্রম বেড়ে গেলে ইউনিয়ন পরিষদের কাছে অবিহিত করা। কোন বাধে বা সেচে ক্ষতি বা ত্রুটি দেখা দিলে অনতিবিলম্বে ইউনিয়ন পরিষদকে অবিহিত করা।
  • সরকারী কাজের উদ্দেশ্যে যে কোন স্থানিয় তথ্য সরবরাহ করবেন।
  • খাজনা বা ভুমি উন্নয়ন কর, এছাড়াও বিভিন্ন ফি উত্তলনে রাজস্ব কর্মচারীদের সহয়তা করবেন ইত্যাদি।

এছাড়াও গ্রাম পুলিশ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িতব পালন করে থাকেন যেমন-এলাকার কোন অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে বা মার্ডার হলে লাশ পাহারা দেয়া এবং লাশ থানায় পৌঁছান পর্যমত্ম তার সংগে থাকা। থানার পুলিশ এলাকায় আসলে তাদের সর্বক্ষণের সাথী হওয়া। সরকারি কোন উচু পর্যায়ের কর্মকর্তা এলাকা পরিদর্শনে এলে তাঁকে সাবির্ক সাহায্য করা, কোর্টের মামলা মোকদ্দমার নোটিশ জারী এবং চেয়ারম্যান ও সদস্যদের আদেশানুসারে কাজ করা ইত্যাদি।

এই মানুষগুলো আমাদের রাত্রিকালীন কোন চিন্তা ছাড়া যেন আমরা একটু স্বস্তির সাথে ঘুমোতে পারি সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। আর অথচো আমরা তাদের চৌকিদার বলে কত নিচে চিন্তা করি। আমাদের এই সভাব থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের সমাজে শৃঙ্খলতা আসবে। যার দরুন আমরা একে অন্যের পাশে দাড়াতে পারবো। আর তাইতো দশের লাঠি একের বোঝা, আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশটাকে গড়ে তুলি।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।