housing project

জাতীয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাড়িতে এসে ডাল-ভাত খাওয়ার দাওয়াত দিলেন ঘর পাওয়া মানুষেরা। ঘর হস্তান্তরের সময় ভূমিহীন-গৃহহীনদের অতীতের গল্প শুনে আবেগাপ্লুত হন প্রধানমন্ত্রী। ভূমিহীন-গৃহহীনরাও শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হন। তাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীকে নিজ বাড়িতে দাওয়াত দেন। কেউ আবার বাড়িতে এসে ডাল-ভাত খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ভূমিহীন-গৃহহীন আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে পাঁচটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর হস্তান্তর করেছেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এই ঘর হস্তান্তর করেন তিনি।

বাগেরহাটের রামপালের গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রীকে অতীতের গল্প শোনান আবদুল হান্নান সরদার। তিনি বলেন, ‘আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। নয় ভাই-বোনের সংসারে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে বাওলি পিতার সন্তান জলদস্যুতায় যুক্ত হই। মানুষের জীবন যে কত কষ্টের হতে পারে আমি হান্নান তার প্রমাণ। পানিতে, বাঁধে, সুন্দরবনে, রাতের পর রাত, দিনের পর দিন, খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সমাজে আত্মসম্মানের স্বীকৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বাড়ি-ঘর তো দূরের কথা, এলাকায় ঢুকতে পারব এটাও কখনও কল্পনা করতে পারিনি। আজকে আপনার ঘরের চাবি পেয়েছি। আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আমি এখন দিনমজুরের কাজ করি, ভবিষ্যতে ব্যবসা করে খেতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনার দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমি যেন এদেশকে কিছু দিতে পারি, সেই চেষ্টা করব।

এসময় প্রধানমন্ত্রী প্রশাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যারা আমাদের কাছে, বিশেষ করে সুন্দরবনের যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা কেউ যেন ভূমিহীন-গৃহহীন না থাকে। তাদের প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা প্রসঙ্গে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, আমরা এ পর্বে ১৩ জন জলদস্যু-বনদস্যুকে ঘর দিয়েছি।

ময়মনসিংহের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে উপকারভোগী নাছিমা খাতুন বলেন, আমি একজন অসহায়। আজ থেকে দশ বছর আগে আমার চারটি সন্তানসহ আমাকে রেখে স্বামী চলে যান। তখন আমি খুব অসহায়, কী করব? আমি কোনো উপায় না পেয়ে আমার একজন সন্তান পালক দিয়ে দিই। আমার তিন সন্তানকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকা গিয়ে কাজ করে ওদের লেখা-পড়া চালাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ, আমার বড় মেয়ে ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। প্রধানমন্ত্রী আমি আজকে আপনার ঘরে উঠেছি। আপনার ঘরে উঠে দেখি থাকার রুম, বারান্দা, বাথরুম ও বিদ্যুৎ রয়েছে। এমনকি বাইরে পানির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। আমি হাজারও শোকরিয়া জানাই। আপনাকে কী দিয়ে খুশি করব আমার কাছে কোনো কিছু নাই। দোয়া করি আপনি বেঁচে থাকেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করে নাছিমা খাতুন বলেন, দয়া করে আমাদের কাছে আসবেন। আপনি আমাদের জন্য এত কিছু করে দিয়েছেন, আপনি আসবেন না? অবশ্যই আসবেন। আমাদের বাসায় এসে আপনি ডাল-ভাত খেয়ে যাবেন।

মাগুরা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে পিংকা সরকার নামে এক শিক্ষার্থী অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, আমাদের পরিবারে সাতজন সদস্য রয়েছে। আমার বাবা একজন ভ্যানচালক। মন্দিরের ছোট একটি ঘরে আমরা সবাই মিলে থাকতাম। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে যে টাকা ইনকাম করত, তা দিয়ে সংসার চলত না। তখন আমি ভাবতাম, আমি যদি ছেলে হতাম, তাহলে বাবার পাশাপাশি কাজ করে সংসার চালাতে পারতাম। তাই আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি এখন টিউশনি করি, সেই টিউশনির টাকা দিয়ে আমাদের সংসার মোটামুটি চলে যায়। আমি লেখাপড়া করতাম আর চিন্তা করতাম, আমি যদি চাকরির জন্য আবেদন করি, সেখানে তো স্থায়ী ঠিকানা দরকার। আমাদের তো স্থায়ী ঠিকানা নেই, তাহলে আমাদের কী কখনও স্থায়ী ঠিকানা হবে না। কিন্তু আজ আর সেটা ভাবি না। আপনি আমাদের সুন্দর একটা স্থায়ী ঠিকানা উপহার দিয়েছেন। দুই শতক জমিসহ পাকা বাড়ি পেয়েছি, যেটি ছিল আমার বাবার স্বপ্ন। আপনি যেমন সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, আমি যেন আপনার মতো সোনার বাংলা গড়ে তোলায় অংশ নিতে পারি। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

পঞ্চগড়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাত আশ্রয়ণের ঘর পাওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকে নিজের পড়ার টেবিলে শেখ হাসিনার পোস্টার লাগিয়ে রেখেছে। সে এলাকায় শেখ হাসিনার জান্নাত নামে পরিচিতি লাভ করেছে। অনুষ্ঠানে বিষয়টি জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার জান্নাতের সঙ্গে কথা বলব, কোথায় সে? তখন জান্নাত প্রধানমন্ত্রীকে সালাম দিয়ে বক্তব্য শুরু করে। তখন সে প্রধানমন্ত্রীকে বলে, আমার নাম জান্নাতুল আক্তার। আমি কাজলদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আপনার ছবিগুলো আমার কাছে আছে, আমি প্রত্যেক দিন ছবিগুলো পরিষ্কার করে পড়ালেখা করতে বসি। আপনার ঘর পেয়ে আমরা খুশি আছি, আপনাকে শুধু টিভিতেই দেখি, ছবিতেই দেখি, সামনে কখনও দেখা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে পঞ্চগড়ে দাওয়াত।

লক্ষ্মীপুরের চর কলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দিন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আমাদের ফোয়াগাছা আসেন। তিনি নিজ হাতে মাটি কেটে গুচ্ছগ্রাম আবাসন নির্মাণ করেন। আমি তখন উনার পাশে উপস্থিত ছিলাম। আমার মনে পড়ে উনার নির্দেশে শত শত লোক স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি কেটে বাঁধ নিমার্ণ করেছিলেন। আশ্রয়ণেও মাটি কেটে দিয়েছিলেন। আজকে আপনাকে দেখে বঙ্গবন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। বঙ্গবন্ধু আশ্রয়ণ প্রকল্প করে দিয়েছেন, আপনি আবারও আমাদের এখানে আশ্রয়হীনদের ঘর করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ২১০টি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন, আমিও ২১০ পরিবারের একজন। আমি অসহায় অবস্থায় ছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের জমি দিয়েছেন, সেই জমিতে চাষাবাদ করে ফসল ফলিয়েছি, উন্নতি করেছি। বাকিরাও ভালো আছেন। বঙ্গবন্ধুর মহানূভবতায় আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকব। এসময় প্রধানমন্ত্রী কলাকোপা আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।