images 17
বেপরোয়া গতিতে আরোহন, শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পারা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ নানা কারণে বাইক দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। দুই চাকার এই বাহন সড়ক দুর্ঘটনায় অন্যসব যানবাহনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, প্রতিদিনই খবরের পাতায় কোনো না কোনো সংবাদ থাকবেই বাইক দূর্ঘটনার! যেনো এটি আমাদের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ২৬ জুন, ২০২২ দেশের বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের প্রথম দিনই বেপরোয়া গতিতে রাইড করার কারণে নিযন্ত্রণ হারিয়ে এক্সিডেন করে মারা যায় দুইজন। টনক নড়ে কতৃপক্ষের। রাতেই ঘোষণা দেয়া হয়, পরদিন (২৭ জুন) থেকে পরবর্তী নির্দেশ দেয়ার আগ পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। পজেটিভ থিঙ্ক বিডি’র এই ফিচারে আমরা জানব সাধারণত কোন কারণগুলোর ফলে মোটরসাইকেল দূর্ঘটনা ঘটে থাকে ও কিভাবে সে-সব দূর্ঘটনা থেকে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

images 18

যেসব কারণে সাধারণত বাইক দূর্ঘটনা ঘটে থাকে—
১. ভাঙ্গা রাস্তায় বেখেয়াল ভাবে বাইক চালানো: আমাদের দেশের রাস্তার বেশীরভাগ অংশগুলো খানাখন্দে ভরপুর যার জন্য প্রতিটি যানবাহনকে অনেক নিরাপদে সে সকল রাস্তায় রাইড করতে হয়। দুই চাকার বাহনের জন্য ভাংঙ্গা রাস্তায় রাইড অনেক কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিও বটে। এসব রাস্তায় বেখেয়ালভাবে রাইড করলে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা তাই ভাংঙ্গা রাস্তায় বাইক রাইডের সময় সাবধানতা অবলম্বন করে রাইড করতে হবে।
২. কর্নারিং এর সময় কড়া ব্রেকিং করা: রাস্তায় চলতে গেলে এক প্রকার জীবন যুদ্ধ করে চলতে হয় কারণ নিজে সতর্ক হলেও অন্যের অসতর্কতা কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। অনেক রাইডার আছেন যারা কর্নারিং এর সঠিক ব্যবহার করতে জানেন না যার ফলে কর্নারিং এর সময় তারা ব্যালেন্স হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। কর্নারিং করার সময় কড়া ব্রেক করার ফলে চাকা স্কিড করে ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যেতে পারেন এবং বিপরীত দিক থেকে আসা বাহনের সাথে ধাক্কা লেগে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হতে পারে। কর্নারিং এর সময় স্পীড কম রেখে ও বাইক নিয়ন্ত্রণে রেখে ইঞ্জিন ব্রেক করতে হবে, এতে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
৩. চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা: অনেক সময় দেখা যায় চলন্ত অবস্থায় বাইকারা মোবাইল ফোনে কথা বলে থাকে, এতে করে তাদের মনোযোগ বিঘ্ন ঘটে। ফলে যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই চলন্ত অবস্থায় কোনোরকম মোবাইল গুতা কিংবা মোবাইলে কথা না বলাই উত্তম। আর রাইড করা অবস্থায মোবাইল ফোনে কথা বলা আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধ।
৪. ম্যানহলের কভার কিংবা অপ্রত্যাশিত ভাংঙ্গা খেয়াল না করা: শহরের রাস্তায় ম্যানহলের ঢাকনা দুর্বল হয়ে থাকে কিংবা সেটা খুলে থাকে যেটা সব যানবাহনের জন্য ঝুঁকি। দুই চাকার বাইকের জন্য এটি আরও মারাত্মক ঝুঁকি। দুই চাকার উপর ভর করে চলতে হয় বিধায় এসব ভাংগা খেয়াল না করতে প্রাণঘাতীও হতে পারে। অন্যদিকে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় রাইডের সময় কোথায় কী পরিমানে ভাংগা আছে সেটা আমরা কেউ জানি না কারণ সেগুলো পানি দিয়ে পরিপুর্ন হয়ে থাকে। এসব খাদের মধ্যে বাইকের চাকা পরলে নির্ঘাত বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। রাইডারের এসব ভুলের জন্য প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।
৫. অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে কোন ক্রসিং বা মোড় বেপরোয়া গতিতে পার হওয়া: অনেক সময় দেখা যায় যে ব্যস্ততার জন্য রাইডাররা বেপরোয়া গতিতে রাস্তায় রাইড করছে এসময় অনেকেই খেয়াল করেন না কে কোন দিক থেকে আসছে এবং বিপরীত দিক থেকে আসা বাহন আঁচ করতে পারেন না তার মতি গতি। এমতবস্তায় যদি বেপরোয়া গতিতে কোন বাইকার বাইক নিয়ে মোড় বা ক্রসিং পার হয়ে সেক্ষেত্রে অপরদিক থেকে কোন বাহনের সাথে তার দুর্ঘটনা অনায়াসেই ঘটে যেতে পারে। অনেক নেশাগ্রস্ত বাইকাররা এই কাজটি করে থাকেন এবং তারা জানেন না যে সামনে কী ঘটতে চলেছে।
৬. মোটরসাইকেল মেইন্টেনেন্স না করে ওভারস্পীডে বাইক চালানো: আপনার বাইক দীর্ঘদিন সার্ভিস না করলে কিংবা সময় মত পার্টস পরিবর্তন না করলে সেসব পার্টসের পারফরমেন্স এবং আয়ু কমে যেতে পারে। এরকম অবস্থায় কেউ যদি বাইক রাইড করে তাহলে দুর্ঘটনা হবার শঙ্কা অনেক বেশি। যেমন কেউ ওভার স্পীডে বাইকটি রাইড করলে ইঞ্জিন সীজ হয়ে যেতে পারে অথবা কড়া ব্রেকিং এর সময় তার ব্রেক শু ভেংগে দিয়ে চাকা স্কীড করতে পারে। মেইন্টেনেন্স না করলে এরকম আরও অনেক দুর্ঘটনা হবার শঙ্কা বেশি থাকে।
৭. লুকিং গ্লাসের সঠিক ব্যবহার না জানা: লুকিং গ্লাস বাইকের সেফটি ফিচারস হিসেবে পরিগণিত। আমাদের দেশে বেশীরভাগ নতুন রাইডাররা লুকিং গ্লাসের সঠিক ব্যবহার জানে না যার ফলে তারা না বুঝেই বিভিন্ন মোড়ে না দেখে এদিক সেদিক চলে যায় এবং পেছনে থাকা বাহন তার গতিবিধি বুঝতে না পেরে আঘাত করে এতে করে মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়। অন্যদিকে সামনে থেকে কোন বাহন আসছে অথচ সেটাকে খেয়াল না করে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকাটা বিরাট বোকামি। সামনের দিক থেকে কোন যানবাহন আসছে তার দুরুত্ব পরিমাপ করে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানো উচিত। আমাদের দেশের অনেক বাইকেই দেখা যায় স্টাইল করার জন্য লুকিং গ্লাস খুলে ফেলেছে যেটা মোটেও কাম্য নয়। ১ মিনিটে অন্তত ৫ বার লুকিং গ্লাসের দিকে খেয়াল করা উচিত।
৮. অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে ওভারটেকিং করা: হাইওয়েতে কোন বড় যানাবাহন ওভারটেকিং করার সময় অনেকেই বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের সাথে নিজের ওভারটেকিং গতির সামঞ্জস্য খেয়াল করেন না যার ফলে বাইকার দ্বিধাহীন হয়ে পড়ে এবং এক্সিডেন্টের প্রবণতা বেড়ে যায়।বিশেষ করে রাতের রাইডের সময় গতির সাথে ওভার টেকিং এর সামঞ্জস্য থাকেনা ।যার ফলে রাতের ওভার টেকিং গুলো হয় অনেক বিপদজনক।আমাদের দেশের রাস্তায় বেশির ভাগ এক্সিডেন্ট হয় অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে রাতের বেলা ওভার টেকিং করা।বড় বড় যানবাহন গুলো রাতের বেলা বাইকের গতি বিধি লক্ষ্য করতে পারেন না কারণ রাতে ট্রাক,বাস সহ অন্যান্য বড় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।এদিকে ভোরের দিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় বাইক রাইডিং এর ক্ষেত্রে কারণ বড় বড় যানবাহন গুলো সারা রাত ড্রাইভ করে অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং তারা চেষ্টা করে দ্রুত গন্তব্য স্থলে পৌঁছানোর জন্য।সে জন্য তারা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে পড়ে এবং তারা রাস্তায় ছোট যানবাহন কে সাইড না দিয়ে গতি বেশি রাখার চেষ্টা করে।এ ক্ষেত্রে বাইকের জন্য হতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ।তাই বাইকারদের উচিত অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে ওভারটেকিং না করাএবং রাতের বেলা সাবধানতা অবলম্বন করে রাইড করা।

images 15 1

বাইক দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে কিছু করণীয়—
১. বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালনা পরিহার করা: বেশি স্পিড বা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো রীতিমত বোকামি। এটা কোন বীবত্বের নয় বরং মূর্খে কাজ। মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা বেশির ভাগেই ঘটে বেপরোয়া ভাবে মোটর সাইকেল চালানোর কারণে। অনেকে মনে করেন দ্রুত চালালে খুব তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছা যায়। আপাত দৃষ্টিতে এটা সত্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একদম ভুল। মাত্র ১ সেকেন্ডের সামান্য ভুলের কারণে নেমে আসতে পারে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। তাই সকল বাইকারদের উচিত বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালনা পরিহার করা।
২. রাস্তায় চলার সময় চারপাশে চোখ রাখুন: আপনি বেপরোয়া ভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেননা, আপনি একজন সচেতন মানুষ কিন্তু অন্য গাড়ির ড্রাইভারতো সচেতন নাও হতে পারে যেকোন সময় হয়ত আপনার উপর গাড়ি উঠিয়ে দিতে পারে তাই রাস্তায় বাইক চালানোর সময় সামনে পিছনের গাড়ির গতিবিধি লক্ষ রাখা অনেক জরুরি।
৩. চালানোর আগে পরিক্ষা করে নিন: প্রতিবার বাইক চালানো শুরুর আগে পরিক্ষা করুন যে আপনার বাইকের সিগন্যাল, লাইট , ব্রেক , হর্ন , বেল্ট, শ্যাফট সবকিছু ঠিকমতো কাজ করছে। টায়ার পরীক্ষা করে দেখুন প্রেসার ঠিক আছে কিনা। ইনফ্লেটেড টায়ার আর পুরাতন ব্রেক মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
৪. বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালনার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে: বৃষ্টির সময় রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় ব্রেক কম কাজ করে। এই কারণে বাড়তি সতর্কতা হিসাবে ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হবে, যাতে ব্রেক প্রয়োগ করে অতি সহজেই গাড়ি থামানো যায়। অর্থাৎ ব্রেক প্রয়োগ করে গাড়ি যাতে অতি সহজেই থামানো বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেইরূপ ধীর গতিতে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালাতে হবে।
৫. হেলমেট ও সঠিক পোশাক পরিধান করতে হবে: বাইক চালনার ক্ষেত্রে হেলমেট একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় । যেসব চালক হেলমেট ব্যবহার করেন না তাদের দুর্ঘটনা ঘটলে মাথায় খুব বেশী আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৪০% এরও বেশী। আর এতে ব্রেইন ইঞ্জুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। তাই একটি হেলমেট আপনাকে অনেক বড় ইঞ্জুরির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
নিরাপদ পোশাক হিসেবে জিন্স, জ্যাকেট, হাতের গ্লাভস, কেইস জুতা পরিধান করলে দূর্ঘটনায় বড়ো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিজেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত রাখা যায়।
প্রতিবেদনটি সাজাতে আমরা বাইকবেলি ও মোটরসাইকেল বেলির সহযোগিতা নিয়েছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।