IMG 20220729 200240
পুলিশ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অপরাধপ্রবণ বেদে জনগোষ্ঠীর মাদকের কারবারিসহ অন্যান্য অপরাধ ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে তাদের প্রতি মায়া জন্মায় বর্তমান ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের। এই জনগোষ্ঠী কর্মসংস্থান করার মতো কিছু নাই, তিনি তাদের কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি করলেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো তিনি যে তাদের সাথে কথা বলবেন, তারা বুঝে বাংলা ভাষা এবং তিনিও বুঝেন না তাদের ‘ঠার’ ভাষা। তিনি বেদে জনগোষ্ঠীর ঠার ভাষা শিখতে গিয়ে জানতে পারলেন এ ভাষার কোনো লিখিত রুপ নাই। জন্মের পর বাচ্চারা মা-বাবা, আশপাশের মানুষ থেকে যা শিখে তাই বলে। কিন্তু এর কোনো নির্দিষ্ট করে লিখিত রুপ নাই। তিনি চিন্তা করলেন, এরকম হলে তো এক সময় এ ভাষা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে—যেমনটা হয়েছে পৃথিবীর অসংখ্য অঞ্চলের নিজস্ব ভাষার ক্ষেত্রে; এক সময় পৃথিবীতে সাড়ে সাত হাজার ভাষা থাকলেও, সংরক্ষণের অভাবে তা কমে সাত হাজার ভাষায় ঠেকছে।
prothomalo bangla 2022 03 cac04778 6296 4724 89d4 c8c575c2ce3e Book 17 03 20221
বেদে সম্প্রদায়ের ভাষা ঠার-এ লিখিত প্রথম বই
বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষার প্রতি ভালোবাসা আর ভবিষ্যতে স্বকীয়তার কথা ভেবে তিনি ‘ঠার’ ভাষা সংরক্ষণ করা জরুরি মনে করলেন। এর জন্য তিনি চিঠি পাঠালেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিউটের কাছে। তারা একটা কমিটি করে কিছুদূর কাজ করার পর আবার বন্ধ করে দিলেন এই বলে যে, তাদের পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না ঠার ভাষা সংরক্ষণ করা। ভদ্রলোক এ খবর শোনার পর নিজেই নেমে পড়লেন ঠার ভাষার লিখিত আকারে সংরক্ষণ করতে। তিনি ইতিহাসের তথ্য উপাত্ত ঘাটাঘাটি করে, বিভিন্ন ভাষাবিজ্ঞানীদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করে, দিনের পর দিন বেদে জনগোষ্ঠীর সাথে কাটিয়ে অবশেষে দীর্ঘ ৯ বছর পর ঠার ভাষা সংরক্ষণের জন্য একটা লিখিত বই প্রস্তুত করেছেন।
একজন পুলিশ অফিসার নিজের কাজকর্মের শেষে একটা ভাষা সংরক্ষণে দীর্ঘ ৯ বছর লেগে থেকেছেন—এটা মুখে বলা সহজ কিন্তু বাস্তবে করে দেখানো অনেক কঠিন। সে কঠিন কাজটি তিনি করতে পেরেছেন। উনার এতো ধৈর্য্য হলো কি করে!
ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, যে কাজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিউট করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন সেটা একজন পুলিশ অফিসার তার ধৈর্য্য, সাহস, প্রজ্ঞা আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি ভালোবাসার ফলে করে উঠতে পেরেছেন। ইচ্ছে বাস্তবায়ন করতে অনেকে স্বপ্ন দেখে, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করতে যে পরিমাণ প্রচেষ্টা দরকার কিংবা যে শ্রম দেয়া দরকার তার জন্য যে মোটিভেশান থাকা দরকার—তা সবার পক্ষে সম্ভব না। হাবিবুর রহমান পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে পুলিশ বিভাগে যতগুলো পরিবর্তন এনেছেন, তাঁর মৌলিক কাজের পাশাপাশি একটা অপরাধপ্রবণ জনগোষ্ঠীর অপরাধ ঘাঁটতে গিয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসা আর মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে তাদের কর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়া এবং তাদের নিজস্ব ঠার ভাষা সংরক্ষণ করতে যে প্রয়াস দেখিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ তার প্রাপ্য।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।