maxresdefault 1

মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলে সৃষ্ট বালির চড়ের এক সমৃদ্ধ জনপদের নাম ভৈরব।

যদিও আঠারো শতকের রেনেলের মানচিত্রে ভৈরবের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়  তৎকালে মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পলিবিধৌত বদ্বীপ উলুকানদি নামে পরিচিত ছিল।বলা হয় জেগে উঠা এ চরাঞ্চল ও জলাভূমিতে উলু-খাগড়ার বন জন্মানোর কারণেই স্থানটির প্রথম নাম হয় উলুকান্দি। পরে মুক্তাগাছার জমিদার ভৈরবরায় তার জমিদারী সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নতুন জেগে উঠা এই এলাকায় মানব বসতি গড়ে তোলেন এবং একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। বাজারের পাশেই জমিদার ভৈরবরায় তার জমিদারি পরিচালনা করার জন্য একটি কাচারী ঘর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে জমিদারের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় ভৈরব বা ভৈরব বাজার। তখন স্থানীয় মুসলমান ব্যবসায়ী ছাড়াও দূরাঞ্চলের অনেক হিন্দু পরিবার ভৈরব বাজারেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সওদাগর ও ব্যবসায়ী হিসেবে।

সদর

১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাজার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলে ১৯০২ সালে আই জি এন কোম্পানী ভৈরব বাজারে অফিস এবং একটি স্টীমার ঘাট স্থাপন করেন। এইসূত্রে বার্ক মায়ার কোম্পানী, ডেবিট কোম্পানী, রেলি ব্রাদার্সসহ প্রায় ১০টি কোম্পানী তাদের পাট ক্রয় কেন্দ্র খুলে ভৈরব বাজারকে একটি বিরাট বন্দরে পরিণত করেন। চতুর্থ বছরে ১৯০৬ সালে এ অঞ্চলে একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হলে ভৈরব বাজারে বাণিজ্যিক গুরুত্ব আরো বাড়তে থাকে। পরবর্তী প্রায় ৩ দশক পর ভৈরব বন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য স্থানের রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মেঘনা নদীর উপর “রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ সেতু” নামে একটি রেল ব্রীজ স্থাপন করা হয় এবং এটি নির্মাণে ব্যয় হয় তৎকালীন প্রায় ৬৪ লক্ষ ভারতীয় মুদ্রা। আসাম বেংগল রেলওয়ে এই পুলের উপর দিয়ে প্রথম মালগাড়ী চলাচল শুরু করে ১৯৩৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর এবং তা উদ্ধোধন করেন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের-এ-বাংলা এ,কে ফজলুল হক। ঐ বছরই ৬ ডিসেম্বর থেকে সেতুটির উপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয় এবং স্থাপন হয় ভৈরব বাজার জংশন। যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে নদীপথ, রেলপথ এবং রেলস্টেশন স্থাপন হওয়ার ফলে ভৈরব এলাকাটি একটি সমৃদ্ধ ব্যবসা স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। কালের বিবর্তনে আজও এই বাজারটি টিকে আছে তার অতীত গৌরবকে অবলম্বন করেই।পরে ১৯৫৬ সালে ভৈরব একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার স্বীকৃতি লাভ করে। অতপর ১৯৭১ এ ৯ মাসের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল ভৈরব থানাটি একটি মান উন্নীত থানা ও উপজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

ভৈরব উপজেলার আয়তন অবস্থান

বর্তমানে ভৈরব উপজেলার আয়তন ১২১.৭৩ বর্গ কি.মি.।এটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি বাণিজ্যিক শহর। ভৈরব উপজেলার উত্তরে কুলিয়ারচর উপজেলা, পশ্চিমে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলা, দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা এবং পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। ৮৪ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ভৈরব উপজেলার ইউনিয়ন সংখ্যা ৭টি এবং মৌজা ৩২টি।

অর্থনীতি

ব্রিটিশ আমলে সগৌরবের ব্যবসা অঞ্চল ভৈরব এখনো ব্যবসায় ধরে রেখেছে সেই সুনাম।বন্দরনগরী ভৈরবের বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসায়ী।দেশের কয়েকটি প্রধান কয়লা বিক্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ভৈরব একটি।ভারতের মেঘালয় থেকে সুনামগঞ্জের তাহেরপুরের টেকেরঘাট হয়ে নদীপথে ভৈরবে কয়লা আমদানি করা হয়। ইটভাটা ও রড তৈরির কারখানায় ভৈরব থেকে প্রতি মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজার টন কয়লা যায়। এখানে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে ভাড়ি শিল্প উৎপাদন রড তৈরির কারখানা।

আরো পড়ুন

জুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার পরই ভৈরবের অবস্থান।রয়েছে প্রায় সাত হাজারের অধিক জুতা তৈরির কারখানা। উল্লেখ্য যে এই কারখানা গুলোতে দেশের প্রায় আড়াই লাখ শ্রমিক তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। পোল্ট্রি ব্যবসায় বেশ গতি মুখ রয়েছে এই ভৈরবে। ডিম উৎপাদন, মৎস চাষ, ধান, গম, পাট ও শীতকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয় এই বৈরব উপজেলায়।বন্দর নগরী ভৈরবে রাতের মাছের আড়ৎ বাংলাদেশের অন্যতম মৎস আড়ৎ নামে পরিচিত।জলাভূমির অঞ্চল ভৈরবে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের নানা স্থান তন্মধ্যে মেঘনা ব্রীজ, নদীর ঘাট, মিরার চড় ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু।এছাড়াও ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃত রয়েছে কালিকা প্রসাদ ও আইভী চত্বর।এ উপজেলাতেই জন্ম নিয়েছেন বাংলাদশেরে সাবকে রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদশে আওয়ামী লীগরে বশিষ্টি রাজনীতবিদি জল্লিুর রহমান। তার রাজনতৈকি জীবনার্দশ বাঙ্গালী জাতির  উজ্জল প্রেরনা হয়ে থাকবে চিরকাল।৪টি নদী বেষ্ঠিত প্রায় ৫০ শতাংশ স্বাক্ষরতা হারের এ উপজেলায় মোট ৬টি মহাবিদ্যালয়সহ রয়েছে ১২০ টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক,নিম্নমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ প্রায় ২০টি অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।এবং রয়েছে সময়ের দৃশ্যপট ও সাপ্তাহিক অবলম্বনসহ মোট ৪টি আঞ্চলিক পত্রিকা।যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে সর্বদা সত্যের সাক্ষ্য বহণ করে চলেছে।চ্যানেল আই পজিটিভ থিংক টিম এই অঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে, গ্রামের সবুজ রাস্তা ধরে দৃশ্যধারণ করতে করতে উপজেলার তিন লক্ষাধীক মানুষের একমাত্র নির্ভরতার স্থান ভৈরব থানায় পৌছায় দিনের শেষ ভাগে।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।