FB IMG 1658642302734

কেন আমাদের এত জেনারেশন গ্যাপ?

 

FB IMG 1658642518846
ডা. মুনমুন জাহান | ছবি: সংগৃহীত
>> ডা. মুনমুন জাহান
‘ইশ! আমাদের সময় তো আমরা এরকম করতাম না!’, ‘ইশ! আমার বাবা-মা এত ওল্ড ফ্যাশনেড’, ‘এই বয়সে আমি বাসার সব রান্না করতাম!’, ‘আব্বু-আম্মু এ যুগের মানুষ না। উনাদের সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই!’
খুবই প্রচলিত কথাগুলো, তাই না? আমরা বেশিরভাগই জীবনে কখনো কখনো কথাগুলো নিজেরাই বলেছি, অথবা শুনেছি তো অবশ্যই! মাঝে মাঝে কিন্তু সত্যিই মনে হয় দুই প্রজন্মের ফারাকটা এখন অনেক বড়! বিষয়টা নিয়ে আপনার চিন্তা আসলে কেমন?
আপনি হয়তোবা শুধুই ব্যাপারটা বোঝাচ্ছেন, কিন্তু বাবা বলছে আপনি বেয়াদব বা তর্ক করছেন! কখনোবা মা শুধুই আপনার ভালোর জন্য বাধা দিচ্ছেন, কিন্তু আপনি ভাবছেন উনি আপনার জীবনটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন! এত ভুল বোঝাবুঝির পরেও, একটি গবেষণায় দেখা গেছে এখনো প্রায় ৬৮-৭২% কিশোর-কিশোরী অভিভাবকদের প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে।

FB IMG 1658642302734

পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়করণে অভিভাবকের যেরকম ভূমিকা আছে, সন্তানের তেমনি ভূমিকা আছে। পরিবারের সকল সদস্যদের সমন্বয়েই গড়ে তোলা সম্ভব একটি সুস্থ মানসিক পরিবেশ। এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী—
১. ক্রমবর্তী দুই প্রজন্মের মাঝে ফারাক অধিক দৃশ্যমান হওয়ার মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব। অভিভাবকের জন্য টিনএজার সন্তানকে শাসন এবং স্নেহ করা – উভয়ই জরুরী। এতে আপনার সন্তান মন খুলে আপনার কাছে কথা বলার সুযোগ পাবে। সময় যত এগোবে, সভ্যতার বিকাশে যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও হবে ভিন্ন – এটা উভয়কে বুঝতে হবে। যেমনি পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যকে তার মতো করে সময় দিতে হবে, তেমনি সবচেয়ে ছোট সদস্যটির হতে হবে খেলার সঙ্গী।
২. পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব আপনাদের জেনারেশন গ্যাপ বাড়াবে। একটা সময় ছিল যখন ল্যাপটপ, ফোন সবই ছিল বিলাসিতার উপকরণ; কিন্তু এখন সমাজের নিম্নস্তরের লোকটির হাতেও শোভা পায় স্মার্টফোন। আপনার শৈশব কালের সাথে সন্তানের শৈশবের কিছুটা পার্থক্য থাকবেই – এতোটুকু আপনাকে মেনে নিতে হবে। একইভাবে সন্তানকেও বুঝতে হবে, সভ্যতার অগ্রগতির সাথে তাল মেলাতে পিতা – মাতার কষ্ট হতেই পারে।
৩. একে অপরের প্রতি সম্মানবোধের গুরুত্ব একটি সুস্থ পরিবারের জন্য অনস্বীকার্য। “আমার বাবা-মা ক্ষ্যাত!” তাই বলে আমি তাকে সম্মান দিবো না – এটা কখনোই ঠিক না! একইভাবে, সন্তান বড় হয়ে কি হতে চায়, কিসে আগ্রহবোধ করে – এই মতামতের গুরুত্ব অভিভাবককে দিতে হবে।
৪. সঠিক কথা বলার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করুন। অনেক সিদ্ধান্ত পিতা-মাতার দৃষ্টিকোণ থেকে বেঠিক মনে হতে পারে, কিন্তু সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখুন; হয়তোবা তার বয়সে আপনি একই সিদ্ধান্ত নিতেন! মনে রাখবেন ধীশক্তি এবং বিজ্ঞতা বয়সের সাথে সাথে আসে এবং চিৎকার/রাগ কখনোই ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। শান্তভাবে সঠিক সময়ে বুঝান – এতে উভয়ের উপকার!
সমাজের জন্য তারুণ্যের শক্তি এবং বয়স্কদের পান্ডিত্য উভয়ই জরুরী। আসুন, নতুন করে একবার চেষ্টা করে দেখি- আমরা এই প্রজন্মের বিশাল ফারাক কমাতে পারি কিনা!

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।