peace
জাতীয়: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আর্তমানবতার সেবা দিয়ে বিশ্বের ৪০টি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ। ৪০টি দেশে জাতিসংঘের ৫৪টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন হয়েছে। এতে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৯ জন সদস্য অংশ নিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের আটটি দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ছয় হাজার ৮৩২ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছেন।
১৯৮৮ সাল ইরাক-ইরান সামরিক মিশনে ১৫ জন মিলিটারি পর্যবেক্ষক নিয়ে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের যাত্রা শুরু থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর সর্বোচ্চ পেশাদারি মনোভাব, আনুগত্য ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাদের অনন্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে এবং আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা-মিশনে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বুধবার (২০ জুলাই) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, মো. নাসির উদ্দিন ও বেগম নাহিদ ইজাহার খান অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য এবং বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার বিপজ্জনক এলাকায় কর্মরত কর্মীদের ঝুঁকিভাতা দেওয়ার ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়।
কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ব শান্তিরক্ষায় দীর্ঘ ৩৪ বছরের পথ চলায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন দেশের পরিচালিত জাতিসংঘ শান্তি মিশনে গৌরবের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৭০১ জন নারী শান্তিরক্ষী সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে মোট ৩৭২ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত আছেন।
বিশ্ব শান্তিরক্ষায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ১৩৯ জন জীবন বিসর্জন দিয়েছেন ও ২৪২ জন আহত হয়েছেন। এ বছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন করে ৪৯১ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন সুদানের আবেয়িতে মোতায়েন হয়েছে। দক্ষিণ সুদান ও সুদানের আবেয়িতে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে একজন মেজর জেনারেল ও একজন ব্রিগেডিয়ার পদবির কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান ও মালিতে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে একজন করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ব্রিগেডিয়ার পদবির একজন কর্মকর্তা চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাফল্য ও অবদান
কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রপতির অনুপ্রেরণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী অন্যতম প্রধান দেশ। বর্তমানে শান্তিরক্ষী প্রেরণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী অংশগ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিগত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৪, ২০১৫ সালে প্রথম স্থান এবং ২০১০, ২০১২, ২০১৩, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে।
গত ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সহআয়োজক হিসেবে ইউনাইটেড পিসকিপিং মিনিস্ট্রিয়ালের প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। সিয়েরালিওনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সিয়েরালিওনের রাষ্ট্রপতি বাংলাভাষাকে সেদেশের দ্বিতীয় দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জাতিসংঘের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মোতায়েনরত স্টাফ অফিসারদের ১৬ শতাংশ মহিলা স্টাফ অফিসার। ভবিষ্যতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী শান্তিরক্ষী মোতায়েনের জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। মালিতে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ ও সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলায় মাইন রেসিসট্যান্ট অ্যাম্বুস প্রোটেকটেড ভেহিকেল মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া সি১৩০-জে এয়ার ক্রাফট ও নাইট ভিশন সুবিধাসম্পন্ন হেলিকপ্টারসহ আধুনিক সরঞ্জামাদি মিশন এলাকায় পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
মালিতে আর্মড হেলিকপ্টার ইউনিট মোতায়েনের পরিকল্পনা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশর যৌথ উদ্যোগে মিশন এলাকায় আননেমড এয়ারক্রাফট সিস্টেম (ইউএএস) ইউনিট মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গঠিত উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি চিফ অব ডিফেন্সে বাংলাদেশ, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাষ্ট্র। বর্তমানে বাংলাদেশ নেটওয়ার্কটির চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে উইমেন পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিবিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার বাংলাদেশে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।