Ataikula Sobuj Songket Thumbnail jpg

তিনটি উপজেলা মানচিত্র ও তিনটি সংসদীয় আসনের আওতাভুক্ত একটি প্রশাসনিক থানা! যার নাম আতাইকুলা। সুনামধন্য পাবনা জেলার সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন যথা আতাইকুলা ও সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন, সাঁথিয়া উপজেলার ২টি ইউনিয়ন যথা আর-আতাইকুলা ও ভূলবাড়ীয়া ইউনিয়ন এবং   লক্ষ্মীপু র ইউনিয়ন নিয়ে ২০০১ সালে আতাইকুলা থানা গঠিত হয়। তিনটি আলাদা আলাদা প্রশাসনিক মানচিত্রের ৫টি ইউনিয়ন মিলিয়ে আতাইকুলা থানার সীমানা নির্ধারণ হয় ১৮৫.০৯ বর্গ কি.মি.। যেখানে মোট ভোটার সংখ্যা বর্তমানে দেড় লক্ষাধিক এবং জনসংখ্যা তিন লাখ ৫৭ হাজার। অঞ্চলটি পাবনা-১, পাবনা-৪ ও পাবনা-৫ তিনটি সংসদীয় আসনের অধীনে ন্যস্ত থাকায় প্রশাসনিক কাজে জনগণের অনেকাংশেই দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এ দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয়রা আতাইকুলা থানাকে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা ঘোষনা করার দাবি করে আসছে । এটি বাস্তবায়িত হলে আতাইকুলা থানা অঞ্চলের মানুষের প্রশাসনিক ও দপ্তরিক কাজে একাধিক উপজেলায় দৌড়াদৌড়ির ভোগান্তি সহজেই মিটে যাবে। অন্যদিকে নির্বিঘ্নেই চলছে আতাইকুলা থানা পুলিশের কার্যক্রম।

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমানের নির্দেশনায়, পাবনা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীর নেতৃত্বে আতাইকুলা থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে মোঃ হাফিজুর রহমান অত্যান্ত সততার সাথে দীর্ঘ ১ বছর পাচ মাস অত্যান্ত সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে গত ৮ নভেম্বর বদলী হয়ে বর্তমানে পাবনা জেলার ফরিদপুর থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আতাইকুলা থানায় থাকা-কালিন সে অঞ্চলের সন্ত্রাস, মাদক-চোরাকারবাড়িদের চিহ্নিত করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও সম্পূর্ণ এলাকাকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য অঞ্চলে পরিণত করেন।

 

 

আতাইকুলা! এটি পাবনা জেলা শহর থেকে মাত্র ২০কি.মি. দক্ষিণে ঢাকা-পাবনা মহসড়কের কোল ঘেষে অবস্থিত পাবনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। এ জনপদটি প্রশাসনিক নামে দুই দশকের হলেও আতাইকুলা নামের ঐহিত্য শতবছরের অধিক সময় ধরে চলমান রয়েছে। সেই বৃটিশ আমল থেকেই আতাইকুলা তাত পণ্যের হাট বিখ্যাত। বর্তমানে এটি দেশের শীর্ষস্থানীয় লুঙ্গির হাট। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার পাইকারি লুঙ্গির হাট বসে এখানে। এ হাটে সারাদেশ থেকে চার থেকে পাচ হাজার পাইকার আসেন তাদের পন্য কেনা-বেচার জন্য। প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে স্থানীয়দের ধারণা। যা আতাইকুলা জনপদের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি মানদন্ড নিরুপণ করে।

আতাইকুলা থানা অঞ্চললে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান নেই। তবে থানার চড়াডাঙ্গা এলাকায় একটি পীর কেবলা মাজার রয়েছে। আয়তন সীমান্তে ছোট একটি মানচিত্র হলেও শিক্ষা-দিক্ষায় বেশ এগিয়ে আছে এ জনপদের মানুষ। পরিসংখ্যান এখানকার ৬৯.৬৬ শতাংশ মানুষই এখন শিক্ষায় আলোয় নিজের জীবনকে আলোকিত করেছেন। এ থানা অঞ্চলের মানুষ প্রধানত মুসলীম সংখ্যা-গরিষ্ট। রয়েছে কিছু ক্রীষ্টান ও হিন্দু সম্প্রদায়। খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য এ অঞ্চলে রয়েছে একটি খ্রীষ্টীয়ান চার্চ এবং একটি আর্নল্ড মেমোরিয়াল খ্রীষ্টিয়ান মেডিকেল সেন্টার। এককালের অসংখ্যা খাল-বিলের এ জনপদটি এখনো তার ঐতিহ্যের কুঠরিতেই নিজেকে ঘিরে রেখেছে। মাটির বুকে জায়গা দিয়ে সবুজ অরণ্য। তারই মাঝে বয়ে গেছে একটি জাতীয় মহাসড়ক। মুলত আতাইকুলার জনবসতি ও সকল বিশেষ স্থাপনাগুলো এই মহাসড়ককে কেন্দ্র করেই। একসময় এ মহাসড়কটিই ছিলো উত্তর বঙ্গের প্রবেশদার।

ইছামতি নদীর কোলে গড়ে ওঠা আতাইকুলা থানা অঞ্চলটি মুলত কৃষি নির্ভর একটি সমতল ভূ-খন্ড। এখানকার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজ ও ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রায় সকল ধরণের শস্য ও সবজি উৎপাদন হয় এখানে, বিশেষ করে ধান, ষরিষা, পাট ও পেয়াজ, রসুন চাষের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে আতাইকুলা কৃষকদের মাঝে। তাছাড়া আতাইকুলা থানা অঞ্চলের মোট ১০ শতাংশ মানুষ বস্ত্রশিল্পের সাথে জড়িত। বাকী ১০ শতাংশ মানুষ অন্যান্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। এ থানা নগরটি শিল্প নগর হিসেবে পরিচিত না হলেও এখানে রয়েছে একটি বৃহৎ জুট মিল।

এছাড়াও আতাইকুলার বনগ্রাম এলাকায় রয়েছে কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, গঙ্গারামপুরে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগসহ আতাইকুলা বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত নানা প্রাতিষ্ঠাণিক অবকাঠামো যা আতাইকুলা থানাবাসীর দৈনন্দিন প্রযোজন মেটাতে সাহায্য করছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পন্য রপ্তাণিকারক প্রতিষ্ঠান স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরীর জন্মভুমি এই আতাইকুলা থানা। তাছাড়া আরও অনেক গুনি খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের জন্মভুমি এই থানা অঞ্চল।

আতাইকুলা থানার প্রধান শহরটি গড়ে উঠেছে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক ঘেষে। যা আতাইকুলা বাজার হিসেবে পরিচিত। বাজারের পাশেই মহাসড়ক সংলগ্ন রয়েছে আতাইকুলা থানা ভবন। এ থানায় কর্মরত রয়েছে অফিসার ইনচার্জসহ প্রায় ৫০জন পুলিশ সদস্য। গত ৮ নভেম্বর মোঃ হাফিজুর রহমান বদলী হয়ে ফরিদপুর থানায় যোগদান করেন এবং ফরিদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান ৯ নভেম্বর আতাইকুলা থানায় অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আতাইকুলা থানা অঞ্চলটি ছিলো একসময় ভয়ংকর অপরাধীদের অভায়ারণ্য এলাকা। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশের বিবিধ কার্যকরি পদক্ষেপে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে।

সম্পূর্ণ থানা এলাকাকে নিরাপদ রাখতে থানার পাশাপাশি রয়েছে দুটি পুলিশ ক্যাম্প। সদর উপজেলাধীন সাদুল্লাপুর ইউনিয়ের দুবলিয়া স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প আরেকটি সাথিয়া উপজেলাধীন আর-আতাইকুলা ইউনিয়নে অবস্থিত বনগ্রাম অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। এ স্থায়ী ও অস্থায়ী ক্যাম্প দুটিতে আতাইকুলা থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে আরও মোট ২৬জন পুলিশ সদস্য অঞ্চলের আইন শৃংখলা রক্ষায় কাজ করছে। তাছাড়া থানার আওতাধীন পাচটি ইউনিয়নে রয়েছে পাচটি বিট অফিস। এসকল বিট অফিসে স্থানীয় ক্ষুদ্র সমস্যাগুলো সমাধান কল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।