বাঙ্গরা বাজার

বাঙ্গরাবাজার… মুরাদনগর উপজেলার একটি বিশেষ থানা অঞ্চল। যেখানে আজও স্মৃতির চাদরে গেঁথে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাঁশির করুন সুর ও তাঁর রচিত সাহিত্যকর্ম। তবে, এ অঞ্চলটি, ১০ বছর আগেও মুরাদনগর থানার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। স্থানীয়রা, ২০১৩ সালের এক জনসভায় বাঙ্গরাবাজারকে আলাদা থানা করার জন্য আবেদন করে। সে প্রেক্ষিতে, ২০১৫ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুরাদনগর থানাকে পৃথক করে ১০টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে বাঙ্গরাবাজার নামে নতুন থানার অনুমোদন দেন। তার পর, ২০১৬ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকেই বাঙ্গরাবাজার থানা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

বর্তমানে কেমন আছে এ অঞ্চলের জনসাধারণ? চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক জনাব নুরেআলম মিনার একনিষ্ঠ কর্মদক্ষতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে;  কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন আব্দুল মান্নান বিপিএম বার। তিনি তাঁর কর্মপরায়ণতায় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে তাঁর যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই নিবিড় তত্ত্বাবধানে মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলামের আওতাধীন অঞ্চল বাঙ্গরাবাজার থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন মোঃ শফিউল আলম। কিভাবে চলছে এ অঞ্চলের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি? অপরাধ প্রবণতাই বা কেমন? এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর নিয়ে সবুজ সংকেতের আজকের আয়োজনে থাকছে, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, বৈচিত্রময় অঞ্চল ও দর্শনীয় স্থানসমূহ সহ সকল বিষয়াদি নিয়ে আজকের সবুজ সংকেত – বাঙ্গরাবাজার থানা।

ঢাকা থেকে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এবং কুমিল্লা জেলা সদর হতে ৪৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত একটি নবগঠিত থানা অঞ্চল বাঙ্গরাবাজার। এ থানার আওতাধীন ইউনিয়ন সমূহ হলো; শ্রীকাইল, আকুবপুর, আন্দিকোট, পূর্বধইর পূর্ব, পূর্বধইর পশ্চিম, বাঙ্গরা পূর্ব, বাঙ্গরা পশ্চিম, চাপিতলা, উত্তর রামচন্দ্রপুর ও টনকী ইউনিয়ন। 

মুক্তিযুদ্ধের জ্বালাময়ী স্মৃতি আজও বহন করে আছে বাঙ্গরাবাজার বাসী। সেসময় এ অঞ্চলটি ২নং সেক্টরের অধীনে ছিলো। ৭ই নভেম্বরে সংঘটিত চাপিতলার যুদ্ধের স্মৃতি আজও বহন করে আছে এ অঞ্চলের প্রবীণেরা। এ যুদ্ধের মাধ্যমেই ৫৮ জন পাকসেনা ও বেশকয়েকজন রাজাকার নিধন করে শত্রুমুক্ত হয়েছিলো এই বাঙ্গরাবাজার। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা স্মৃতিচারণে এবং কল্যাণে নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বাঙ্গরাবাজার শাখা।

বর্তমানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে গেছে এ এলাকায়। এ অঞ্চলে মোট শিক্ষার হার ৪৬ শতাংশ। এখানেই রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপিঠ শ্রীকাইল সরকারি কলেজ সহ মোট ৫টি কলেজ, ৬০টিরও বেশী প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রায় ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা। 

বাঙ্গরাবাজার থানা পুলিশ এর কর্মতৎপরতায় বেগবান হচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি, সমৃদ্ধ হচ্ছে জনজীবন। জমিতে নতুন ফসল বোনার আনন্দ লেগেই থাকে এ অঞ্চলের কৃষকদের মুখে। দেখা যায়, হলুদ সরষে ফুলের সুবিশাল মাঠ। বেশিরভাগ মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি হলেও, এ এলাকার মানুষজন ব্যবসা, চাকরি সহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।

এটি একটি থানা অঞ্চল হওয়ায় থানাবাসী প্রায়শই তাদের উপজেলাধীন মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহন করে থাকে। তাছাড়াও এ অঞ্চলে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।

বাঙ্গরাবাজারের দৌলতপুর এখনো আঁকড়ে ধরে আছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী নার্গিস স্মৃতি। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনি ৫ বার এসেছিলেন এ এলাকায়। এই দৌলতপুরে বসেই কবি নজরুল রচনা করেন, প্রায় ১৬০টি গান, ১২০ টি কবিতা। তাঁর সেই শ্বশুর বাড়ি, পুকুরঘাট, ব্যবহৃত খাট আজও স্মৃতি হয়ে আছে থানাবাসীর হৃদয়ে। নির্মিত হয়েছে নজরুল তোরণ ও কবি নজরুল মঞ্চ।

এ অঞ্চলের আন্দিকুট ইউনিয়নে রয়েছে সিদ্বেশ্বরী সার্বজনীন দেব মন্দির। প্রায় ১০০ বছর আগে গঙ্গা বিষ্ণু ঠাকুর এই বটগাছে ধ্যনমগ্ন হন। তাঁর মৃত্যুর পর এই বটবৃক্ষকে ঘিরেই ক্রমান্বয়ে সিদ্বেশ্বরী আশ্রম বা ধাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে প্রায় ১৪০ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত এ আশ্রমে প্রতিদিন ভীর করেন অনুসারীরা।

এখানেই রয়েছে, ২৫০ বছর আগে নির্মিত অনিন্দ্য কারুকাজে তৈরি রূপবাবু জমিদার বাড়ি। জানা যায়, জমিদার রূপবাবু ব্রিটিশ সরকারের রায় বাহাদুর উপাধিপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি তাঁর মা শান্তমণি দেবীর নামে প্রজাদের চিকিৎসার জন্য একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন যা এখন রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।