Bramhanpara

সালদা নদী বেষ্টিত ভারত সীমান্তঘেষা এক প্রাচীন জনপদ ব্রাহ্মণপাড়া। জানা যায় ১৭৫৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এক ইংরেজ কোম্পানি বর্তমান ঘুংঘুর নদীর পূর্ব তীরে ব্যবসায়িক কুঠি স্থাপন করে। তারা তাদের হিসাব রক্ষনের জন্য এক ব্রাহ্মণ গোত্রের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। সেই ব্রাহ্মণ মহাশয়, এ এলাকায় বসতি স্থাপন করলে কালক্রমে তা ব্রাহ্মণপাড়া হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে।

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এ অঞ্চলটি কসবা থানার অধীনে ছিল যা ১৯৫৪ সালে বুড়িচং থানার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬৮ সালে ব্রাহ্মণপাড়া অঞ্চলে ফাঁড়ী প্রতিষ্ঠিত হলে ক্রমশ গুরুত্বলাভ করে। অতঃপর ১৯৭৬ সালে, বুড়িচং থেকে বিভক্ত হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া আলাদা থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করে যা পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ৭ই নভেম্বর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে উপজেলায় উন্নীত হয়।

চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের প্রধান অভিভাবক তথা ৬১তম উপ মহা-পরিদর্শক নুরেআলম মিনা ডিআইজি পদে যোগদানের পর থেকেই কুমিল্লা জেলাকে অপরাধমুক্ত রাখতে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে চলেছেন। তাঁরই নেতৃত্বে কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন আব্দুল মান্নান বিপিএম বার। তিনি তাঁর কর্মপরায়ণতায় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে তাঁর যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও নৈতিকতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই নিবিড় তত্ত্বাবধানে দেবিদ্বার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শাহ্‌ মোস্তফা তারিকুজ্জামানের আওতাধীন অঞ্চল ব্রাহ্মণপাড়া থানায় অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন এস. এম. আতিক উল্লাহ। আজকের আয়োজনে থাকছে, এ থানা অঞ্চলের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, বৈচিত্রময় অঞ্চল ও দর্শনীয় স্থানসমূহ সহ সকল বিষয়াদি নিয়ে সবুজ সংকেত – ব্রাহ্মণপাড়া থানা।

ঢাকা থেকে ১০৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এবং কুমিল্লা জেলা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটি গ্রামীণ জনপদ ব্রাহ্মণপাড়া। এটি একটি উপজেলার অধীনে মোট ৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত থানা অঞ্চল। ইউনিয়নসমূহ হলো, মাধবপুর, শিদলাই, চান্দলা, শশীদল, দুলালপুর, ব্রাহ্মণপাড়া সদর, সাহেবাবাদ, মালাপাড়া। এ এলাকার মোট আয়তন ১২৮ দশমিক ৯ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা ২ লক্ষাধিক। তাদের সার্বক্ষণিক আইনি সেবা প্রদানের লক্ষে দেবিদ্বার সার্কেল এর আওতায় কাজ করে যাচ্ছে ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ। এ অঞ্চলের পূর্ব দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে দেবিদ্বার ও মুরাদনগর উপজেলা, উত্তরে কসবা ও মুরাদনগর উপজেলা এবং দক্ষিণে বুড়িচং উপজেলা অবস্থিত।

৭১ এর রণাঙ্গনে ব্রাহ্মণপাড়া অঞ্চলের রয়েছে গৌরবান্বিত ইতিহাস। সেসময় এ এলাকা ২নং সেক্টরের অধীনে ছিলো। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পরপরই জাগ্রত হতে থাকে মুক্তিকামী জনতা। জুনের শেষদিকে ছকার মার পুলের নিকট পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে ১৮জন পাকসেনা নিহত হয়। আবার ঘুংঘুর নদীর তীরে হোলাইমুড়ীতে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলে ১৫জন হানাদারদের পরাস্ত করে দামাল ছেলের দল। পাকসেনারা টিকতে না পেরে ক্যাম্প স্থাপন করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে শতাধিক নিরীহ বাঙালিদের। পরবর্তীতে বিভিন্ন ছোট বড় অপারেশনে ক্রমশ পিছু হটতে থাকে পাকসেনারা। তাদের নৃশংসতার স্মৃতি আজীবন স্মরণ রাখতে নির্মিত হয়েছে ১টি গনকবর ও ২টি বধ্যভূমি।

স্বাধীনতার এতো বছর পর নতুন উদ্যোমে সচল হয়েছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি। ব্রাহ্মণপাড়া থানা অঞ্চলের ৩ ভাগের ২ ভাগ পরিবারই কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। কৃষকেরা প্রধান কৃষি ফসল হিসেবে ধান, সরিষা, আলু, পান ও শাকসবজির ফলন করে থাকেন। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু পরিবার মৎস্য চাষ, হাঁস মুরগির খামার ও গবাদিপশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে।  তারা তাদের উৎপাদিত শস্য এবং খামারী পন্য স্থানীয় ৫টি হাটবাজার সহ জেলা সদর ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে থাকে। তবে এ অঞ্চলের মানুষের বেশ কিছু অংশ চাকরি, ব্যবসা এবং প্রবাসে থেকে অর্থনীতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের এলাকার প্রত্যেকটি হাটবাজারে সার্বক্ষণিক টহলসহ, সব জায়গায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ফলে থানাবাসী স্বস্তি পাচ্ছে।

এসব কর্মতৎপরতায় প্রসংশা পাচ্ছে ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশ। চট্রগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক নুরেআলম মিনার এর নেতৃত্বে, কুমিল্লা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বিপিএম বার দেবিদ্বার সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার শাহ্‌ মোস্তফা তারিকুজ্জামানকে সময়উপযোগী দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরই ধারাবাহিকতায়, দেবিদ্বার সার্কেল অফিসের আওতাধীন ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ এস. এম. আতিক উল্লাহ গত ৭ই নভেম্বর ২০২৩ তারিখে যোগদান করেই পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

বর্তমানে এ অঞ্চলটিতে ক্রমান্বয়ে উন্নতি সাধিত হচ্ছে। বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলার মান সমুন্নত থাকায় উন্নয়ন গুলো দৃশ্যমান হয়েছে। কুমিল্লা-৫ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এম এ জাহের সড়কপথ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তিনি এলাকার সার্বিক উন্নয়নে প্রথম থেকেই উদ্যোগী হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যায় প্রকল্পাধীন এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে অচিরেই ব্রাহ্মণপাড়া বাসীর আশার আলো ফুটবে। এ অঞ্চল দিয়েই বয়ে গেছে কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়ক। তাছাড়া কুমিল্লা-সিলেট হাইওয়ের কল্যাণে সড়কপথে নানা জায়গায় যোগাযোগ সহজতর হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক হয়ে কুমিল্লা জেলা সদর এবং জেলা সদর থেকে সরাসরি ব্রাহ্মণপাড়ায় যাতায়াত করতে পারে অঞ্চলের মানুষ। তাছাড়া সালদানদী রেলওয়ে স্টেশন ও শশীদল ইউনয়নে রেল স্টেশন থাকায় রেলযোগেও সারাদেশে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। রয়েছে মোট ৭৩ কিলোমিটার পাকারাস্তা, ১১ কিলোমিটার আধা-পাকা রাস্তা, ২৭০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাসহ ১০ কিলোমিটার রেলপথ।

স্বাস্থ্যখাতেও সুফল পাচ্ছে ব্রাহ্মণপাড়াবাসী। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে রয়েছে ৫০শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৩টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক। তাছাড়া থানাবাসীর বিভিন্ন প্রয়োজনে সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা যেমন, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস, হিসাবরক্ষণ অফিসারের কার্যালয়, কৃষি অফিসারের কার্যালয়, নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, সার্ভার স্টেশন, সমাজসেবা কার্যালয়সহ বিভিন্ন আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

শিক্ষাখাতে আলোর মুখ দেখছে এলাকাবাসী। এ অঞ্চলে মোট শিক্ষার হার ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ। রয়েছে মোট ৯টি কলেজ, ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ১৯টি মাদ্রাসা। অসাম্প্রদায়িক এ অঞ্চলটিতে হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সম্মিলিত বসবাস। তাদের ধর্মীয় উপাসনার জন্য রয়েছে মোট ১৫৫টি মসজিদ, ১২টি মন্দির ও ৫টি মঠ।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।