valuka Sobuj Songket Thumbnail jpg

রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৯৪ কি.মি. উত্তরে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যার নাম ভালুকা। এটি বাংলাদেশের প্রথম মডেল থানা এবং দেশের অন্যতম বিসিক শিল্প নগরী। ভালুকাকে ময়মনসিংহের দরজা বলা হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় চারলেন মহাসড়ক পথে ময়মনসিংহ বিভাগে প্রবেশ করতে হলে প্রথমেই যে উপজেলার সীমানা পাওয়া যায় সেটাই ভালুকা উপজেলা। উপজেলাটি তিনটি জেলা মানচিত্রের সীমানা ঘিরে অবস্থিত।

এর উত্তরে ত্রিশাল, পূর্বে গফরগাঁও ও উত্তর-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া উপজেলা। পশ্চিমে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর ও ঘাটাইল উপজেলা এবং দক্ষিণে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা। ভালুকা উপজেলা যেহুতু তিনটি জেলা ও ৬টি উপজেলার সীমানাকে স্পর্শ করেছে সেহুতু নির্দিধায় বলা যায় যে, এ অঞ্চলে প্রতিদিন হাজার হাজার বহিরাগত মানুষ যাতায়াত করে থাকে। তাছাড়া ভালুকা ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম একটি শিল্প নগরী হওয়ায় এ অঞ্চলের একটি বড় অংশ বহিরাগত অস্থায়ী বসবাসকারী।

 

 

সবুজ অরন্য ঘেরা একটি বিশাল জনপদ ভালুকা। এ জনপদের পল্লী এলাকাগুলো ভিষন মায়াময়। সাড়ি সাড়ি গাছের সুনীবিড় ছায়ায় একেকটি গুচ্ছ বসতি। তারই ফাঁকে ফাঁকে কৃষাণের ফসলের মাঠ। এ মাঠেই খেলা করে পাড়ার কিশোরেরা। এ মাঠেই সোনা ফলায় গায়ের কৃষক। নানা রকম মৌসুমী সবজির পাশা-পাশি ধান ও পাট চাষে ভরপুর থাকে কৃষি জমিগুলো। পাখির চোখে দেখলে ভালুকার এই জমি ও পল্লী বসতিগুলো ভিষন সুন্দর লাগে। বসতির চতুরপাশে জেগে ওঠে সরু কাচা-পাকা সড়ক। পল্লীকে ভেদ করে বয়ে চলা নদীর দৃশ্য আরও মায়াময়! গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে নদীর নীবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এ উপজেলায়  মোট ৭টি নদী রয়েছে। তারমধ্যে অন্যতম নদীটির নাম খিরু। এটি শীতলক্ষার একটি শাখা নদী। যা ভালুকা বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এককালে ভাটি অঞ্চলের মানুষের অনবরত যাতায়াত ছিল এইনদী পথে। সময়ের ব‍্যবধানে যা আজ বিলুপ্তির পথে। নদী ছাড়াও ভালুকায় রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল, হাওড়-বাওড়। প্রত্যেকটি গ্রামেই দেখা মেলে এমন জলাশয়ের। অধিকাংশ জলাশয়েই বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। এসব জলাশয়গুলো ভালুকার সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের প্রধান অনুসঙ্গ ।

ভালুকা উপজেলার মোট গ্রামের সংখ্যা ২৮৫টি। এই ২৮৫টি গ্রামকে সমন্বয় করে সম্পূর্ণ ভালুকাকে ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে ভাগ করা হয়েছে। উপজেলাটির বর্তমান আয়তন ৪৪৪.০৬ বর্গ কি.মি.। যা বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলার একটি বৃহত্তম উপজেলা। অঞ্চলটি ১৯১৭ সালের আগ পর্যন্ত গফরগাঁও থানার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। পরে সময়েরে তাগিদে গফরগাঁও থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ন করে ভালুকা নামে আলাদা থানার জন্ম হয়। লোকমুখে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলে নীলকর সাহেবগণ এ অঞ্চলে আসতেন পশু শিকারের জন্য। তখন এ এলাকা অধিকন্তু জঙ্গলেপূর্ণ ছিলো। জঙ্গলে অন্যান্য পশুর চেয়ে ভাল্লুক বেশি দেখা যেত। নীলকর সাহেবগণ তাই এ এলাকাকে ভাল্লুক এলাকা বলে সম্মধন করতেন। সময়ের ব্যবধান ভাল্লুকের এলাকাটি ভালুকা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। যদিও ভালুকা নামকরণের আরও কয়েকটি জনমত প্রচলিত রযেছে। পরবর্তীতে ভালুকা গ্রাম ও ভালুকা বাজারের সুনাম থাকায় থানার নামটি ভালুকা থানা নামেই স্বীকৃত হয়। পরে ১৯৮৩ সালে এটি উপজেলা মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে।

ভালুকা উপজেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। যার মোট পরিবারের সমষ্টি প্রায় ৮০ হাজার। উপজেলার অর্থনীতির প্রধান খাত-শিল্প যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অসংখ্য টেক্সটাইল মিলস, ঔষধ কারখানা, সিরামিক শিল্প, স্পিনিং মিলস, কোমল পানীয় কারখানা, স্যালাইন কারখানা, ফিস ফিড, চালের মিল, মোটরযান কারখানা, গ্লাস কারখানা ও আন্তর্জাতিক মানের পোশাক শিল্প কারখানার মত অসংখ্যা ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বর্তমান ভালুকায়।

ভালুকার হাতিবেড় গ্রামে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম কুমির প্রজনন খামার রেপটাইলস। বর্তমানে এ খামারে কুমিরের সংখ্যা আড়াই হাজারের অধিক। বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার এই ফার্ম থেকে কুমিরের মাংস, চামড়া, দাঁত ও হাড় রপ্তানি করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রচুর কুমির রপ্তানি হচ্ছে।

সর্বপরি বলা যায়, ভালুকা একটি শিল্প নির্ভর ও বাণিজ্যিক নগরী। এ নগরীর নিরাপত্তা প্রদান করা ভালুকা থানা পুলিশের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের মুখে ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, পিপিএম এর নেতৃত্বে অত্যান্ত সাহসিক ভূমিকা পালন করছে ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন। তিনি পজিটিভ থিংক এর ক্যামেরায় ভালুকা জনপদ সম্পর্কে আরও অনেক গুরুত্বপূর্র্ণ তথ্য তুলে ধরেন।

 

ভালুকা মডেল থানা এলাকা যেমনি ভাবে শিল্প সম্মৃদ্ধ তেমনি এখানে রয়েছে পর্যটন সম্ভাবনায় অনেক স্থান। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য কাদিগড় জাতীয় উদ্যান, তেপান্তর সুটিং স্পট, ড্রীম হলিডে রিসোর্ট, গ্রীণ অরণ্য পার্ক, কুমির খামার ও মোতালেবের সৌদিয়া খেজুর বাগান। যার ফলে এ থানা এলাকায় প্রতিদিন বহিরাগত অসংখ্য মানুষ প্রবেশ করে। তাদের নিরাপত্তাসহ উপজেলাবাসীর নৈমিত্তিক আইনি জটিলতার সমাস্যা সমাধানে ভালুকা মডেল থানায় কর্মরত রয়েছে মাত্র ৬০ জন পুলিশ সদস্য। এই স্বল্প সংখ্যক জনবল দিয়েই অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন জনবাসির প্রত্যাসিত সেবা প্রদান করছেন।

 

ভালুকা মডেল থানা এলাকায় অবস্থিত অসংখ্য গার্মেন্টস টেক্সটাইল ও শিল্পকারখানায় দেশের বিভিন্ন জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। যারা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ভাড়া বাসায় থাকেন।

এই বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবি বহিরাগত মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ অপরাধ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আর তা হলো নারী ধর্ষন। গত জুন মাসে এক নারী পোশাকশ্রমিককে ধর্ষণের চেষ্টা করে চলন্ত বাসের চালক ও চালকের সহকারীরা। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে চালক ও দুই সহকারী প্রথমে তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা দেখা মাত্র ৯৯৯ এ কল দেন এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। খরব পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছান ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন। এবং অভিযুক্ত বাসের চালক ও দুই সহকারিকে মাত্র দুই ঘন্টারমধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

ভালুকা মডেল থানার মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। যারা ভালুকার স্থায়ী বসবাসকারি। এছাড়াও একটি বড় অংশ বহিরাগত যারা ভালুকার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজ করেন।ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন নদীর কোলঘেষে অবস্থিত ভালুকা মডেল থানা ভবন। পুরোনো আদলে গড়া এ থানা ভবন ও ভবনের চারপাশ খুবই পরিপাটি। থানার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই দুই পাশে দেখা যাবে চোখ ধাধানো ফুলের বাগান। পাশেই ছোট পরিসরে চাষ হচ্ছে, লাল শাক ও পালং শাক। ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন বলেন, থানার সৌন্দর্য বর্ধনে তার তত্বাবধানেই এ গুলো করা হয়েছে। কারণ থানায় যারা আসেন তারা মুলত সমস্যায় পড়ে অধিক দুশ্চিন্তা অবস্থায় আসেন। আর এই দুশ্চিন্তা মাথায় রেখে যেকোন কাজ সুষ্ঠভাবে করা অসম্ভব। কিন্তু তারা যখন ভালুকা মডেল থানায় প্রবেশ করে এই ফুলবাগান দেখে তখন সেই দুশ্চিন্তা অনেকটুকুই লাঘব হয়। এবং শান্ত মনে অভিযোগ দাখিলের সময় সঠিক তথ্য দিয়ে দ্রুতগতির সেবা ভোগ করে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।