Cumilla Sadar South

কুমিল্লা – ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশেলে সমৃদ্ধ এক নগরী। যে নামটি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে আদি বাংলার ফেলে আসা সভ্যতা ও সংস্কৃতির আঁচড়। কুমিল্লা জুড়ে বিস্তৃত প্রাচীন বাংলার বহুল সমাদৃত সমতট জনপদটি উন্নত সভ্যতার বিচারে ছিল তৎকালীন বঙ্গদেশের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। তবে বর্তমান কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানা অঞ্চলটি ছিল সমতটের সবচেয়ে উর্বর ও সমৃদ্ধ জনপদ যেটি ২০০৫ সালে একটি পৃথক উপজেলা ও থানা অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

 

অবস্থানঃ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত এই জনপদটিকে ঘিরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলা সমূহ। এ জেলার পূর্ব-মধ্যাংশে সদর দক্ষিণ মডেল থানা অঞ্চলের অবস্থান। ঢাকা থেকে এই কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার। ১৩৬.৬১ বর্গ-কিমি আয়তনের এ জনপদে বসবাস করেন ৪ লক্ষ ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ। বর্তমানে এই থানা অঞ্চলটি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়ন সমূহ হল বারপাড়া, বিজয়পুর, পশ্চিম জোড়কানন, পূর্ব জোড়কানন, চৌয়ারা, গলিয়ারা(উত্তর) এবং গলিয়ারা(দক্ষিণ)।

দিনের আলো ফুটতেই গ্রামীন আবহের পাশাপাশি এখানে ফুটে উঠতে শুরু করে নগরীর চাঞ্চল্যতা। প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনে ঘেরা এই অঞ্চলটিতে শুরু হয় কর্মজীবী মানুষের আনাগোনা। কোথাও গ্রাম বাংলার নিবিড় জনজীবন আবার কোথাও দেখা মেলে ইট পাথরের নগরীর ব্যাস্ততার কোলাহল।

মুক্তিযুদ্ধঃ

৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ , সবখানেই রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের অবদান। এই এলাকার কৃতি সন্তান ভাষাসৈনিক আলি তাহের মজুমদার ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায়ের দাবিতে সোচ্চার অবস্থান গ্রহন করেন। এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষের অবস্থানও ছিল বেশ প্রশংসনীয়। ৭১এ এখানকার বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত দিশাবন্দ, ফুরতলি এবং হারাতলির যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা পূর্ববতী সময় থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে এই অঞ্চলটির বেশ সুনাম রয়েছে। বর্তমানে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষার হার। বর্তমানে এ এলাকার শিক্ষার হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। এখানেই রয়েছে দেশের স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে গভর্নমেন্ট লাবরেটরি স্কুল, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সটিউট, ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ও বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ নাম করা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের যেকোনো আইনি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দিকনির্দেশনা প্রদানে সর্বদা সোচ্চার অবস্থান পালন করছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশ।

যোগাযোগঃ

অত্র এলাকার সার্বিক আইন শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় সারাদেশের ন্যায় থানাঞ্চলটির যোগাযোগ ব্যাবস্থায়ও এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য প্রধান রুট হিসেবে ব্যাবহৃত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি বয়ে গেছে কুমিল্লা দক্ষিনের বুক চিরে। দুরপাল্লায় যাতায়াতের জন্য পরিচিত সদরের পাদুয়ার বাজার, বিশ্বরোড এলাকা সর্বদাই মুখর থাকে গন্তব্যের উদ্দেশ্য বয়ে চলা নানান শ্রেনি পেশার মানুষে। এছাড়াও এই এলাকা দিয়েই বয়ে গেছে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক।

অর্থনীতিঃ

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা অঞ্চলটির আইনি নিরাপত্তা ও তার ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এই এলাকার মানুষ অর্থনৈতিক দিক থেকে বহু আগে থেকেই সচ্ছল জীবনযাপন করছেন। মোট জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই কৃষির সাথে সংযুক্ত থাকায় এ এলাকার অর্থনীতি এখনও কৃষি নির্ভর। তবে এর পাশাপাশি বেশকিছু সংখ্যক মানুষ ব্যাবসা, চাকরি, শিল্প, পরিবহন ও যোগাযোগের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। এছাড়াও এই এলাকার জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রবাসে থেকে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যবান রেমিটেন্স যোগ করে আসছে।

স্বাস্থ্য

থানাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে এখানে রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ২টি হাসপাতাল। যেখানে কর্তব্যরত ডাক্তারগন এ এলাকার মানুষের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে আসছেন।

কৃতি সন্তানঃ

কুমিল্লা সদর দক্ষিনেই জন্মগ্রহন করেছেন সাবেক ক্রিকেট সংগঠক ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী কুমিল্লা ১০ আসনের সাংসদ আ হ ম মোস্তফা কামাল। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য আত্মত্যাগকারী বীরাঙ্গনা ফুলবানু, ভাষা সৈনিক আলি তাহের মজুমদার এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবুল কালাম মজুমদারেরও জন্ম এই থানা অঞ্চলে।

দর্শনীয় স্থানঃ

কুমিল্লা জেলার এই অঞ্চলটি একটা সময় বাংলার ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভৌগলিক বিবেচনায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহের একটি ছিল। সমতট জনপদের সর্বাধিক উর্বর এই ভুমিতে আবাস ছিল বহু রাজা, জমিদার এবং ধর্ম যাজকের। যার নিদর্শন হিসেবে এখানে আজও দেখা মেলে  ময়নামতি অঞ্চলের শালবন বিহার, রুপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, ময়নামতি জাদুঘর, শালবন বিহার অনাথলয় সহ আরও বহু প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনের। এসকল ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করতে প্রতি বছর এখানে ভীর করে হাজারও পর্যটক।

প্রেসক্লাবঃ 

এ থানা এলাকায় রয়েছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ প্রেস ক্লাব। যেখানে স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীরা তাদের নানামুখি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।