Meghna Thana

সুবিশাল মেঘনা নদী, শাখা নদী কাঠালিয়া ও অসংখ্য উর্বর ভূমির সন্নিবেশে গড়ে উঠা একটি চরসাদৃশ্য জনপদ মেঘনা। উর্বর জমি আর নয়নাভিরাম মেঘনা নদীর কোল এ অঞ্চলের রূপবৈচিত্রের এক অনন্য উদাহরণ।

মেঘনার সূচনা খুব প্রাচীন নয়। জনপদটি একসময় দাউদকান্দি থানা অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯০৫ সালে দাউদকান্দি থানা থেকে বিভক্ত হয়ে মেঘনা থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে হোমনা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও দাউদকান্দি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে আলাদা উপজেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। এই অঞ্চলটির একপাশ দিয়ে মেঘনা নদী প্রবাহমান থাকায় স্থানীয়দের প্রস্তাবনায় এর নামকরণ করা হয় মেঘনা।মেঘনার অথৈ পানি আর চরাঞ্চলের মানুষের নদীকেন্দ্রিক সাধারণ জনজীবন মুগ্ধ করবে যে কাউকেই…

 

 

মুক্তিযুদ্ধঃ

১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এ অঞ্চলের রয়েছে জ্বালাময়ী ইতিহাস। স্বাধীনতা ঘোষনার পর ৩১ মার্চ এ এলাকায় স্বাধীনতা যুদ্ধের বীজ বপন হতে শুরু করে। এতে মেঘনা জনপদের সর্বস্তরের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম’ মহাসড়কের একটি সেতু মাইন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্তমান মেঘনা ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়। এভাবে ৪ ডিসেম্বর মুক্তি পায় মেঘনাসহ কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল।

শিক্ষাঃ

মেঘনা থানা অঞ্চলের শিশু-কিশোরদের মধ্যে একসময় শিক্ষার অভাব ছিল। এখন, পাঠদান কার্যক্রমে সচেতন হয়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তা-ই শিশুদের মাঝে ফিরেছে শিক্ষা, দেখতে শুরু করেছে তারা আলোর মুখ, অভিভাবদের মাঝেও দেখা দিয়েছে প্রশান্তি। মেঘনা জনপদটিতে রয়েছে প্রায় ৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২ টি কলেজ ও বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা।

যোগাযোগঃ

আইন শৃঙ্খলার মান সমুন্নত থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ঢাকা থেকে বাস যোগে সহজেই মেঘনা থানা অঞ্চলে যাতায়াত করা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মদনপুর, সোনারগাঁও, গজারিয়া হয়ে ভাটেরচরের নতুন রাস্তাটি মেঘনাবাসীদের যাতায়াতের প্রধান সড়কপথ। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে নির্মিত পাকা রাস্তা এবং পর্যাপ্ত ব্রিজ-কালভারট থাকায় স্থানীয়রা আশানুরূপ যোগাযোগ সুবিধালাভ করছে। নৌপথে মেঘনা ঘাট হতে লঞ্চ যোগে অথবা কুমিল্লা জেলাধীন দাউদকান্দি উপজেলা হতে ট্রলারযোগে মেঘনা উপজেলায় চলাচল সম্ভব হচ্ছে।

থানা পুলিশের সরব ভূমিকায় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে মেঘনাবাসী। এ অঞ্চলের নদী সংলগ্ন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর আবাদী জমিতে ধানের প্রচুর ফলন হয়। বিশেষ করে, বেলে-পলি মাটি সহজলভ্য হওয়ায় বাঙ্গির আবাদ ভালো হয়। উল্লেখ্য, পলি মাটির কারণে একই জমিতে বছরের পর বছর বাঙ্গি চাষ করলেও ফলন একই রকম থাকে। আর এ কারণে মেঘনা চরাঞ্চলের বিশেষ করে গোবিন্দপুর ও চালিভাঙ্গা ইউনিয়নে কৃষকেরা বাঙ্গি চাষে সফল হয়েছেন। কৃষিজ পন্য আমদানী রপ্তানিতে কাঁঠালিয়া ও পায়ারবন্দ নদীর ওপর নির্মিত দুটি ব্রিজ ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

তাছাড়া, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই ২৫০ একর জায়গা জুড়ে দেশের ১২তম বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে কুমিল্লা ইকোনোমিক জোন নির্মিত হচ্ছে যা প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা যায়। এতে, একদিকে মেঘনা থানা অঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন উন্নতি হবে ঠিক তেমনি জনজীবনে আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।

স্বাস্থ্য

এ অঞ্চলে চিকিৎসা খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। রয়েছে মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রায় ৭ টি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৭ টি কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও ১ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

তাদের আইনি সেবা নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর মেঘনা থানা পুলিশ। পুলিশ সদস্যগণ, যেকোনো মামলার রহস্য উদঘাটন সহ গ্রামাঞ্চল ও প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।

কৃতী সন্তানঃ

মেঘনার কৃতী সন্তান হয়ে আছেন দেশের বিশিষ্ট টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেতা আজিজুল হাকিম এবং শিল্পকলায় একুশে পদক প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গায়ক আপেল মাহমুদ সহ আরো অনেকে…

দর্শনীয় স্থানঃ

এখানেই আজোও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মথুরা মোহন সাহা ও পেরিমোহন সাহার জমিদার বাড়ি। অনিন্দ্য কারুকাজে খচিত জমিদার বাড়িগুলো এখনো প্রমাণ দেয় আদিকালের প্রাচুর্যতার প্রতিফলক। ধ্বংসাবশেষ গুলো দেখতে প্রায়শই ঘুরতে আসে দর্শনার্থীরা।

প্রেসক্লাব

এ এলাকার উল্লেখযোগ্য স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে মেঘনা নিউজ, দৈনিক মেঘনার খবর সহ বেশ কয়েকটি নিউজ পোর্টাল এবং সাংবাদিকদের সংগঠন মেঘনা উপজেলা প্রেস ক্লাব রয়েছে।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।