Homna Thana

‘অনেক দূরে উদাস সুরে, কোন সে বাঁশি বাজে রে, কোন সে বাঁশি বাজে’ – কবি সুনির্মল বসুর কবিতার এই লাইন দুটি যেন উঠে এসেছে কুমিল্লার হোমনার শতবর্ষী বাঁশী গ্রামের ঐতিহ্যের আবহে। যেখানে মানুষের ঘুম ভাঙ্গলেই মাতাল করা বাঁশীর সুর কানে বাজে। ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ প্রাচীন এই জনপদটি ১৯০৫ সালে দাউদকান্দি থানা থেকে বিভক্ত হয়ে হোমনা থানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যেটি ১৯৮৪ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়।

ঢাকা থেকে প্রায় ৭৮ কিলোমিটার পূর্বে এবং কুমিল্লা থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ও বৈচিত্র্যময় একটি জনপদ হোমনা। এ থানা অঞ্চলে পূর্বে ১৩টি ইউনিয়ন থাকলেও বর্তমানে মোট ৯টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার রয়েছে। ইউনিয়ন সমূহ হল মাথাভাঙ্গা, ঘাগুটিয়া, দুলালপুর, চান্দেরচর, আছাদপুর, নিখলি, ভাসানিয়া, ঘারমোরা ও জয়পুর। তবে, মেঘনা, তিতাস, কাঁঠালিয়া সহ নানান নদ নদীতে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের আধার হোমনা থানা অঞ্চল।

 

 

মুক্তিযুদ্ধঃ

একাত্তরের রণাঙ্গনে এই অঞ্চলের মানুষদের অবদান ছিল বেশ প্রশংসনীয়। ১৯৭১ সালের জুলাইয়ের শেষদিকে পাকবাহিনী এ অঞ্চলে প্রবেশের চেষ্টা করলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র আক্রমণ চালায়।এই লড়াইয়ে পাকবাহিনীর অনেকেই হতাহত হয়। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় হোমনা।  মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি আজীবন স্মরন রাখতে নির্মিত হয়েছে বড় ঘাগুটিইয়া বধ্যভুমি ; নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ এবং উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স ভবন।

শিক্ষাঃ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই হোমনার শিক্ষার মান ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এই অঞ্চলের শিক্ষার গড় হার প্রায় ৪০ শতাংশ। রয়েছে ৪টি কলেজ, ২২৭টি মাদ্রাসা, ১৬টি মাধ্যমিক ও ১০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২টি কিন্ডার গার্টেন । এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের জন্য স্থাপিত হয়েছে কৃষি প্রশিক্ষন ইন্সিটিউট। রয়েছে মসজিদ ও মন্দির ভিত্তিক গনশিক্ষা কার্যক্রম।

যোগাযোগঃ

বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা সমুন্নত থাকায় সারাদেশের ন্যায় যোগাযোগ ব্যাবস্থায়ও বেশ উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে হোমনাতে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সরাসরি যাতায়াতের জন্য রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যা হোমনা উপজেলার উত্তরাঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে। অঞ্চলটির নদীমাতৃকতার ফলে নৌপথেও রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে হোমনাবাসী।

অর্থনীতিঃ

এই এলাকার মানুষ সাচ্ছন্দে তাদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করে যাচ্ছে। হোমনার বেশিরভাগ মানুষই কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়াও অঞ্চলটি নদী বিধৌত হওয়ায় জেলে সম্প্রদায়ের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায় এখানে। গ্রামীণ জনপদের একটি সুসজ্জিত রুপের পাশাপাশি ব্যবসা, চাকরি, রেমিটেন্স, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে এ থানার মানুষজন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে আসছে। এছাড়াও এখানে কিছু কার্গো এবং জাহাজ নির্মাণের ডকইয়ার্ডও গড়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য

হোমনাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে এখানে রয়েছে ১টি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ৫টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৭টি পল্লী চিকিৎসাকেন্দ্র এবং ১০টি ক্লিনিক। এছাড়াও গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবায় রয়েছে উপজেলা প্রানীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল।

দর্শনীয় স্থানঃ

একটা সময় এই এলাকা চলত জমিদারি প্রথায়। যার সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে রায়ের জমিদার বাড়ি। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি অনেকটাই ধ্বংসাবশেষ হয়ে পরে থাকলেও এর স্থাপত্যশৈলী এখনও মুগ্ধ করে অনেক দর্শনার্থীদের। এছাড়াও হোমনাতে অবস্থিত সোলেমান শাহ্‌র মাজারের স্থাপত্যশৈলী দেখতে দূরদুরান্ত দেখতে আসেন বহু দর্শনার্থী। এসব দর্শনার্থীদের সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর হোমনা সার্কেলের পুলিশ সদস্যগণ।

প্রেসক্লাব

হোমনা থানা এলাকায় রয়েছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হোমনা প্রেস ক্লাব। রয়েছে সাপ্তাহিক গ্রামবাংলার খবর, আলোকিত হোমনা, সাপ্তাহিক হোমনার আলো ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠ অনলাইনসহ বেশ কিছু গণমাধ্যম। এছাড়াও রয়েছে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা, পাবলিক লাইব্রেরি সহ আরও বহু বেসরকারি সংগঠন।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।