Enayetpur Sobuj SongkeT jpg

আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগের কথা। তৎকালিন চৌহালী থানা এলাকাটি যমুনার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে। সেই ভাঙ্গনে এলাকাটি সম্পূর্ণই যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর কয়েক বছর পরই আবার চর জেগে উঠে। ভাঙ্গনে সহায় সম্পত্তি হারানো মানুষ চর জেগে ওঠার সাথে সাথেই সেখানে নির্মাণ শুরু করেন বসতবাড়ি, অফিস আদালত। যা নতুন পরিচয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার মানচিত্রে মোট ১৮টি গ্রামে আত্মপ্রকাশ করে ।  এর মধ্যে অন্যতম গ্রামটির নাম এনায়েতপুর।

এটি একটি গ্রাম হলেও বিশ্ব মানচিত্রে এটি একটি প্রশাসনিক নগরী হিসেবে নন্দিত হয়েছে। এ নামের সাথে স্বরনীয় হয়ে আছে একজন বিখ্যাত সুফী সাধক। যার নাম খাজা ইউনুস আলী তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন খাজা এনায়েতেপুরী নামে। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত ধর্মীয় অবিসংবাদিত নেতা। তার নামানুসারেই এলাকাটি এনায়েতপুর নামে পরিচিতি পায় এবং কালক্রমে তা একটি থানা নগরে আত্মপ্রকাশ করে।

 

 

২০০০ সালে শাহজাদপুর উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন, চৌহালী উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন এবং বেলকুচি উপজেলার একটি ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠন করা হয় এনায়েতপুর থানা এলাকার মানচিত্র। অর্থাৎ এনায়েতপুর থানা অঞ্চলটি বর্তমানে তিনটি উপজেলার অংশ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে একটি ইউনিয়ন হলো শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন।  এই ইউনিয়নের আয়তন ১৬.২২ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তাদের প্রধান আয় মাধ্যম কৃষিকেই বলা হয়।

অন্যদিকে শাহজাদপুর উপজেলার আরেকটি ইউনিয়নের নাম খুকনি। যা এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভূক্ত একটি বিশেষ ইউনিয়ন।

খুকনি ইউনিয়নের আয়তন ১৪.৪১ বর্গ কিলোমিটার। ছোট্ট এ ইউনিয়নের জনসংখ্যা ৬০ হাজারেরও অধিক। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রায় প্রত্যেকেই তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত।

বলা হয় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর  উপজেলাধীন বিশালজনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকা খুকনী ইউনিয়ন । ১৯৭৫ সালে এই খুকনী  ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয় । শতকরা ৯৫% মুসলমান, এবং ৫%  অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে এখানে । শতকরা ৮০% ভাগ মানুষই তাঁত শিল্পের  উপর নির্ভরশীল। এখানে ধান, পাট, আলু, সরিষাসহ বিভিন্ন ধরনেরসবজির আবাদ হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলার আরেকটি তাঁত সম্মৃদ্ধ উপজেলা শহর বেলকুচি। এই বেলকুচি উপজেলার অন্যতম একটি ইউনিয়ন হলো দৌলতপুর। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহি নদী যমুনা বক্ষে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড তথা ৬,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড এলাকাটি এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভূক্ত। কালের পরিক্রমায় তিল তিল করে গড়ে উঠা তাঁত সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসাবে এ ওয়ার্ড তিনটি আজ দেশ ব্যাপি সু-খ্যাতি অর্জন করেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার আরেকটি উপজেলা চৌহালি। চৌহালির একটি বিশেষ ইউনিয়নের নাম স্থল। যা এনায়েতপুর থানার অন্তর্ভুক্ত একটি দ্বীপ সাদৃশ্য জনপদ। স্থল ইউনিয়নটি যমুনা নদীর তীরে অবস্তিত। স্থলের আয়তন : ৪১.৪৭ বর্গ কি: মি আর জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার জন। এখানে মোট ৩৩টি গ্রাম আছে। এটি সম্পূর্ণই একটি কৃষি ভিত্তিক অঞ্চল।

 

এনায়েতপুর থানা সীমানার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন হলো সদিয়া চাঁদপুর। যা চৌহালী উপজেলার অন্তর্গত। এ ইউনিয়নের আয়তন ২৮.৩৩ বর্গকিমি। ২০১১ সালের আদমশুমারীর হিসাব অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২৬,৩৫৮ জন। তবে বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারে পৌছেছে। মোট ৬টি মৌজার সমন্বয়ে গঠিত সোদিয়া চাদপুর ইউনিয়নের গ্রাম সংখ্যা ১৮টি। এর একটি গ্রাম হলো এনায়েতপুর হলো এনায়েতপুর। এ গ্রামেই অবস্থিত মওলানা খাজা শাহসুফী হজরত ইউনুস আলী এনাযেতপুরী (র) এর মাজার শরীফ। এই মাজার সংলগ্ন রয়েছে সম্পুর্ন শীতাতাপ নিয়ন্তিত আন্তজাতিক মানের একটি বৃহত্তম হাসপাতাল এবং একটি মেডিক্যাল কলেজ। মহান শাহ্ সূফী হযরত খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহঃ) এর স্মরণে খাজা ইউনুস আলী (রহঃ) মেয়েরর জামাই এম আমজাদ হোসেন এর উদ্দেগে ১৯৯৫ সালের ১৬ই নভেম্বর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৪ সালের ১৭ই মে বহির্বিভাগ গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০০৫ সালের ১৭ই মে অন্তঃবিভাগ চালু হয় পরবর্তীতে একই বছরের নভেম্বর মাসে কার্ডিও থোরাসিক বিভাগ চালু করা হয়। এরপর থেকেই দেশের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠানটি এক অনন্যা মর্াদার স্থান দখল করে নেয়। খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের সকল চিকিৎসা যন্ত্রপাতি এবং খ্যাতিমান ডাক্তারগণ। খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালটি এনায়েতপুর হাসপাতাল নামেই অধিক পরিচিত। ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় এর সুনাম আরও বেশি। চিকিৎসা ও শিক্ষার মানসহ এর পরিবেশ ও সেবার গুনগত মান দেশের মানুষের কাছে খুবই প্রশংশনীয়। খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজটি ৫৮ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত। এতে রয়েছে ৫৮৬ টি বেড ও ১৮টি অত্যাধুনিক অস্ত্রপ্রচার কক্ষ। এটি দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল। সুতরাং শিক্ষা ও সঠিক চিকিৎসার জন্য  খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল যেন এ বঙ্গের মানুষের প্রথম পছন্দ।

হাসপাতালের পাশ্বেই অবস্থিত রয়েছে একটি বাধ যা যা অত্যন্ত আকর্ষনীয় ,মনোমুগ্ধকর। এটি স্থানীয়দের কাছে দশর্নীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত।

তাঁতশিল্প নির্ভর এনায়েতপুরের বর্তমান শিক্ষার হার প্রায় ৬০ শতাংশ। এ থানা নগরে রয়েছে মোট ৮৫টি ছোট-বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৯২ ভাগ মুসলীম ধর্মালম্ভী এ জনপদে রয়েছে ৫৪টি মসজিদ ও ১১টি মন্দির। এ থানা আয়তনের দেড় লক্ষাধিক মানুষের সেবার জন্য রয়েছে বেশ কিছু সরকারি সেবাকেন্দ্র।

তিনটি উপজেলার সাথে সম্পৃক্ত এনায়েতপুর থানা এলাকার মানুষের দীর্ঘ ছিলো যে এনায়েতপুর থানা ও চৌহালী উপজেলা একত্রিত করে ‘এনায়েতপুর উপজেলা’ নামকরণ করা হোক। তাতে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

চৌহালী-এনায়েতপুরের জনস্বার্থে যমুনার পশ্চিমপাড়ে খামার গ্রাম, এনায়েতপুর অথবা বেতিল গ্রামে জায়গা অধিগ্রহণ করে উপজেলা পরিষদের দালান কোঠা নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ একান্তই জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন এনায়েতপুরবাসি।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।