THE Next Generation Thumble
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক লাইকির মতো ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির অনলাইন মাধ্যমগুলোতে যারা যুক্ত আছেন এবং হচ্ছে তারা অধিকাংশ কিশোর- কিশোরী ও তরুণ। এই মাধ্যমগুলোতে ইতিবাচক দিক থাকলেও এক শ্রেণির মানুষ এখন ব্যবহার করছে নেতিবাচক কাজে। শিশুরা আসক্ত হচ্ছে আত্মঘাতি গেইমসে, প্রযুক্তির বিষাক্ত ছোবলের শিকার হচ্ছে তারা।
অপরাধীরা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে অপরাধ ও অপসংস্কৃতির হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছে প্রযুক্তিকে। খুন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক এবং অশ্লীল ভিডিও তৈরি ও প্রকাশের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি। আর প্রযুক্তির অপ-ব্যবহারের ফলে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে শিশু কিশোর ও তরুণরা। এতে হুমকির মুখে পরছে আগামী প্রজন্ম।

প্রযুক্তির এই হুমকির মুখে থাকতে পারে আপনার পরিবারের সদস্যরাও, কি এই প্রযুক্তির বিষাদ ? আরও জানতে সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখুন।

প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিশুদের শারীরিক ও মানসিক দিক :
একটা সময় বিকেল গড়িয়ে এলে শিশুদের দেখা যেত খেলার মাঠে, শহরে মাঠ সংকটসহ নানা জটিলতার কারণে এখন খেলার মাঠ ছেড়ে প্রযুক্তির দিকেই ঝোকঁছে শিশুরা। খেলা বলতে তাদের কাছে মোবাইলে ও ল্যাপটপে ভিডিও গেইম। পারিবারিক অসেচতনতার কারণে নিজের অজান্তে মরণব্যধি গেইমসের দিকে ঝোঁকছে শিশুরা, প্রবেশ করছে নিষিদ্ধ ওয়েব সাইটে। কেউ কেউ আবার সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় শিশুদের দিয়ে তৈরি করছে অসামাজিক ভিডিও কন্টেন্ট, করাচ্ছে অপসংস্কৃতির চর্চা। প্রযুক্তির এমন অপব্যবহারে শিশুরা যেমন মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি শারীরিক ক্ষতির শিকারও হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে চোখের সমস্যাসহ নানান রোগে ভোগে শিশুরা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মোবাইলের স্ক্রিনের সাথে লেগে থাকতে থাকতে শিশুরা কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায় এতে করে তাদের সামাজিক দক্ষতা কমতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিশুদের মানসিক হতাশা তৈরি হয়, এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি হয়।
২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি  ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন বিশ্বে ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি বা প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু প্রথমবারের মতো অনলাইন জগতে প্রবেশ করে। জাতিসংঘের এই শিশুবিষয়ক সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় এই প্রবেশ তাদের সামনে উপকার ও সুযোগের বিশাল দ্বার উন্মোচন করে। তবে একই সঙ্গে তাদের ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখেও ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর আধেয় (কনটেন্ট), যৌন হয়রানি ও শোষণ, সাইবার উৎপীড়ন ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার।
প্রযুক্তির অপব্যবহারে অপসংস্কৃতি, খুন, ধর্ষণ ও অপহরণ :
প্রয়োজন নেই কোনো দক্ষতা বা গুণগত মানের। গান বা কন্ঠের সাথে ঠোট মিলিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে জনপ্রিয়তার আসায় টিকটক লাইকিতে যুক্ত হয় তরুণীরা। আর তাদের টার্গেট করে উৎপেতে থাকে একদল অপরাধী চক্র। তারকা বানানোর লোভ দেখিয়ে দেওয়া হয় অনৈতিক প্রস্তাব, পরে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পরিবার থেকে চাওয়া হয় টাকা, করা হয় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ।
উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েরা তারকাখ্যাতি ও বিলাসী জীবন যাপনের আসায় নাম লেখায় টিকটক, লাইকি, ইউটিউব ও ফেসবুকের সংঘবদ্ধ গ্রুপে। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে ভিডিও কন্টেন্ট বানিয়ে অপসংস্কৃতির চর্চা করছে তারা, সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। আর এসব ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে গ্যাং কালচারে জড়িয়ে যায় কিশোর-কিশোরীরা। পরিচয় ঘটে মাদকের স্বর্গ রাজ্যে, চলে যায় অনৈতিক পথে।
পার্ক ও রাস্তার ফুটপাতও থাকে তাদের দখলে। ভিডিও তৈরিকে কেন্দ্র করে হয় মারামারি। নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে গ্রুপে গ্রুপে বাধে সংঘর্ষ, এতে ঘটে খুনের মতো ঘটনা। প্রভাব বিস্তারের নেশায় ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যায় উঠতি বয়সী কিশোররা। তারকা বানানো লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ, মিউজিক ভিডিও বানানো কথা বলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাসহ পাচারের মতো ঘটনা ঘটেছে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের থেকে এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতার বিরোধে জড়াচ্ছে বিভিন্ন কিশোর গ্রুপের সদস্যরা।
কখনো বা প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে লুফে নিচ্ছে কিশোরী ও তরুণীদের সবর্স্ব, ছবি বিকৃত করে টাকা দাবি থেকে শুরু করে ব্লাকমেইল করে ধর্ষণ মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেফতারও হয় এমন অপরাধী চক্রের সদস্যরা, অনলাইন থেকে অফলাইনে তাদের আধিপত্য বিস্তার ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এমন অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধে জড়ানো কিশোর- কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের সংশোধনের জন্য পরিবার, সমাজ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা দেখি কিশোররা ফ্যান ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য ইউটিউব টিকটক লাইকি ও ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে অসামাজিক ভিডিও তৈরি করে, অপ্রাসঙ্গিক কার্যক্রম করে। আমি তরুণদের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন সচেতন হয়। ভালো কাজ করেও ফ্যান ফলোয়ার বাড়ানো যায় । তারা যেন ইন্টারনেটের সৎ ব্যবহার করে, যেন অপব্যবহার না করে।
error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।