Gouripur Thana Sobuj Songket Thumbnail jpg

ঢাকা থেকে মাত্র ১৩০ কি.মি. উত্তরে দেশের সর্বশেষ গঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের ৩৫টি উপজেলার মধ্যে নৈসর্গিক পরিবেশের বিশেষ একটি জনপদের নাম গৌরীপুর। গৌরীপুর উপজেলাটি ময়মনসিংহ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে অন্যতম প্রশাসনিক অঞ্চল। এর আয়তন ২৭৪.০৭ বর্গকিমি। জেলা শহর থেকে মাত্র ২০ কি.মি পূর্বে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। ত্রিকোণ বিশিষ্ট এ উপজেলা মানচিত্রটি, ১টি পৌরসভা, ১০টি ইউনিয়ন ও ২৯০টি ছোট-বড় গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। গৌরীপুর উপজেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ্য মানুষ। যাদের প্রিয় এবং প্রাণের জায়গা এই গৌরীপুর। এটাই তাদের শিকড়। এটাই তাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটা মাটি।

এক সময় গৌরীপুর আরও নিবিড় ছিলো। দিনে দিনে সময় বদলাচ্ছে,  বদলে যাবার এ ছোঁয়া লেগেছে সর্বক্ষেত্রে। বদলে যাচ্ছে গ্রাম! সনাতন গ্রাম ধারণার বিপরীতে দাঁড়াচ্ছে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্বলিত উন্নত গ্রাম। আজ গ্রাম গতিশীল সত্তার স্মারক।

বর্তমানে প্রকৃতিশোভিত স্নিগ্ধগ্রাম খুঁজে পাওয়া সহজ না হলেও গৌরীপুরের বেলায় এর নিবিড়তা উপভোগ করা খুবই সহজ। যদিও এখন গ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে, তবুও বলতে হবে গ্রামের সতেজ বাতাস চিরকালই বইবে গৌরীপুরের মাটিতে।

 

 

গৌরীপুর!

নামটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে প্রাচীনত্বের নানা গল্প। প্রাচীন রাজা-জমিদারদের অনেক নিদর্শন এখনো ছরিয়ে আছে গৌরীপুরের বিভিন্ন স্থানে। তারমধ্যে অন্যতম গৌরীপুর জমিদার বাড়ি।

এখানে পাশাপাশি দুইটি জমিদার বাড়ি রয়েছে, স্থানীয়রা একটিকে আনন্দ কিশোর ও অন্যটিকে সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহড়ীর জমিদার বাড়ি হিসেবে বলে থাকে। ধারণা করা হয় আনুমানিক ১৭০০ শতাব্দীর দিকে এই জমিদার বাড়ি দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে জমিদার আনন্দ কিশোরের বাড়িটি গৌরীপুর মহিলা কলেজ ও জমিদার সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহড়ীর বাড়িটি গৌরীপুর সরকারী কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গৌরীপুর জমিদার বাড়ি থেকে মাত্র ৫কি.মি. দক্ষিণে রামগোপাল ইউনিয়নে রয়েছে আরেকটি ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি। প্রায় 200 বছরের প্রাচীন এ বাড়িতে ছিলো বসবাসের জন্য ভবন, রঙ্গম, চিড়িয়াখানা, উপসনালয়, বাগানবাড়ি, সাগরদীঘির কারুকার্যময় সান বাধাঁনো পুকুর ঘাট সহ ভেতর বাড়ির প্রবেশ পথে তিনতলা বিশিষ্ট প্রবেশদ্বার। কিন্তু বর্তমানে দুটি প্রবেশদ্বার, কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেয়াল ও মন্দির ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

জানা যায়, আঠারো শতকের শুরুর দিকের ব্রাহ্মণ জমিদার শ্রীকৃঞ্চ চৌধুরীর সুন্দরী কন্যা “গৌরী”র নাম অনুসারে গৌরীপুর এলাকার নামকরণ হয়েছিলো। যা বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলার অন্যতম উপজেলা শহর। ১৯২৭ সালে গৌরীপুর নামে পৌরসভা গঠনের মাধ্যমে এর শহর ব্যবস্থার কারযক্রম শুরু হয়। তখন গৌরীপুর ইশ্বরগঞ্জ থানার অন্তভুক্ত ছিলো। পরে ১৯৮১ সালে ঈশ্বরগঞ্জ থানা থেকে ৯টি ইউনিয়নকে আলাদা করে গৌরীপুর থানা গঠন করা হয়। অতপর ১৯৮২ সনের ১৫ ডিসেম্বর গৌরীপুর থানাকে উপজেলা হিসেবে উন্নীত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৩০অক্টোবর ১৯৮৮ সালে পাশর্ববর্তী ফুলপুর থানা থেকে আরও ১ টি ইউনিয়ন এ উপজেলায় সংযুক্ত করা হয়। উপজেলার প্রধান শহর এখনো গৌরীপুর নামে প্রতিষ্ঠিত। সরকারি-বেসরকারি বিবিধ জনসেবামুলক প্রতিষ্ঠান, যথা; ব্যাংক-বীমা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস, শিক্ষা অফিসসহ প্রায় সবকিছুই এই গৌরীপুর পৌরসভা কেন্দ্রীক গড়ে উঠেছে।

গৌরিপুর পৌরসভার উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে বাংলাদেশের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম রেল পথ। যা তিন দিক থেকে মিলিত হয়ে ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহকে সংযুক্ত করেছে। তাছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রায় ১০ কি.মি. অতিক্রম করেছে ভৈরব ময়মনসিংহ মহাসড়ক। অর্থাৎ যোগাযোগ ব্যবস্থায় গৌরীপুর উপজেলা যথেষ্টই এগিয়ে আছে।

অন্যদিকে আঞ্চলিক সড়কগুলো গৌরীপুরের প্রতিটি ইউনিয়নকে স্পর্শ করে এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে সংযুক্ত করেছে। ইউনিয়নগুলো হলো মইলাকান্দা, গৌরীপুর, অচিন্তপুর, মাওহা, সহনাটি, বোকাইনগর, রামগোপালপুর, ডৌহাখলা, ভাংনামারী ও সিধলা।

গৌরীপুর উপজেলা একটি কৃষি ভিত্তিক জনপদ। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র উপজেলার প্রধান নদী। তাছাড়া সোয়াইন, সুরিয়া, মগরা নামে তিনটি উপনদী এ উপজেলাকে প্রদক্ষিণ করেছে। যার ফলে ধান, গম, আলু ও সরিষা উৎপাদনের অনন্য ভূমি হিসেবে পরিলক্ষীত হচ্ছে।

পরিসংখ্যান মতে গৌরীপুর উপজেলার ৭১.২১ ভাগ জনশক্তিই কৃষি শ্রমিক। আর ২৮.৭৯ ভাগ জনবল অন্যান্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত। তার মধ্যে ব্যবসা ও চাকুরীতে রয়েছে প্রায় ২০ ভাগ মানুষ। বর্তমানে এ জনপদের প্রায় ৭০ ভাগ মানুষই শিক্ষার আলোতে বেড়ে উঠেছে। আর বাকী ৩০ শতাংশ মানুষ এখনো একাডেমিক শিক্ষাগ্রহণ থেকে দূরে সরে আছে।

গৌরীপুর থানা অঞ্চল একটি প্রাচীণ ও এতিহ্যবাহী জনপদ। এ জনপদের কৃতি সন্তান ছিলেন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ভাষা সৈনিক ও গণপরিষদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া। প্রখ্যাত বাঙালি সেতার বাদক বিলায়েত খাঁ এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি আ.ফ.ম আহসানউদ্দীন চৌধুরীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

তাছাড়া গৌরীপুরে রয়েছে একাধীক পুরাকৃর্তিসহ অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। যেমন অনন্তসাগর দিঘী, বিজয় ‘৭১, জাতীয় পাঁচ নেতার আবক্ষ ভাস্কর্য তথা বঙ্গবন্ধু চত্ত্বর, নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ, বীরঙ্গনা সখিনার মাজার, সিংরাউন্দ চিমু রাণীর দীঘি, শাহ নূরাই পীরের মাজার, গৌরীপুর জংশন, গৌরীপুর লজ, কেল্লা তাজপুর, শহীদ হারুন পার্ক ও গৌরীপুর প্রেসক্লাব।

 

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।