a jpg

সবুজ শ্যামল গাছের ছায়ায় ছোট ছোট ঘরে সাজানো গ্রামীন জনপদ। বাড়ির উঠান বা ঘরের চালে সবজি চাষ ও আঙ্গিনা চত্তরে ভরে ওঠা শাক-শবজির বাগান এ জনপদের অন্যতম কৃষাণী রূপ। পুই, পালং, লাউ, শষা ও লাল শাক উৎপাদনের মাধ্যমে এখানকার বধুরা সংসারে যুক্ত করে বাড়তি আয়। সাথে তাদের প্রাচীন পেশার সেই ঐতিহ্য রয়েছেই। খট খট শব্দে মুখর করে রাখা তাত শিল্প এ পল্লীর ঘরেঘরে। এমনই এক প্রাচীন ঐতিহ্যের নগরী নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলা।

এ পল্লী জনপদে পলাশ নামের প্রথম প্রশাসনিক ছোয়া লাগে ১৯৭৭ সালে পলাশ থানা গঠনের মধ্য দিয়ে। ১৯৮৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হলে পলাশ থানা অঞ্চলটি উপজেলার স্বীকৃতি লাভ করে।

দেশের প্রাণ কেন্দ্র ঢাকা থেকে প্রায় ৫৯ কি. মি. দুরত্বে  এবং জেলা শহর থেকে মাত্র ১০ কি.মি উত্তর পশ্চিম সীমান্তের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলার নাম পলাশ।

মাত্র ৯৪.৪৩ বর্গ কি:মি: আয়তনের এই পলাশ উপজেলাটি আয়তনের দিক থেকে নরসিংদী জেলার দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম উপজেলা। এর পশ্চিম সীমানা দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী

 

উপজেলার সমগ্র ভূ—খন্ডের মধ্যে প্রায় ০৪ বর্গ কি:মি: নদী ও জলাশয় বিস্তৃত থাকায় এর ভূ—প্রকৃতির গঠন খুবই কৃষি সহায়ক। তাই সারাবছর জুড়েই এলাকার কৃষি ক্ষেতগুলো বিভিন্ন সবুজ ফসলে ভরে থাকে। তবে উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নটি কলা চাষের জন্য খুবই বিখ্যাত। তাছাড়া জিনারদী ইউনিয়নটি আনারস ও মৌসুমী ফলের জন্য সারাদেশে প্রসিদ্ধ।

পলাশ উপজেলার আদি ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য—উপাত্ত না পাওয়া গেলেও এতটুক উল্লেখ পাওয়া যায় যে উপজেলার অদুরের পারুলিয়া গ্রামটি এক সময় এ অঞ্চলের রাজধানী ছিল। তবে পলাশ নামকরণ সম্পর্কে কোন তথ্যই পাওয়া যায় না। স্থানীয় মুরব্বীদের ভাষায় পলাশ নামে কোন ধনাট্য ব্যক্তির নাম থেকেই হওতো অঞ্চলের নাম পলাশ নামে পরিচিত হয়েছে।

পলাশ উপজেলার প্রাচীন ইতিহাস :

এই উপজেলায়ই রয়েছে, ডাঙ্গা জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন জমিদার লক্ষ্মণ সাহা। সময়ের শ্রোতে জমিদারের দেশান্তর হওয়ার পর এক সময় জমিদার বাড়ীটি ক্রয়সুত্রে মালিকানা পান উকিল আহমদ আলী ফলে বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি উকিলের বাড়ি হিসেবেই বেশি পরিচিতি পায়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৎকালিন ভারতবর্ষে পলাশ অঞ্চলটি ছিলো একটি দেবোত্তর তথা ওয়াকফাহ এলাকা। ফলে এ অঞ্চলে বসবাসের জন্য জমিদারকে কোন খাজনা দিতে হতো না। তখন অঞ্চলটি শাসন করতেন জমিদার লক্ষণ শাহা। লক্ষণ শাহা মুলত প্রধান জমিদারদের অধিনস্ত সাব—জমিদার ছিলেন। তিনি তার পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে নির্মান করেছিলেন শৈল্পিক কারুকার্যে খচিত আলিশান দ্বিতল বাড়ি। বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষ্যি হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে পলাশ উপজেলার মাটিতে। যদিও পরবর্তীতে ক্রয়সুত্রে বাড়িটির মালিকানা গ্রহণ করেছিলেন উকিল আহমদ আলী। তাই বাড়িটি এখন অনেকের কাছে উকিল বাড়ি নামেও পরিচিত।

অন্যদিকে পলাশ উপজেলার প্রাচীন স্থাপত্যের আরেক নিদর্শন পারুলিয়া দরগা মসজিদ। মসজিদটির মুল ফটকে রক্ষিত শিলালিপি থেকে জানা যায় এটি নির্মিত হয়েছিলো ১৭১৪ সালে। এটি পলাশ উপজেলার অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা।

পলাশ উপজেলার আধুনিকায়ন :

পলাশ উপজেলা কালের বিবর্তনে এখন নতুন রুপে সজ্জিত হয়েছে। এ অঞ্চলের পল্লী গ্রামগুলোতে আগে সাড়ি সাড়ি মাটির ঘর দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আধুনিকতার আদলে ইট বালি ও টিনের ঘরে রুপান্তর হয়েছে। আর উপজেলা শহর প্রান্তর এখন আরও আধুনিক। ছোট এ শহরটি সারাদিন মানুষের কোলাহলে পূর্ণ থাকে। উল্লেখ্য, পলাশ উপজেলাতেও রয়েছে দেশের অন্যতম ঘোড়াশাল সার কারখানা। আরও রয়েছে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র ও  প্রান ডেইরিসহ ১৪টি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নটি তাঁত শিল্পের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক মানদন্ডে পলাশ উপজেলার অবস্থান কোন দিক থেকেই নিম্ন মানের নয়। আয়তনের দিক থেকে উপজেলাটি ক্ষুদ্র হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে এটি একটি ঘনবসতি পূর্ণ জনপদ।

এ অঞ্চলে বাস করে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ। এ জনপদটি ১০৪ টি গ্রামের সম্বনয়ে ৬১টি মৌজায় বিভক্ত মোট ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ইউনিয়ন চারটি হলো ডাঙ্গা, চরসিন্দুর, জিনারদী ও গজারিয়া।

সমগ্র উপজেলার মানুষের জন্য এখানে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে মোট ৫টি ভুমি অফিস ৪টি তথ্য সেবা কেন্দ্র, ২টি পুলিশ ফাড়ি, ১৯টি বানিজ্যিক ব্যাংক ও ৮টি খাদ্যগুদাম। রয়েছে ৩২ ক্লাবসহ অসংখ্যা ধর্মশালয়। এছাড়াও রয়েছে তিনটি মহাবিদ্যালয়সহ ৮টি ভিন্ন মাধ্যমের প্রায় ১০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসা সেবায় রয়েছে সরকারি ভাবে ১টি উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্স, ৪টি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ মোট ৩৬টি ক্লিনিক ও ৬টি হাসপাতাল।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ এর লাল সবুজের রক্তের ইতিহাসে দীর্ঘ নয় মাসের ক্যালেন্ডারে দাগ কেটে ১২ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়েছিলো এই পলাশ অঞ্চল। যা উপজেলার ৪৫৭ জন মুক্তিযোদ্ধার এক গৌরবময় অধ্যায়।

প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার জন বসবাসরত এই উপজেলার মানুষের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন পলাশ থানার সকল ফ্রন্টলাইনারদের অভিবাবক অফিসার ইনচাজ। তিনি বলেন তার সার্বক্ষণিক সেবামূলক এই পেশায় আসার পেছনের কিছু গল্প।

পলাশ উপজেলার পুলিশি কার্যক্রম :

পলাশ উপজেলার মানুষের বর্তমান বিবিধ সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। তার আওতাধীন অঞ্চলের মানুষের আইনি সেবার আওতাধীন সকল প্রকার সুবিধা তৈরি করাই জনাব ইলিয়াস হোসাইনের প্রধান লক্ষ। সেই লক্ষকে সামনে রেখেই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রসংসিত উদ্দে্যাগ মসজিদ ভিত্তিক আলোচনাতেও নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন জনাব ইলিয়াস হোসাইন।

বাল্যবিবাহ রোধ, কিশোর গ্যাং দমন, ও মাদক জুয়ার গ্রাস থেকে যুবসমাজকে মুক্ত রাখতে তিনি প্রতি জুমআবারে স্থানীয় জামে মসজিদে গিয়ে এসকল সচেতনতার কথা বলেন। অন্যদিকে তিনি পুলিশি সেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বিট পুলিশিং নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়েও কিছু কথা বলেন চ্যানেল আই পজিটিভ থিংক এর ক্যামেরায়। তার প্রসংশিত কার্যক্রমগুলোকে সামনে রেখে ইলিয়াস হোসেন বলেন তার পারিবারিক ও কর্মজীবনের বাস্তবধর্মী কিছু কথা।

পলাশ থানার বর্তমান সেবা ও কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে জনাব ইলিয়াস হোসেন বলেন, বর্তমান পুলিশ ও যুগ যুগ ধরে পেছনে ফেলা আসা আদি পুলিশ ব্যবস্থার উপর কিছু কথা। তার মহতী চিন্তা ও কর্ম জীবনের একনিষ্ঠতাই হতে পলাশ থানার পক্ষ থেকে উপজেলা বাসির প্রতি সবুজ সংকেত।

error: কপি না করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।